X
বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১

কুতিয়াম্মা: ১০৪ বছর বয়সে পড়তে শেখার স্বপ্নপূরণ করা নারী

বিদেশ ডেস্ক
১১ ডিসেম্বর ২০২১, ২০:৪২আপডেট : ১১ ডিসেম্বর ২০২১, ২০:৪২

প্রায় এক শতক ধরে কুতিয়াম্মা’র দৈনন্দিন রুটিন ছিল প্রায় একই। কেরালার থিরুভাঞ্চুর গ্রামের বাড়িতে ভোরে ঘুম থেকে ওঠা, রান্না, ঘর পরিষ্কার এবং গরু ও মুরগীকে খাবার দিয়ে তার দিন শুরু হতো। কিন্তু এখন প্রতিদিন ভোরে ওঠার জন্য নতুন একটি বিষয় যুক্ত হয়েছে। তিনি অধীর অপেক্ষায় থাকেন কখন স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা মালায়লা মনোরমা দিয়ে যাবে পেপার বয়।

টানা দুই ঘণ্টা নিজেকে খবর পড়তে এবং বিশ্বে কী ঘটছে তা সম্পর্কে জানতে মনোনিবেশ করেন তিনি। অথচ মাত্র কয়েক মাস হলো, এই এপ্রিলেই কুতিয়াম্মা শেষ পর্যন্ত তার পড়তে শেখার স্বপ্ন পূরণ করেছেন।

তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে কী ঘটছে তা জানতে আমি সব সময় কৌতূহলী ছিলাম। অনেক সময় দৈনিক পত্রিকা পড়তে না পারার অক্ষমতার জন্য অনুতাপ করেছি। বাড়ির ছোটদের কাছে উচ্চ শব্দে পত্রিকার পড়ার জন্য অনুরোধ করতাম। আমি সব সময় নিজের নাম ও ঠিকানা লিখতে চাইতাম।

টানা কয়েক মাস সান্ধ্যকালীন ক্লাসে অধ্যয়নের পর গত মাসে তিনি কেরালার প্রাথমিক স্বাক্ষরতা পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন। সবচেয়ে বয়স্ক নারী হিসেবে এই পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। পরীক্ষায় স্বাক্ষরতায় তিনি ৮৯ শতাংশ এবং গণিতে ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়েছেন। এই ফলাফল রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীর প্রশংসা কুড়িয়েছে। টুইটারে তিনি লিখেছেন, জ্ঞানের জন্য বয়স কোনও বাধা নয়। আন্তরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে কুতিয়াম্মা ও অন্যান্য নতুন পড়ুয়াদের শুভকামনা জানাচ্ছি।

১০৪ বছরের জীবনে কুতিয়াম্মা পড়ার বিষয়ে কৌতূহলী ছিলেন। প্রায়ই নিজে নিজে বর্ণমালা পড়তে চেষ্টা করতেন। কিন্তু যখন তার জন্ম হয়েছিল নিম্নবর্ণের একটি গ্রামীণ পরিবারে তখন সেখানে কোনও শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল না।

তিনি বলেন, আমি কেরালার পিছিয়ে পড়া এজাভা সম্প্রদায়ের এবং দারিদ্র্যের মধ্যে জন্ম হয়েছে। ওই সময় পরিবারের নারীদের জন্য শিক্ষার কথা ভাবাই যেত না। এমনকি ৯ বছর বয়সে ছেলেরাও পড়াশোনা বাদ দিত। আমার বাবা-মা ছিলেন ভূমিহীন কৃষিমজুর। আমার দায়িত্ব ছিল রান্না করা, কাপড় ধুয়া এবং ঘরে থাকা ১১ ভাই-বোনের দেখাশোনা করা।

প্রতিবেশী রেহানা জনের সঙ্গে কুতিয়াম্মা

১৬ বছর বয়সে ভেষজ ওষুধ বিক্রেতা টিকে কন্তির সঙ্গে তার বিয়ে হলে নতুন জীবন শুরু হয়। তাদের পাঁচ সন্তান রয়েছে। দশকের পর দশক চলে যায় রান্না ও বাড়ির কাজ করে। সব সময় কুতিয়াম্মার মনে হতো, কিছু একটা নাই।

এক বছর আগে প্রতিবেশী রেহানা জন, ৩৪ বছর বয়সী এক স্বাক্ষরতা প্রশিক্ষকের উৎসাহে পড়তে শেখা শুরু করেন কুতিয়াম্মা। নাতি-নাতনির পড়ার বিষয়ে তার কৌতূহল দেখে জন তাকে কিছু বই দেন। এর আগে জনের সবচেয়ে বয়স্ক শিক্ষার্থীর বয়স ছিল ৮৫ বছর।

কয়েকবার উৎসাহব্যঞ্জক আলোচনার পর তারা প্রতিদিন সন্ধ্যায় বই নিয়ে বসতে শুরু করেন। জন বলেন, দৃষ্টি ও শ্রবনে সামান্য সমস্যা ছাড়া কুতিয়াম্মা আদর্শ ছিলেন এবং অনেক সময় দুষ্টামিও করতেন। সব সময় আমি পৌঁছার আগেই তার বই, নোট ও কলম প্রস্তুত থাকত। এছাড়া রান্না করা মজার খাবার আমার জন্য রাখতেন তিনি।

কুতিয়াম্মার লক্ষ্য এখন চতুর্থ শ্রেণির পরীক্ষায় পাস করা। যে পরীক্ষা শিক্ষার্থীরা সাধারণত ৯ বছর বয়সে পাস করে। এবারের বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে মালায়লাম, ইংরেজি, পরিবেশ ও গণিত।

তার কথায়, আমি মনে করি না ইংরেজি ভিন্নগ্রহের কিছু এবং শেখা খুব কঠিন। আমি সব বিষয়ে ১০০ শতাংশ নম্বর পাওয়ার চেষ্টা করব। সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

 

/এএ/
সম্পর্কিত
আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় চীন ও ইন্দোনেশিয়া
‘দিদির শপথ’ নামে তৃণমূল কংগ্রেসের ইশতেহার প্রকাশ
৪০০ আসনে জিততে চায় মোদির এনডিএ জোট, কী বলছে জরিপ?
সর্বশেষ খবর
আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় চীন ও ইন্দোনেশিয়া
আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় চীন ও ইন্দোনেশিয়া
প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী
রিয়ালের মধুর প্রতিশোধে গর্বিত আনচেলত্তি 
রিয়ালের মধুর প্রতিশোধে গর্বিত আনচেলত্তি 
টাঙ্গাইল শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ককটেল বিস্ফোরণ, শহরজুড়ে আতঙ্ক
টাঙ্গাইল শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ককটেল বিস্ফোরণ, শহরজুড়ে আতঙ্ক
সর্বাধিক পঠিত
এএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
রেস্তোরাঁয় ‘মদ না পেয়ে’ হামলার অভিযোগএএসপি বললেন ‌‘মদ নয়, রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলাম’
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
মেট্রোরেল চলাচলে আসতে পারে নতুন সূচি
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
এবার নায়িকার দেশে ‘রাজকুমার’ 
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
‘আমি এএসপির বউ, মদ না দিলে রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেবো’ বলে হামলা, আহত ৫
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের
রাজধানীকে ঝুঁকিমুক্ত করতে নতুন উদ্যোগ রাজউকের