X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতে ট্রুডো, আলোচনায় শিখদের খালিস্তান আন্দোলনের ‘পুনর্জন্ম’

জাহিদুল ইসলাম জন
১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৯:১০আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ২০:০৮

কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো একবার মজা করে বলেছিলেন, ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভায় যত শিখ মন্ত্রী আছেন তারচেয়ে বেশি রয়েছেন তার মন্ত্রিসভায়। রসিকতার ছলে বলা ট্রুডোর এই কথাটি কানাডায় শিখ সম্প্রদায়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও বেড়ে ওঠারই প্রমাণ দেয়। সেই ট্রুডো যখন সপ্তাহব্যাপী সফরে ভারত এসেছেন তখন আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়ে পুনরায় সামনে চলে এসেছে পাঞ্জাবের শিখ সম্প্রদায়ের স্বাধীন রাষ্ট্র খালিস্তান। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দাবি করছে, শিখদের স্বাধীন খালিস্তান আন্দোলনের ‘পুনর্জন্ম’ হচ্ছে। যদিও ট্রুডো ও তার মন্ত্রিসভার শিখ মন্ত্রীরা বলছেন, ওই আন্দোলনের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। এই দাবির পরও কানাডার প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে কালো মেঘের ছায়া ফেলছে শিখদের স্বাধীনতার আন্দোলন।

ভারতে ট্রুডো, আলোচনায় শিখদের খালিস্তান আন্দোলনের ‘পুনর্জন্ম’

ষোড়শ শতাব্দীতে দাস হয়ে আটলান্টিক উপকূলে বসতি গড়েছিলেন ভারতীয়রা। কালক্রমে উত্তর আামেরিকার দেশ কানাডার সবচেয়ে দ্রুত বেড়ে ওঠা সম্প্রদায় হয়ে উঠেছে ভারতীয় শিখ সম্প্রদায়। দেশটির সবচেয়ে বড় বিদেশি সম্প্রদায় চাইনিজ-কানাডিয়ানদের পরে ১৩ লাখেরও বেশি শিখদের এই সম্প্রদায় এখন কানাডার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও বেশ প্রভাবশালী। ট্রুডোর মন্ত্রিসভাতেও রয়েছেন চার শিখ মন্ত্রী। ২০১৭ সালে ভারতের পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ তোলেন, শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছেন কানাডার মন্ত্রীরা। এর জের ধরেই ট্রুডোর ভারত সফরে ওই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে একটি মন্দির ও জাদুঘর পরিদর্শনের কথা থাকলেও সফরসূচি থেকে বৈঠকের পরিকল্পনা বাদ দিয়েছেন ট্রুডো। কানাডার সংবাদমাধ্যম সিটিভি নিউজ এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

এক সপ্তাহের সফরে শনিবার সন্ধ্যায় ভারতে পৌঁছান ট্রুডো। দুই দেশের ‘অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন দৃঢ়’ করার এই সফরে তার মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার অভিযোগ তোলা ভারতীয় রাজনীতিবিদদের সঙ্গে কোনও বৈঠক না করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

পাঞ্জাবের অন্যতম নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী শিখ সম্প্রদায় দীর্ঘদিন ধরেই স্বাধীন রাষ্ট্র খালিস্তানের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। পাঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল, জম্মু-কাশ্মির ও রাজস্থানের অংশ বিশেষ নিয়ে প্রস্তাবিত এই স্বাধীন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে শিখদের পছন্দ চন্দ্রিগড় শহর। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন চালিয়ে আসছে তারা। ওই আন্দোলন খালিস্তানি আন্দোলন নামে পরিচিত।

