গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা এই সপ্তাহেই শুরু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সায়ার। এর মধ্যেই হামাস এই সপ্তাহে আরও ছয় জিম্মির মুক্তির পাশাপাশি দুই শিশুসহ চারজনের মরদেহ হস্তান্তরের ঘোষণা দিয়েছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
মঙ্গলবার হামাসের গাজা শাখার নেতা খলিল আল-হায়্যা জানান, বৃহস্পতিবার চারজনের মরদেহ হস্তান্তর করা হবে। যার মধ্যে বিবাস পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন। শনিবার ছয়জন জীবিত জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয়ও এই চুক্তি নিশ্চিত করেছে। তবে জিম্মিদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেছেন, মৃত জিম্মিদের শনাক্ত করার পরই তাদের নাম প্রকাশ করা হবে। গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু হওয়ার কথা ছিল গত ৪ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু আলোচনা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়নি বলে জানিয়েছে কাতার, যারা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করছে।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিওন সায়ার জেরুজালেমে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই সপ্তাহেই আলোচনা শুরু হবে। গত কয়েক সপ্তাহে ইসরায়েল এই আলোচনায় অংশ নেওয়া নিয়ে মিশ্র সংকেত দিয়েছে। গাজায় তিন ধাপের যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়েছে গত ১৯ জানুয়ারি, যার লক্ষ্য গাজায় যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধ করা।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় আটক হওয়া ইসরায়েলি জিম্মিদের মধ্যে বিবাস পরিবার সবচেয়ে বেশি আলোচিত। এক বছরেরও কম বয়সী কিফির বিবাস ও তার চার বছর বয়সী ভাই এরিয়েলকে নিয়ে এই পরিবারকে আটক করা হয়েছিল। তাদের বাবা ইয়ারডেন বিবাস গত মাসে মুক্তি পেলেও মা শিরি ও শিশু দুজনকে মুক্তি দেওয়া হয়নি। হামাস গত বছর দাবি করেছিল, শিরি ও শিশু দুজন ইসরায়েলি বোমা হামলায় নিহত হয়েছে। তবে ইসরায়েল তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করেনি।
যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে ৪২ দিনের যুদ্ধবিরতি এবং ৩৩ ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে শত শত ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে বাকি ৬৪ জিম্মির মুক্তির লক্ষ্যে আলোচনা হবে, যা কঠিন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ, এতে যুদ্ধপরবর্তী গাজা প্রশাসনের মতো জটিল বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী সায়ার বলেছেন, গাজায় হামাস বা অন্য কোনও সন্ত্রাসী সংগঠনের উপস্থিতি আমরা মেনে নেব না। তবে তিনি যোগ করেছেন, আলোচনা যদি গঠনমূলক হয়, তাহলে ইসরায়েল আলোচনায় অংশ নেবে এবং যুদ্ধবিরতি দীর্ঘায়িত করতে পারে।
এ পর্যন্ত ১৯ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তির বিনিময়ে শত শত ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। এই সপ্তাহে ছয়জন জীবিত ও চারজন জিম্মির মরদেহ হস্তান্তর করা হলে আরও চারজন বন্দি রয়ে যাবে। হামাসের তথ্য অনুযায়ী, এই চারজনই নিহত হয়েছেন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়। এর জবাবে ইসরায়েলের গাজায় হামলায় ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।