X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির নির্বাচনি ব্যয়ে নয়ছয়, তদন্তের দাবি

কলকাতা প্রতিনিধি
০৭ জুন ২০২১, ২১:০০আপডেট : ০৭ জুন ২০২১, ২১:০২

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে মর্মান্তিক হারে এমনিতেই বিপর্যস্ত গেরুয়া শিবির। এর মধ্যেই নির্বাচনের খরচের বহর দেখে চরম অস্বস্তিতে কলকাতার মুরলিধর সেন লেনের কর্মকর্তারা। অভিযোগ, নির্বাচনি তহবিল নয়ছয়ের! আর তা নিয়ে তদন্তের দাবি উঠেছে দলের ভেতরে। এমনটাই সূত্রের খবর।

বিজেপি সূত্রের খবর, শুধু দক্ষিণ কলকাতায় ভবানীপুর, বেহালা পূর্ব আর বেহালা পশ্চিমে বিধানসভায় নাকি খরচ হয়েছে ৪ কোটি রুপি! এই তিন কেন্দ্রের তারকা প্রার্থীদের প্রত্যেককে ত্রিশ লাখ করে রুপি দেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া শীর্ষ নেতাদের রোড শোর পিছনে ব্যয় করা হয়েছিল ১৫ লাখ রুপি। বিধানসভাভিত্তিক কর্মী সম্মেলনে খরচ করা হয়েছিল ১০ লাখ। প্রতি কেন্দ্রে গাড়ির খরচ ৫ লাখ রুপি। তিনটি বিধানসভায় বুথ কর্মীদের চার হাজার করে রুপি দেওয়া হয়েছিল। যার পরিমাণ প্রায় ৫০ লাখ রুপির বেশি। ওই তিনটি বিধানসভার আহ্বায়ক, মন্ডল সভাপতি, জেলা কমিটির সদস্যসহ নেতাদের হোটেল ভাড়া, খাওয়া, গাড়ি ও অনান্য খরচ মেটাতে ব্যয় হয়েছে মাসে ২ লাখ রুপির বেশি।

এছাড়া বেহালার দু’টি বিধানসভা আসনে প্রচারের আসা ভিন রাজ্যের নেতা-কর্মীদের জন্য ৬০ হাজার রুপিতে দুটি বাড়ি ভাড়া নেওয়া হয়। এখানে প্রতিদিন কর্মীদের খাওয়াতে গিয়ে প্রতি মাসে দুই লাখ রুপি খরচ হয়েছে। পথসভা করার জন্য খরচ হয়েছে ২ থেকে ৫ লা।। প্রতিটি ওয়ার্ডের বিজেপির প্রতীক লাগানো পতাকা লাগতে খরচ হয়েছে ৫ লাখ রুপি।

খরচের এমন বহর দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বেহালার বাসিন্দা বঙ্গ বিজেপির উদ্বাস্তু সেলের সহ-আহ্বায়ক সুজিত শিকদার। তিনি বলেন, ‘আমি প্রথমে বেহালা পূর্ব বিধানসভা আহ্বায়ক ছিলাম। আমার সঙ্গে কোনও আলোচনা না করেই একজন অস্বচ্ছ বিজেপি নেতাকে সহ আহ্বায়ক করে দেওয়া হয়। আমি বিষয়টি বুঝতে পেরে, আহ্বায়কের পদ থেকে পদত্যাগ করি। প্রথম থেকেই যেভাবে টাকা খরচ হচ্ছিল তার কোনও হিসাব নেই। ভিনরাজ্য থেকে পর্যবেক্ষকরা এসেছিলেন তাদের রাজকীয় জীবন-যাপন ভালো লাগেনি। প্রার্থী তালিকা দেখে মনেই হয়েছিল জেতার জন্য নয়, অর্থ লুটপাটের জন্য এসব হচ্ছে। আমাদের দু’টো বিধানসভায় সেভাবে কোনও পথসভা হয়নি। তাহলে এত খরচ হলো কী করে? আর বুথে যারা বসেছিলেন তারা এক হাজার রুপি করে পেয়েছেন। তাহলে বাকি তিন হাজার কার পকেটে গেল? অবশ্যই তদন্ত করতে হবে।’

পশ্চিমবঙ্গ  বিজেপির সাবেক সভাপতি তথাগত রায় কটাক্ষ করে বলেন, ‘আমি হতবাক। এখবর যদি সত্যিই হয়। জলকেলিও হলো, টাকা গেলো! সাত মণ তেল পুড়িয়ে রাধা নাচলো না। এখন তদন্ত কে করবে? সর্ষের মধ্যেই যদি ভূত থাকে।’

