X
শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫
১৯ বৈশাখ ১৪৩২

হিজবুল্লাহ নেতা নাসরাল্লাহর শোকসভায় লাখো মানুষের ঢল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩:২৬আপডেট : ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩:২৬

ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহর শোকসভায় বৈরুতে লাখো মানুষের ঢল নামে। ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠীর ওপর চরম আঘাত হেনে গত পাঁচ মাস আগে ইসরায়েলের বিমান হামলায় নাসরাল্লাহ নিহত হন। রবিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) নিহত নেতার ছবি ও হিজবুল্লাহর পতাকা হাতে লেবানন ও অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সমর্থকরা বৈরুতের হিজবুল্লাহ নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণাঞ্চলের কামিল শামুন স্পোর্টস সিটি স্টেডিয়ামে ভিড় জমান। ৫৫ হাজার আসনের এই স্টেডিয়াম লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

একটি অনুষ্ঠানের পর তারা স্টেডিয়ামের বাইরে শোভাযাত্রায় অংশ নেয় এবং নাসরাল্লাহকে কাছেই দাফন করা হয়। লেবাননের এক নিরাপত্তা সূত্র জানায়, শোকসভায় প্রায় ১০ লাখ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

ইসরায়েলের সঙ্গে দশকব্যাপী সংঘাতে হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব দেওয়া নাসরাল্লাহর মৃত্যু এই গোষ্ঠীর জন্য একটি বড় আঘাত। তিনি হিজবুল্লাহকে একটি আঞ্চলিক প্রভাবশালী সামরিক শক্তিতে পরিণত করেছিলেন। তবে হিজবুল্লাহর বর্তমান নেতা নাঈম কাসেম শোকসভায় বলেন, হিজবুল্লাহ এখনও শক্তিশালী।

একটি অজ্ঞাত স্থান থেকে শোকসভায় তার বক্তৃতা সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।  

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী মূলত দক্ষিণ লেবানন থেকে সরে গেলেও তাদের বিমানবাহিনী এখনও লেবাননজুড়ে হিজবুল্লাহর অবস্থান বলে দাবি করা স্থানগুলোতে হামলা চালাচ্ছে। এছাড়া সীমান্ত বরাবর পাঁচটি পাহাড়ি অবস্থান এখনও তাদের দখলে রয়েছে।

ইসরায়েলি সেনারা দক্ষিণ লেবাননে লেবাননের বেসামরিক নাগরিক ও হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের আটক করেছে এবং নিহত হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের দেহ তাদের হেফাজতে রয়েছে। কাসেম বলেন, হিজবুল্লাহ তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য চাপ প্রয়োগ করবে।  হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের পাঁচটি অবস্থানকে দখলদারত্ব হিসেবে বিবেচনা করে এবং লেবানন সরকারের ওপর নির্ভর করে কূটনীতির মাধ্যমে পূর্ণ প্রত্যাহার নিশ্চিত করতে চায়।

কাসেম বলেন, আমরা যখন উপযুক্ত মনে করি তখন গুলি করি এবং যখন উপযুক্ত মনে করি তখন ধৈর্য ধরি।

রবিবার ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান লেবাননের দক্ষিণ ও পূর্বাঞ্চলে হামলা চালায় এবং শোকসভার সময় দুবার বৈরুতের ওপর নিচু দিয়ে উড়ে যায়। এতে ‘ইসরায়েল নিপাত যাক’ স্লোগান ওঠে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ এক্সে লিখেছেন, হাসান নাসরাল্লাহর শোকসভার ওপর বিমানগুলো একটি স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে: যে কেউ ইসরায়েল ধ্বংসের হুমকি দেবে এবং ইসরায়েলকে আক্রমণ করবে—সেটাই তার শেষ হবে। তোমরা শোকসভায় বিশেষজ্ঞ হবে—আর আমরা বিজয়ে বিশেষজ্ঞ হব।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী নাসরাল্লাহর হত্যার দৃশ্য ধারণ করা একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে।

