রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইউক্রেন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে একটি বার্তা পাঠিয়েছেন। শুক্রবার (১৬ মার্চ) ক্রেমলিন এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি সম্ভব বলে তারা ‘সতর্ক আশাবাদী’। ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের মাধ্যমে এই বার্তা পাঠানো হয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তিনি চান মস্কো এবং কিয়েভ দ্রুত একটি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হোক। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, এই সংঘাত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের দিকে মোড় নিতে পারে এবং ইতোমধ্যে উভয় পক্ষের অনেক প্রাণহানি ঘটেছে। শুক্রবার ট্রাম্প তার ব্যক্তিগত সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে একটি পোস্টে রাশিয়াকে আবারও ‘যুদ্ধবিরতি ও চূড়ান্ত চুক্তি’ সম্পন্ন করার আহ্বান জানান। তিনি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘একটি জটিল পরিস্থিতি’ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
বৃহস্পতিবার পুতিন বলেছিলেন, তিনি নীতিগতভাবে ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব সমর্থন করেন। তবে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি সম্ভব নয়। এর ফলে চুক্তি সম্পন্ন করতে দীর্ঘ আলোচনার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে ট্রাম্প পুতিনের এই বক্তব্যকে ‘অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক’ বলে অভিহিত করেছেন।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, পুতিন গত রাতে মস্কোতে ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। এই আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব নিয়ে কথা হয়েছে। পেসকভ বলেন, পুতিন এই বৈঠকে ট্রাম্পকে কিছু ‘সংকেত’ পাঠিয়েছেন। রাশিয়ার পক্ষকে অতিরিক্ত তথ্য দেওয়া হয়েছে এবং পুতিন উইটকফের মাধ্যমে ট্রাম্পকে কিছু তথ্য ও সংকেত পাঠিয়েছেন।
ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়াল্টজ বৃহস্পতিবার বলেছিলেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তি শিগগিরই সম্পন্ন হতে পারে বলে ওয়াশিংটনের ‘সতর্ক আশাবাদ’ রয়েছে। পেসকভ এই মূল্যায়নের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সতর্ক আশাবাদী হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। গতকাল প্রেসিডেন্ট পুতিন একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি ট্রাম্পের অবস্থানের সঙ্গে একমত, তবে কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হবে।
পেসকভ আরও বলেন, উইটকফ ট্রাম্পকে ব্রিফিং দেওয়ার পর রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টদের মধ্যে টেলিফোনিক আলোচনার সময় নির্ধারণ করা হবে। উভয় পক্ষই মনে করে, এই আলোচনা অপরিহার্য।
পুতিন চান ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগদানের আকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করুক, রাশিয়া যেন ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলের পুরো নিয়ন্ত্রণ পায় এবং ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর আকার সীমিত হোক। এছাড়া তিনি পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শিথিল এবং ইউক্রেনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠানেরও দাবি জানিয়েছেন। তবে কিয়েভ বলেছে, যুদ্ধকালীন আইন বলবৎ থাকায় এখন নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের কিছু মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছিল, রাশিয়ার কর্মকর্তারা মার্কিন প্রতিনিধিদলকে বলেছেন, তারা চান না ট্রাম্পের রাশিয়া-ইউক্রেন দূত কিথ কেলগ যুদ্ধ সমাপ্তির লক্ষ্যে উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় জড়িত থাকুন। পেসকভ এই দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, এটা নিশ্চয়ই অযৌক্তিক হবে যদি মনে করা হয় যে রাশিয়ার পক্ষ যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারে। আমাদের এমন কোনও ইচ্ছা নেই। কাকে নিযুক্ত করা হবে, কাকে করা হবে না, তা তাদের সিদ্ধান্ত।
এই আলোচনা এবং যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব ইউক্রেন সংকটের সমাধানে কতটা ভূমিকা রাখবে, তা এখনও অনিশ্চিত। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আশা করছে, এই উদ্যোগ শান্তি প্রতিষ্ঠার দিকে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ হবে।