২০১৭ সালের এপ্রিলে ভারত সফরে আসেন শিখ বংশোদ্ভূত কানাডিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী হারজিত সজ্জন। এক সপ্তাহব্যাপী ওই সফরে তার সঙ্গে বৈঠকে বসতে অস্বীকৃতি জানান পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংহ। তার অভিযোগ ছিল, হারজিত খালিস্তানি আন্দোলনে সমর্থন দিচ্ছেন। ফেব্রুয়ারিতে তিনি আউটলুক ইন্ডিয়া ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ট্রুডোর মন্ত্রিসভায় খালিস্তানি আন্দোলনে সহানুভূতিশীল মানুষ থাকার প্রমাণ রয়েছে।’

দাভোসে জাস্টিন ট্রুডো ও নরেন্দ্র মোদি

ট্রুডোর মন্ত্রিসভায় চার শিখ সদস্যের মধ্যে রয়েছেন সজ্জন ও অবকাঠামো মন্ত্রী অমরজিৎ সোহি। উভয়েই অমরিন্দরের এই অভিযোগ প্রত্যাখান করে বলেছেন, তারা ওই আন্দোলনে কখনওই অংশ নেননি। এমনকি কানাডার ভারতীয় কমিউনিটিতে এই ইস্যু নিয়েও কোনও আলোচনা নেই। এর উত্তরে অমরিন্দর সিং বলেন, ট্রুডোর আসন্ন সফরে একটি গঠনমূলক বৈঠকের বিষয়ে তিনি আগ্রহী হয়ে আছেন।

সিটিভি নিউজের খবরে বলা হয়েছে, ট্রুডো তার মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিরুদ্ধে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে জড়িয়ে প্রকাশ্য অভিযোগ আনা রাজনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন না। তবে কেন ওই বৈঠক হবে না তার কোনও ব্যাখ্যা কানাডার কর্মকর্তারা দেননি।

ভারতের অন্যতম ইংরেজি সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, অমৃতসরের স্বর্ণ মন্দির ও কাছের জাদুঘর পরিদর্শনের সময় ট্রুডোর সফরসঙ্গী হবেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিং। তবে কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দফতর জানিয়েছে, তার সঙ্গে কোনও বৈঠকের পরিকল্পনা নেই।

এই সফরে ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রেসিডেন্ট রামনাথ কোবিন্দ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠকের কথা রয়েছে। রাষ্ট্রপতি ভবনে ওই বৈঠক অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে।

জানুয়ারিতে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক সম্মেলনের এক পর্যায়ে ট্রুডোর সঙ্গে বৈঠকে শিখ ইস্যু তুলেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। সাম্প্রতিক সময়ে আরও কিছু বৈঠকে এই ইস্যু তোলা হয়েছে। কয়েক সপ্তাহ আগে কানাডা আনুষ্ঠানিকভাবে শিখ ধর্মাবলম্বীদের উপসানালয় গুরুদুয়ারাতে ভারতীয় কর্মকর্তাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য অস্ট্রেলিয়াও একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়। অভিযোগ হিসেবে বলা হয়, এসব স্থানে ভারতের কর্মকর্তারা হস্তক্ষেপ করে থাকেন।

খালসা উদযাপনে ট্রুডো

২০১৭ সালের জুনে শিখস ফর জাস্টিস (এসএফজে) নামের একটি সংগঠন ২০২০ সালে পাঞ্জাবের স্বাধীনতার দাবিতে এক গণভোটের আয়োজনের ডাক দিয়েছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে কানাডা ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এই গণভোটের পক্ষে প্রচারণা চালানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গত বছরের আগস্টে এসএফজে’র আইনি উপদেষ্টা গুরুপাতওয়ান্ত পান্নুন জানান, শিখ সম্প্রদায়কে সচেতন ও গণভোটের প্রতি সমর্থন আদায়ের জন্য বিশ্বের সবগুলো বড় শহরেই সম্মেলন আয়োজন করা হবে। ওই সময় তিনি আরও জানান, জাতিসংঘে পাঞ্জাবের স্বাধীনতার জন্য একটি আবেদনও জানানো হয়েছে।

