ন্যাটো সদস্য দেশগুলো বুধবার এক ঐতিহাসিক ঘোষণায় ২০৩৫ সালের মধ্যে সামগ্রিক প্রতিরক্ষা ব্যয় জিডিপির ৫ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
তীব্র সমালোচনার মধ্যেও ট্রাম্প এই সংক্ষিপ্ত ও মূলত তার জন্য প্রস্তুতকৃত সম্মেলনে নিজের প্রত্যাশিত ব্যয় বাড়ানোর অঙ্গীকার পেলেন। এর বিনিময়ে তিনি ন্যাটোর অন্যতম মৌলিক নীতিমালা পারস্পরিক প্রতিরক্ষার নীতির প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
ন্যাটোর ৩২টি সদস্যদেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা ওয়াশিংটন চুক্তির অনুচ্ছেদ ৫-এর ভিত্তিতে পারস্পরিক প্রতিরক্ষার প্রতি আমাদের অটল প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।
অনুচ্ছেদ ৫ নিয়ে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, আমি এর সঙ্গেই আছি। এ জন্যই আমি এখানে। যদি সঙ্গী না হতাম, তাহলে এখানে থাকতাম না।
২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের পর ইউরোপে নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় ট্রাম্পের দাবির পাশাপাশি ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেরাও প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর প্রয়োজনে একমত হয়েছে।
নতুন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, মোট ৫ শতাংশ ব্যয়ের মধ্যে ৩.৫ শতাংশ খরচ হবে মূল প্রতিরক্ষা—যেমন সেনাবাহিনী, অস্ত্র ও সরঞ্জামের পেছনে। বাকি ১.৫ শতাংশ ব্যয় হবে সাইবার সুরক্ষা, জ্বালানিবাহী পাইপলাইন রক্ষা এবং সামরিক যান চলাচলের উপযোগী অবকাঠামো নির্মাণে।
ন্যাটো মহাসচিব মার্ক রুটে বলেন, রাশিয়ার হুমকি এবং বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় এ ধরনের ব্যয় ছাড়া আর কোনও পথ নেই।
তবে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আপনি আমাদের বন্ধু হিসেবে খরচ বাড়াতে বলবেন, আবার শুল্ক বসিয়ে বাণিজ্য যুদ্ধ করবেন, এটা ভয়াবহ বৈপরীত্য।
সবচেয়ে আলোচনায় ছিল স্পেনের অবস্থান। দেশটি বলেছে, তারা জিডিপির ৫ শতাংশ ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করবে না। বরং কম খরচে প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে।
যদিও মহাসচিব রুটে এ বক্তব্যকে প্রত্যাখ্যান করেন। শেষ পর্যন্ত কূটনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমে স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একধরনের সমঝোতায় পৌঁছান তিনি।
ন্যাটো সম্মেলনের মূল আলোচনায় আমন্ত্রণ না পেলেও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মঙ্গলবার রাতের নৈশভোজে অংশ নেন এবং পরে ট্রাম্পের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেন।
ক্রেমলিন মঙ্গলবার জানিয়েছে, ন্যাটো সামরিকীকরণের উন্মাদ পথ অনুসরণ করছে এবং রাশিয়াকে ‘নরকের দানব’ হিসেবে চিত্রিত করছে। যাতে করে প্রতিরক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির যৌক্তিকতা দেখানো যায়।