X
শনিবার, ১৭ মে ২০২৫
২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মিয়ানমারের সেনাশাসকের বৈঠক কী বার্তা দিচ্ছে?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৬ মে ২০২৫, ২০:৪৪আপডেট : ১৬ মে ২০২৫, ২২:৩৯

রাশিয়ার মস্কোতে সম্প্রতি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ এক কূটনৈতিক সাফল্য অর্জন করেছেন মিয়ানমারের সেনাশাসক মিন অং হ্লাইং। সেনা অভ্যুত্থানের চার বছরেরও বেশি সময় পর চীনা প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এটাই ছিল তার প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ। এই বৈঠক শুধু হ্লাইংয়ের কূটনৈতিক অবস্থানই জোরদার করেনি, বরং তার সামরিক অভিযানে মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত। মিয়ানমার বিষয়ক সংবাদমাধ্যম ইরাবতীতে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে এমন অবস্থার কথা তুলে ধরা হয়েছে।

৯ মে নাৎসি জার্মানির বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিজয়ের ৮০তম বার্ষিকী উপলক্ষে মস্কোয় এক সামরিক কুচকাওয়াজে অংশ নিতে গিয়ে মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক করেন শি জিনপিং। আলোচনায় চীন স্পষ্ট করে জানায়, তারা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের পাশে থাকবে এবং সামরিক জান্তার ঘোষিত নির্বাচনের পরিকল্পনাকেও সমর্থন জানায়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক থেট থার মং বলছেন, কূটনৈতিকভাবে একঘরে হয়ে পড়া মিন অং হ্লাইংয়ের জন্য শি জিনপিংয়ের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎ এক বড় বিজয়। বিশেষ করে, মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর গণহত্যা ও সাধারণ জনগণের ওপর বিমান হামলার বিষয়গুলো চীনা প্রেসিডেন্ট উপেক্ষা করায় জান্তা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা তার।

চীন-রাশিয়া-মিয়ানমার ত্রিমুখী সংহতি

২০২১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো মিয়ানমারকে বয়কট করলেও চীন ও রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা বাড়িয়েছে দেশটির সামরিক সরকার। তবে সীমান্ত বাণিজ্য, বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্প এবং কিছু জাতিগত বিদ্রোহী গোষ্ঠীর সঙ্গে সম্পর্কের কারণে চীনের ভূমিকা হয়ে উঠেছে আরও গুরুত্বপূর্ণ।

এমনকি চীনের প্রতি জান্তার নির্ভরতা এতটাই বেড়েছে যে আন্তর্জাতিক মহলে তাদের ‘বেইজিংয়ের পুতুল’ বলেও অভিহিত করা হচ্ছে। এই নির্ভরতার বহিঃপ্রকাশ মিলেছে জান্তার কিছু সাম্প্রতিক পদক্ষেপে—যেমন, চীনা নববর্ষকে জাতীয় ছুটি হিসেবে ঘোষণা, পাবলিক সিকিউরিটি সার্ভিসেস আইন পাস করে চীনা ব্যবসায়িক প্রকল্পে চীনা নিরাপত্তা বাহিনীর কার্যক্রম বৈধতা দেওয়া এবং চীন-মিয়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর প্রকল্পকে অগ্রাধিকার তালিকায় রাখা।

চীন শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, সামরিকভাবেও জান্তাকে সহায়তা করছে। লাশিও শহরের দখল পুনরুদ্ধার চীনের মধ্যস্থতায় একটি গুলিও ছোড়া ছাড়াই সম্ভব হয়েছে। একইভাবে চীন চাপ দিচ্ছে তাং জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র সংগঠনগুলোকে, যেন তারা সীমান্তবর্তী গুরুত্বপূর্ণ শহর কিয়াউকমে, হিসপাও ও ন্যাংকিও মিয়ানমার সরকারের কাছে ফিরিয়ে দেয়।

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার নিরাপত্তা বিশ্লেষক জেসন টাওয়ার বলেন, চার বছরেরও বেশি সময় পর শি জিনপিংয়ের সঙ্গে মিন অং হ্লাইংয়ের বৈঠক চীনের ক্রমবর্ধমান সমর্থনের ইঙ্গিত দেয়। এটা স্পষ্ট যে ব্যর্থতায় জর্জরিত জান্তা এখন চীনের দিকেই ঝুঁকছে।

তিনি আরও বলেন, অনেক বিশ্লেষক মনে করতেন মিয়ানমারের সঙ্গে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠতা চীনকে ক্ষুব্ধ করেছে। কিন্তু মস্কোয় শি-হ্লাইং বৈঠকের জন্য রাশিয়া মঞ্চ প্রস্তুত করে দিয়ে দেখিয়ে দিলো, দুই দেশ মিয়ানমার নিয়ে সমন্বিত অবস্থানে আছে।