এসব আয়োজন যখন চলছে তখন টরেন্টোতে খালসা দিবসের নগর কির্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন ট্রুডো। এই ঘটনাটি নিয়ে ভারত নিজেদের বেশ উদ্বেগ প্রকাশ করে। কারণ ঐতিহ্যগতভাবে এ আয়োজনের পেছনে খালিস্তান সমর্থকরা রয়েছেন।

আনুষ্ঠানিকভাবে কানাডার অবস্থান অখণ্ড ভারতের পক্ষে। তাদের দাবি, কোনও ধরনের চরমপন্থার সমর্থক নয় তারা। কানাডার এক কর্মকর্তা বলেন, এই অবস্থান থাকার পরও  কানাডায় বসবাসরত ভারতীয়রা যদি  শিখদের জন্য আলাদা দেশ গঠনের ইচ্ছে পোষণ করে থাকে তাহলে তাদের সেই বিষয়ে কথা বলতে দেওয়ার স্বাধীনতাকেও অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই।

খালিস্তানের প্রস্তাবিত মানচিত্র

সিটিভি নিউজের খবরে বলা হয়েছে, কানাডার সরকার চায় এই সফরে শিখদের স্বাধীনতার থেকে বেশি কিছু আলোচনায় আসুক। গত দশ বছরে কানাডা ও ভারতের ব্যবসায়িক সম্পর্ক দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১৬ সালে উভয় দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৮০০ কোটি ডলার। মুক্ত বাণিজ্যের সুযোগ নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে ২০১০ সাল থেকেই আলোচনা চলছে। এ সপ্তাহে কানাডার সরকারি কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, ট্রুডো এই সফরে মুক্তি বাণিজ্যের চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার সুযোগ কম।

এক সপ্তাহের ভারত সফরে ট্রুডো ভারতের ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও আগ্রার তাজমহল, দিল্লির জামে মসজিদ ও মাহাত্মা গান্ধীর সাবরামতি আশ্রম পরিদর্শন করবেন।

ট্রুডোর সফরসঙ্গী হয়েছেন অবকাঠামো মন্ত্রী সোহি, ক্ষুদ্র ব্যবসা বিষয়কমন্ত্রী বারদিশ চ্যাগের, উদ্ভাবনীমন্ত্রী নবদীপ বাইন, বিজ্ঞানমন্ত্রী ক্রিস্টি ডানকান। প্রতিরক্ষামন্ত্রী হারজিত সজ্জন ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিসটিয়া ফিল্যাণ্ড পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন। এছাড়া এই সফরে ট্রুডোর সঙ্গে এক ডজনের বেশি ভারতীয়-কানাডিয়ান সংসদ সদস্য যোগ দেবেন। রয়েছেন ট্রুডোর স্ত্রী সোফি গ্রেগরি ট্রুডো এবং  তিন সন্তান জেভিয়ার (১০), এলা গ্রেস, (৯) ও হাদরিয়েন (৩)। 

/এএ/
সম্পর্কিত
মেক্সিকোতে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত অন্তত ১৮
পাচার হওয়া বোনকে নিতে এসে কলকাতায় অসহায় দশায় চট্টগ্রামের তরুণ
আম আদমি পার্টির সাথে জোট, দিল্লি কংগ্রেস প্রধানের পদত্যাগ
সর্বশেষ খবর
রাজশাহীতে তীব্র গরমে মরছে মুরগি, আতঙ্কে খামারিরা
রাজশাহীতে তীব্র গরমে মরছে মুরগি, আতঙ্কে খামারিরা
বাকি না দেওয়ায় দোকানিকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ
বাকি না দেওয়ায় দোকানিকে ছুরিকাঘাতে হত্যার অভিযোগ
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চার কর্মকর্তা নিহত
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চার কর্মকর্তা নিহত
ঢাকা কর কমিশনারের কার্যালয়ে চাকরির সুযোগ
ঢাকা কর কমিশনারের কার্যালয়ে চাকরির সুযোগ
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে