মিয়ানমারের কারেন রাজ্যে অবস্থিত টেলিকম প্রতারণা কেন্দ্র থেকে ২০টি দেশের ২৫০ জনের বেশি বিদেশিকে মুক্ত করেছে একটি জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী। মুক্তিপ্রাপ্তদের থাইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে বেশির ভাগই আফ্রিকান ও এশীয় নাগরিক। তাদের যাচাই করে দেখা হচ্ছে, তারা মানব পাচারের শিকার হয়েছেন কি না। তাদের মধ্যে দুই বাংলাদেশি থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
গত সপ্তাহে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতোংতার্ন শিনাওয়াত্রা চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং মিয়ানমার সীমান্তজুড়ে গড়ে ওঠা এসব প্রতারণা কেন্দ্র বন্ধ করার প্রতিশ্রুতি দেন। তার সরকার ইতোমধ্যে থাইল্যান্ড থেকে মিয়ানমারে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করেছে এবং ব্যাংকিং ও ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি আরোপ করেছে, যাতে প্রতারকরা থাইল্যান্ডকে কর্মী ও অর্থ পাচারের ট্রানজিট দেশ হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে।
মানব পাচারকারীরা সাধারণত উচ্চ বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে লোকজনকে এসব প্রতারণা কেন্দ্রে নিয়ে আসে বা ভিন্নধর্মী কাজের প্রস্তাব দিয়ে ঠকায়। প্রতারকরা সাধারণত ইংরেজি ও চীনা ভাষায় দক্ষ কর্মী খোঁজে, যারা সাইবার প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে প্রেমের নামে প্রতারণা, ক্রিপ্টো জালিয়াতি, অর্থপাচার ও অবৈধ জুয়া অন্তর্ভুক্ত।
মুক্তিপ্রাপ্তদের ডেমোক্র্যাটিক কারেন বেনেভোলেন্ট আর্মি (ডিকেবিএ) হস্তান্তর করেছে। এই বিদ্রোহীরা কারেন রাজ্যের একটি অংশ নিয়ন্ত্রণ করে। এসব সশস্ত্র গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে মানব পাচারকৃত কর্মীদের জোরপূর্বক আটকে রেখে প্রতারণায় বাধ্য করার অভিযোগ রয়েছে।
মিয়ানমার সরকার ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর থেকে কারেন রাজ্যের বড় অংশের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি।
মঙ্গলবার থাইল্যান্ডের ডিপার্টমেন্ট অব স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন (ডিএসআই) কারেন ন্যাশনাল আর্মির (কেএনএ) তিনজন কমান্ডারের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা চেয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন কারেন সেনাপতি সও চিট থু, যিনি ২০১৭ সালে একটি চীনা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে ‘শ্বে কোক্কো’ নামে একটি শহর নির্মাণ করেন। ধারণা করা হয়, এই শহরের মূল অর্থায়ন এসেছে প্রতারণার মাধ্যমে।
স্থানীয়দের মতে, সেখানে এখনও প্রতারণা ব্যবসা চলছে, যদিও শহরটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইয়াতাই বলছে, এখন আর জালিয়াতি হয় না। তবে থাইল্যান্ড ও চীনের চাপে সও চিট থু ও ডিকেবিএ ঘোষণা দিয়েছে, তারা প্রতারণা ব্যবসা বন্ধ করছে।
ডিকেবিএর এক কমান্ডার মঙ্গলবার থাইল্যান্ডের এক সংসদ সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করে ২৬০ জন কর্মীর হস্তান্তরের ব্যবস্থা করেন। তাদের মধ্যে ২২১ জন পুরুষ ও ৩৯ জন নারী রয়েছেন। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে ইথিওপিয়া, কেনিয়া, ফিলিপাইন, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, চীন, ইন্দোনেশিয়া, তাইওয়ান, নেপাল, উগান্ডা, লাওস, বুরুন্ডি, ব্রাজিল, বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া, তানজানিয়া, শ্রীলঙ্কা, ভারত, ঘানা ও কম্বোডিয়ার নাগরিক রয়েছেন।