X
বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫
৩১ বৈশাখ ১৪৩২
চলছে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট

নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে বিশ্বের ৪৫০ শিক্ষাবিদের সমর্থন

বিদেশ ডেস্ক
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৯:০৬আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, ১৯:১২

‘দেশদ্রোহি নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনে বিশ্বের ৪৫০ শিক্ষাবিদের সমর্থন তা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে’র অভিযোগে জওহর লাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) ছাত্র সংসদ সভাপতি কানহাইয়া কুমারসহ গ্রেফতারকৃত ও আটক ছাত্রদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও উত্তেজনা বিরাজ করছে। সোমবার থেকে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে অচল হয়ে আছে বিশ্ববিদ্যালয়। মঙ্গলবার আরও শিক্ষকরাও ধর্মঘটে সংহতি প্রকাশ করেছেন। কলম্বিয়া, ইয়েল, হার্ভার্ড ও ক্যামব্রিজসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে চারশ শিক্ষাবিদন জেএনইউ-র শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন। এছাড়া ভারতের ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সমর্থন দিয়েছেন। সোমবার আদালতে পুলিশের উপস্থিতিতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ভারতজুড়ে ক্ষোভ প্রকাশ অব্যাহত আছে।
এদিকে, মঙ্গলবার বিজেপি সমর্থিত বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরঙ্গি দল বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের বাইরে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। এ ঘটনার তদন্তভার জাতীয় তদন্ত সংস্থাকে (এনআইএ) দেওয়ার দাবি করা একটি আবেদন খারিজ করে দিয়েছে দিল্লির হাইকোর্ট।
মঙ্গলবার এক যৌথ বিবৃতিতে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫৫ জন শিক্ষাবিদ জেএনইউ’র আন্দোলনরত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের সমর্থণ জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তারা বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণার পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিয়েছে জেএনইউ। বিশ্ববিদ্যালয়ের এ ধারণার মধ্যে রয়েছে, সমালোচনামূলক চিন্তা, গণতান্ত্রিক পরিবেশ, শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ড এবং রাজনৈতিক আদর্শের ভিন্নতার জায়গা। বর্তমানে এই ধারণাকে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা মনে করি, এটা শুধু ভারতেরই সমস্যা নয়।
বিবৃতিতে শিক্ষকরা আরও বলেন, বিশ্বব্যাপী এ ধরনের সমালোচনামূলক কর্মকাণ্ড ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতাকে আক্রমণ করা হচ্ছে। প্রতিবাদও হচ্ছে। ভারত ও বিশ্বে সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গি ও মত প্রকাশের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত, সহিষ্ণু ও গণতান্ত্রিক সমাজের যোগসূত্র রয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমরা দেখছি জেএনইউতে আমাদের সহকর্মীরা চুপ করে বসে নেই। তারা বেআইনি আটক ও স্বৈরাচারী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন।
মঙ্গলবার জেএনইউ ঘটনার তদন্তভার জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার তুলে দেওয়ার পক্ষে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন করেছিলেন এক আইনজীবী। আদালত আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন। আদালতের বক্তব্য, এনআইয়ের হাতে মামলাটি তুলে দেওয়ার মতো যথেষ্ট পরিণত নয় এখনও। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে, এখনই তাতে হস্তক্ষেপ করার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন বিচারপতি বিডি আহমেদ ও আর কে গউবার ডিভিশন বেঞ্চ।

এর আগে তিনদিনের রিমান্ড শেষে সোমবার আদালতে তোলা হলে কানহাইয়া কুমারকে আরও দুইদিন পুলিশের রিমান্ডে রাখার আদেশ দেন। পুলিশ জানিয়েছে, দেশদ্রোহীতার পাশাপাশি গ্রেফতারকৃত ছাত্রনেতা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত কিনা তা তদন্ত করা হচ্ছে।

এদিকে, মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিক্ষোভ করেছে ক্ষমতাসীন বিজেপি সমর্থিত বিশ্ব হিন্দু পরিষদ ও বজরঙ্গী দল। ক্যাম্পাসে ‘দেশবিরোধী’ কর্মকাণ্ড চলার কারণে তারা ভিসির পদত্যাগ দাবি করেন।