একুশের বিজেপির প্রার্থী রন্তিদেব সেনগুপ্ত ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘আমি প্রার্থী হয়ে খরচ করার জন্য মাত্র ১৫ লাখ পেলাম। অর্থের অভাবে ঠিকঠাক কাজ করতে পারিনি। আমরা বিধানসভায় অনেক বিজেপি কর্মী নিজেদের পকেটের পয়সা খরচ করছেন। সেখানে চার কোটি খরচ! কে দিলো এই টাকা? আর যদি তারা এই টাকা খরচ করে থাকেন তাহলে আমাদের প্রতি বৈষম্য হলো কেন?  এভাবে যদি পরিবেশ তৈরি হয় তাহলে দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি হবে। এ নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত।’

যাদবপুর বিধানসভার সহ-আহ্বায়ক উত্তম সাহা বলেন, ‘আমরা ভিখারির মতো ভোটে লড়লাম। এজেন্টদের পুরো টাকা দিতে পারিনি। কখনও বিস্তারকের খরচ চালাতে হয়েছে ব্যক্তিগতভাবে। আমায় কাজ চালানো জন্য দশ হাজার রুপি বরাদ্দ থাকলেও আমি তা নেইনি। তাহলে এখন বদনাম শুনতে হবে কেন? দলকে বিষয়টা দেখতে হবে।’

‘ভাগাভাগি হয়েছে’

নদীয়া বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘অর্থের নয়ছয় বিভিন্নভাবে হয়েছে। ধরুন, ছোট মিছিলের বাজেট ছিল ১৫ লাখ। খরচ করা হয়েছে ৩ থেকে ৪ লাখ। দলকে হিসাব দেখিয়েছে ১৩ লাখ, ফেরত দিয়েছে ২ লাখ। বাকি টাকাটা মেরে দিয়েছে জেলার থেকে দায়িত্বপ্রাপ্তরা। আমি জানি নবদ্বীপে একটি সভা হবে, মাঠের মধ্যে পড়ে থাকা গোবর পরিষ্কার করতে ১২ হাজার রুপির বিল দেওয়া হয়েছে। ভোট গণনার আগের দিন দক্ষিণ কলকাতার এক প্রার্থী তার কাউন্টি এজেন্টদের সুরক্ষিত রাখার জন্য একটি পাঁচতারা হোটেল রেখেছিলেন। প্রার্থীরা অনেক জায়গায় টাকা পেলেও খরচ করেনি। কারণ তিনি অসৎ উপায়ে টিকিট পেয়েছেন। যারা দিয়েছেন তাদের সঙ্গে টাকা ভাগাভাগি করতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এসব অভিযোগ কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে বিজেপিতে। শুধু তাই নয়, ভিন রাজ্য থেকে আসা নেতাদের বিরুদ্ধেও টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ রয়েছে। এদের একটা বড় অংশ ভোটের দিনের আগেই কাউকে কিছু না বলে নিজের রাজ্যে ফিরে গিয়েছেন। এবারের ভোটে আমরা এমন অনেককেই দেখেছি। যারা সেভাবে কখনোই দলে সক্রিয় ছিলেন না। তারা হঠাৎ করেই অতি সক্রিয় হয়ে উঠলেন যা কিন্তু যথেষ্ট সন্দেহজনক। পুরো বিষয়টা নিয়ে দিল্লি কেন্দ্রীয় টিম নিরপেক্ষ তদন্ত করুক। প্রয়োজনে আই বি লাগানো হোক। আজ দলের এসব নেতাদের কারণে দলের ২ কোটি মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে।’

 

/এএ/
সম্পর্কিত
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন: সেলিম মাহমুদ
লাদাখ সীমান্তে বিরোধচীনের সঙ্গে আলোচনায় আশাবাদী রাজনাথ সিং
নিজ্জার হত্যায় তিন ভারতীয়কে গ্রেফতারের কড়া প্রতিক্রিয়া জানালো ভারত
সর্বশেষ খবর
শ্যালিকার সঙ্গে ‘বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক’, স্ত্রী-কন্যার হাতে বৃদ্ধ খুন
শ্যালিকার সঙ্গে ‘বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক’, স্ত্রী-কন্যার হাতে বৃদ্ধ খুন
হাওরের বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ
হাওরের বোরো ধান কাটা প্রায় শেষ
ডিজিটাল থেকে স্মার্ট হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ: স্পিকার
ডিজিটাল থেকে স্মার্ট হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ: স্পিকার
মিয়ানমার সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে ২ জন আহত
মিয়ানমার সীমান্তে স্থলমাইন বিস্ফোরণে ২ জন আহত
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
রুশ বোমারু বিমান ভূপাতিতের দাবি ইউক্রেনের
রুশ বোমারু বিমান ভূপাতিতের দাবি ইউক্রেনের
আমার কাছে ৪৫টি বাচ্চা আছে, ডিবিকে বলেন নিয়ে যেতে: আদালতে মিল্টন সমাদ্দার
আমার কাছে ৪৫টি বাচ্চা আছে, ডিবিকে বলেন নিয়ে যেতে: আদালতে মিল্টন সমাদ্দার