তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী একরেম ইমামোগলুকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সহায়তার অভিযোগে আটক করা হয়েছে। বুধবার (১৯ মার্চ) তাকে আটক করা হয়। বিরোধী দল বলছে, এটি ‘আমাদের ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান’। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
তুরস্কের ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সহায়তার অভিযোগে আটক করা হয়েছে। ইমামোগলু প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টি (সিএইচপি) বুধবার এ ঘটনাকে ‘আমাদের ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থান’ বলে অভিহিত করেছে।
দুই মেয়াদে ইস্তাম্বুলের মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী ইমামোগলুর বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপটি গত কয়েক মাস ধরে দেশজুড়ে বিরোধী নেতাদের বিরুদ্ধে আইনি অভিযানের চূড়ান্ত পর্যায়। বিরোধী দলগুলোর নির্বাচনি সম্ভাবনা ক্ষুণ্ন করার উদ্দেশ্যে রাজনৈতিকভাবে এই অভিযান চালানো হচ্ছে বলে সমালোচনা করা হচ্ছে।
ইমামোগলুর আটকের প্রতিক্রিয়ায় তুরস্কের মুদ্রা লিরার মান ১২ শতাংশ পর্যন্ত কমে গিয়ে ডলারের বিপরীতে সর্বনিম্ন ৪২ লিরায় পৌঁছেছে। এরদোয়ানের ২২ বছরের শাসনামলে এই উদীয়মান বাজার ও ন্যাটো সদস্য দেশটিতে আইনের শাসন ক্ষয়িষ্ণু হওয়ার আশঙ্কা আরও প্রকট হয়েছে।
৫৪ বছর বয়সী ইমামোগলু কিছু মতামত জরিপে এরদোয়ানকে পেছনে ফেলেছেন। তিনি আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সিএইচপির আনুষ্ঠানিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার কথা ছিল। এখন তার বিরুদ্ধে দুটি পৃথক তদন্ত চলছে, যার মধ্যে অপরাধী সংগঠনের নেতৃত্ব দেওয়া, ঘুষ ও টেন্ডার কারচুপির অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
কর্তৃপক্ষ সাময়িকভাবে বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করায় এবং পুলিশ শহরের কিছু রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় প্রায় ১০০ মানুষ পুলিশ স্টেশনের বাইরে জড়ো হয়েছেন, যেখানে ইমামোগলুকে আটক করা হয়েছে। তারা স্লোগান দিচ্ছেন, ‘একদিন আসবে যখন একেপিকে জবাবদিহি করতে হবে’।
বড় ধরনের বিক্ষোভেরও পরিকল্পনা করা হয়েছে, যা কর্তৃপক্ষের আইনি অভিযান আরও বাড়ানোর ইচ্ছাকে পরীক্ষা করতে পারে। ইতোমধ্যে এই অভিযানের আওতায় বেশ কয়েকজন নির্বাচিত বিরোধী মেয়রকে অপসারণ এবং একজন জাতীয়তাবাদী দলীয় নেতাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
সিএইচপি নেতা ওজগুর ওজেল বিরোধী দলগুলোর ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন, তার দল রবিবার ইমামোগলুকে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত করবে। ওজেল বলেন, ‘তুরস্ক ভবিষ্যৎ প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে একটি অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখানে একটি অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার মুখোমুখি হয়েছি।’
বুধবার সকালে গ্রেফতারের আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও পোস্ট করে ইমামোগলু বলেন, তিনি হাল ছাড়বেন না এবং এই চাপ সহ্য করবেন।
তুরস্কের পরবর্তী নির্বাচন ২০২৮ সালে হওয়ার কথা রয়েছে, তবে এরদোয়ান প্রেসিডেন্ট হিসেবে দুই মেয়াদ পূর্ণ করেছেন। এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। যদি তিনি আবারও প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান, তাহলে তার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তাকে আগাম নির্বাচন ডাকতে হবে অথবা সংবিধান সংশোধন করতে হবে।
গত বছর জাতীয়ভাবে অনুষ্ঠিত পৌর নির্বাচনে এরদোয়ান তার সবচেয়ে বড় নির্বাচনি পরাজয়ের মুখোমুখি হন, যখন ইমামোগলুর সিএইচপি তুরস্কের প্রধান শহরগুলোতে জয়লাভ করে এবং এরদোয়ানের ক্ষমতাসীন একেপি পার্টিকে পরাজিত করে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান টেনিওর সহ-সভাপতি উলফাঙ্গো পিকোলি বলেন, ‘চূড়ান্তভাবে, আজকের ঘটনাগুলো এই ইঙ্গিত দেয় যে যেকোনও মূল্যে এরদোয়ানের ব্যক্তিগত এজেন্ডাই শীর্ষ অগ্রাধিকার পাচ্ছে এবং অন্যান্য সবকিছু গৌণ হয়ে পড়েছে।’
সরকার বিরোধী দলের অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, বিচার বিভাগ স্বাধীন। এদিকে, গত মাসে কারাগারে আটক কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) নেতা নিরস্ত্রীকরণের আহ্বান জানানোর পর দশকব্যাপী বিদ্রোহ শেষ করার চেষ্টা চালাচ্ছে সরকার। এটি আঞ্চলিক শান্তির দিকে একটি বড় পদক্ষেপ হতে পারে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোকে ‘রাজনৈতিকভাবে প্রণোদিত ও ভুয়া’ বলে অভিহিত করেছে এবং বলেছে, তাকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
ইমামোগলুর আটক রাজনৈতিক পদক্ষেপ বলে দাবি করা হলে এরদোয়ানের কার্যালয় তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি।
ইস্তাম্বুলের প্রসিকিউটর অফিস বলেছে, পৌরসভা দ্বারা প্রদত্ত কিছু টেন্ডারের সাথে জড়িত অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সাংবাদিক ও ব্যবসায়ীসহ মোট ১০০ জনকে সন্দেহভাজন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এটি প্রথম তদন্তের অংশ।
প্রসিকিউটর অফিস বলেছে, দ্বিতীয় তদন্তে ইমামোগলু ও ছয়জনকে পিকেকে-কে সহায়তা করার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তুরস্ক ও তার পশ্চিমা মিত্ররা পিকেকে-কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করে।
গত মাসে, কারাগারে আটক নেতা আবদুল্লাহ ওকালানের নিরস্ত্রীকরণের আহ্বানের জবাবে পিকেকে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। এটিকে ৪০ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেওয়া এই বিদ্রোহ অবসানের দিকে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। এর আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক প্রভাব থাকতে পারে।
সন্ত্রাসবিরোধী তদন্তের অংশ হিসেবে আটক করার কারণে সরকার মনোনীত কোনও ব্যক্তি মেয়রের স্থলাভিষিক্ত হতে পারেন।