অন্যদিকে, সোমবার আদালতে পুলিশের উপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও সাংবাদিকদের ওপর আইনজীবীদের হামলার ঘটনায় এখনও কাউকে গ্রেফতার না করায় ভারতজুড়ে ক্ষোভ বাড়ছে। আদালতের ঘটনাকে দিল্লির পুলিশ কমিশনার বাসসি ‘গুরুতর কিছু নয়’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।তবে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে।আর ছাত্র পেটানো দিল্লির বিজেপি বিধায়ক ও পি শর্মা দাবি করেছেন-  খালি মারধর কেন, দেশবিরোধীদের মেরে ফেললেও ক্ষতি নেই।

দিল্লির বার অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়ে এ দিনের ঘটনার তদন্ত করা হবে। দোষী আইনজীবীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের একটি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করে হামলার বিচার দাবি ও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে অভিযোগ করেছেন।

আদালতের ভেতরে ও বাইরে এমন হামলার ঘটনায় ভারতজুড়ে নিন্দা হচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষকদের গায়ে হাত তোলা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয় বিভিন্ন মহলে৷ জেএনইউ শিক্ষক সংগঠনের এক সদস্য জানিয়েছেন, অন্তত ১০ জন শিক্ষককে এ দিন আদালতে মার খেতে হয়েছে৷ জেএনইউ-এর স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর সদস্য নিবেদিতা মেনন বলেছেন, শিক্ষকদের এ দিন যেভাবে হেনস্থা করা হয়েছে; সেটাই পরিষ্কার বুঝিয়ে দেয়, এই সরকার কীভাবে দেশ চালাচ্ছে৷

পাশাপাশি এফটিআইআই ও হায়দ্রাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৪০টি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় জেএনইউ’র আন্দোলনরত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সমর্থন জানিয়েছে।

ভারতের পার্লামেন্টে হামলার দায়ে দোষী সাব্যস্ত আফজাল গুরুর ফাঁসি কার্যকরের বিরুদ্ধে ৯ ফেব্রুয়ারি বিক্ষোভ করার অভিযোগে শুক্রবার কানহাইয়াকে গ্রেফতার করা হয়। এর নেপথ্যে ছিলেন বিজেপিপন্থী ছাত্রসংগঠন এবিভিপি ও বিজেপি সাংসদ মহেশ গিরি। এরপর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। সূত্র: আউটলুক ইন্ডিয়া, এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া, আনন্দবাজার।

/এএ/

সম্পর্কিত
তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করলো দিল্লির জেএনইউ
ভারতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশ বৃহস্পতিবার
অরুণাচলের সীমান্তবর্তী স্থানের চীনা নামকরণ প্রত্যাখ্যান ভারতের
সর্বশেষ খবর
তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করলো দিল্লির জেএনইউ
তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করলো দিল্লির জেএনইউ
উপদেষ্টা মাহফুজের মাথায় বোতল নিক্ষেপ, হাসনাত বললেন ‘প্রত‍্যাশিত নয়’
উপদেষ্টা মাহফুজের মাথায় বোতল নিক্ষেপ, হাসনাত বললেন ‘প্রত‍্যাশিত নয়’
৯ মাসে বৈদেশিক সহায়তা এলো কতটুকু
৯ মাসে বৈদেশিক সহায়তা এলো কতটুকু
দেশীয় অস্ত্রসহ ‘লও ঠেলা’ গ্যাংয়ের ৯ সদস্য গ্রেফতার
দেশীয় অস্ত্রসহ ‘লও ঠেলা’ গ্যাংয়ের ৯ সদস্য গ্রেফতার
সর্বাধিক পঠিত
সাবেক সেনা সদস্যদের আবেদন পুনর্বিবেচনা করছে সেনাবাহিনী, ধৈর্য ধরার পরামর্শ
সাবেক সেনা সদস্যদের আবেদন পুনর্বিবেচনা করছে সেনাবাহিনী, ধৈর্য ধরার পরামর্শ
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রসঙ্গ
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্রিফিংয়ে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রসঙ্গ
‘পুলসিরাত’ ইসলামিক নাম, তাই পরিবর্তনের নির্দেশ
‘পুলসিরাত’ ইসলামিক নাম, তাই পরিবর্তনের নির্দেশ
পূজা উদযাপন পরিষদের দুই নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা
পূজা উদযাপন পরিষদের দুই নেতার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা
আরও ১৬ ভারতীয়কে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিয়েছে বিএসএফ
আরও ১৬ ভারতীয়কে বাংলাদেশে ঢুকিয়ে দিয়েছে বিএসএফ