রাশিয়া ও চীন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী। তাদের সহায়তায় প্রতিদিনই সাধারণ মানুষের ওপর বিমান হামলা চালাচ্ছে জান্তা। এই দুই শক্তির কূটনৈতিক ছত্রছায়ায় থেকে মিয়ানমার সরকার এখন নিজেদের একটি ভিন্ন ভূ-রাজনৈতিক বলয়ে স্থাপন করছে।

এমন প্রেক্ষাপটে আশঙ্কা করা হচ্ছে, চীন ও রাশিয়া ঘনিষ্ঠ দেশ ও জোট—যেমন, ব্রিকস এবং সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা (এসসিও)—মিয়ানমার সামরিক সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে পারে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ব্রিকস নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে মিয়ানমারের সেনা নেতৃত্ব এবং তারা আনুষ্ঠানিকভাবে এই জোটে যোগদানের আগ্রহও দেখিয়েছে।

পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি

চীনের প্রতি আনুগত্যের সুফল আগেই পেতে শুরু করেছে হ্লাইং। গত বছরের নভেম্বরে চীনের কুনমিংয়ে মেকং সম্মেলনে আমন্ত্রণ পান তিনি। সেখানে থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া ও লাওসের প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেন এবং আসন্ন নির্বাচন নিয়ে অবস্থান তুলে ধরেন। এর আগে, জান্তা নেতৃত্বকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান বিভিন্ন সম্মেলন থেকে বাদ দিয়েছিল।

চীন সফরের পর হ্লাইং রাশিয়া, বেলারুশ, থাইল্যান্ড ও ব্যাংককে আসিয়ান দূতের সঙ্গে বৈঠক করেন। সর্বশেষ মস্কোয় শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠক ছিল তার দীর্ঘ কূটনৈতিক যাত্রার আরেকটি মাইলফলক।

যুদ্ধাপরাধের আশঙ্কা বাড়ছে

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ জান্তা প্রধানকে আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে। তার ওপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলোকে তুচ্ছজ্ঞান করে তিনি হয়তো আরও বেশি যুদ্ধাপরাধ সংঘটনে উদ্বুদ্ধ হবেন।

জেসন টাওয়ার বলেন, চীনের সহায়তায় জান্তা সাময়িকভাবে কিছু সামরিক পরাজয় থেকে ঘুরে দাঁড়ালেও বাস্তবতা হলো, সরেজমিন তাদের বিপর্যয় থেমে নেই। এটা বোঝা যায়, টিকে থাকার জন্য তারা এখন পুরোপুরি চীনের ওপর নির্ভরশীল।

/এএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
এক হাজার যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে রাজি রাশিয়া-ইউক্রেন
গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলা, নিহত ছাড়ালো ২৫০
তিন বছর পর ইস্তাম্বুলে রাশিয়া-ইউক্রেন সরাসরি আলোচনা
সর্বশেষ খবর
কৃষককে পিটিয়ে হত্যা, অভিযুক্তের বাড়ি পুড়িয়ে দিলো বিক্ষুব্ধরা
কৃষককে পিটিয়ে হত্যা, অভিযুক্তের বাড়ি পুড়িয়ে দিলো বিক্ষুব্ধরা
রাজধানীর হাজারীবাগে পৃথক ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
রাজধানীর হাজারীবাগে পৃথক ঘটনায় শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
চার দশক পর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট পদে লড়বে বাংলাদেশ
চার দশক পর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট পদে লড়বে বাংলাদেশ
এক হাজার যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে রাজি রাশিয়া-ইউক্রেন
এক হাজার যুদ্ধবন্দি বিনিময়ে রাজি রাশিয়া-ইউক্রেন
সর্বাধিক পঠিত
রাজশাহীতে চাহিদার চেয়ে কোরবানির পশু বেশি, বিক্রি হবে ৩০২ হাটে
রাজশাহীতে চাহিদার চেয়ে কোরবানির পশু বেশি, বিক্রি হবে ৩০২ হাটে
বেবিচকের মেম্বার সিকিউরিটিকে বাহিনীতে প্রত্যাবর্তনের আদেশ
বেবিচকের মেম্বার সিকিউরিটিকে বাহিনীতে প্রত্যাবর্তনের আদেশ
গুলিস্তানে জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে এনসিপি’র যুবশক্তির নেতাদের হট্টগোল
গুলিস্তানে জুলাই যোদ্ধাদের সঙ্গে এনসিপি’র যুবশক্তির নেতাদের হট্টগোল
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ উদ্বেগজনক: দ্য ডন
আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ উদ্বেগজনক: দ্য ডন
কক্সবাজার থেকে উড্ডয়নের পর খুলে পড়লো বিমানের চাকা
কক্সবাজার থেকে উড্ডয়নের পর খুলে পড়লো বিমানের চাকা