শোকসভায় উপস্থিত ছিলেন কারা?
শোকসভায় উপস্থিত ছিলেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি, ইরাকি প্রতিনিধিদল যার মধ্যে শিয়া রাজনীতিবিদ ও মিলিশিয়া কমান্ডাররা ছিলেন এবং ইয়েমেনের হুথিদের একটি প্রতিনিধিদল।

গত বছরের যুদ্ধে হিজবুল্লাহ ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ইসরায়েলের সঙ্গে ওই যুদ্ধে হিজবুল্লাহর বেশিরভাগ নেতৃত্ব ও হাজারো যোদ্ধা নিহত হয় এবং দক্ষিণ লেবাননে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। এই শোকসভার মাধ্যমে হিজবুল্লাহ তার শক্তি প্রদর্শন করতে চায়।

যুদ্ধ-পরবর্তী লেবাননের রাজনীতিতে হিজবুল্লাহর দুর্বল অবস্থা প্রতিফলিত হয়েছে। নতুন সরকার গঠনে হিজবুল্লাহ তার ইচ্ছা চাপিয়ে দিতে পারেনি এবং নতুন মন্ত্রিসভার নীতিবক্তব্য থেকে তার অস্ত্রাগারকে বৈধতা দেওয়ার ভাষা বাদ দেওয়া হয়েছে।

সিরিয়ায় হিজবুল্লাহর মিত্র বাশার আল-আসাদের ক্ষমতাচ্যুত হওয়ায় হিজবুল্লাহর ওপর প্রভাব আরও বেড়েছে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ পথ বিচ্ছিন্ন করে দেয়।

এর আগে, আরাঘচি ও অন্যান্য ইরানি কর্মকর্তা লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আওনের সঙ্গে দেখা করেন। আওন শোকসভায় আমন্ত্রিত ছিলেন কিন্তু উপস্থিত হননি।

আওনের কার্যালয় জানায়, তিনি ইরানি প্রতিনিধিদলকে বলেছেন যে, লেবানন অন্যদের যুদ্ধে ক্লান্ত এবং ফিলিস্তিনি ইস্যুর জন্য লেবাননকে চড়া মূল্য দিতে হয়েছে।

শোকসভায় হাশেম সাফিয়েদ্দিনকেও সমাহিত করা হয়। নাসরাল্লাহর মৃত্যুর পর এক সপ্তাহের জন্য তিনি হিজবুল্লাহর নেতৃত্ব দেন। তাকে নাসরাল্লাহর উত্তরসূরি হিসেবে প্রকাশ্যে ঘোষণা করার আগেই ইসরায়েলের হামলায় তিনি নিহত হন।

তার মৃত্যুর পর নাসরাল্লাহকে অস্থায়ীভাবে তার ছেলে হাদির পাশে সমাহিত করা হয়। ১৯৯৭ সালে হিজবুল্লাহর হয়ে যুদ্ধ করে হাদি নিহত হন। গত বছরের যুদ্ধ শেষে মার্কিন-সমর্থিত যুদ্ধবিরতির অধীনে দক্ষিণ লেবানন থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের জন্য তার সরকারি শোকসভা পিছিয়ে দেওয়া হয়।

/এএ/
সম্পর্কিত
কানাডার নির্বাচনে ২২ জন পাঞ্জাব বংশোদ্ভূত এমপির জয়
রুয়ান্ডা ও কঙ্গোর সঙ্গে বিলিয়ন ডলারের খনিজসম্পদ চুক্তি করবে যুক্তরাষ্ট্র
তুরস্কে মে দিবসের মিছিলে পুলিশের বাধা, আটক ৪০৯
সর্বশেষ খবর
সুনির্দিষ্টভাবে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইলেন তারেক রহমান
সুনির্দিষ্টভাবে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইলেন তারেক রহমান
‘আ.লীগ রাজনীতি করতে পারবে কিনা— এই আলোচনা আসতে পারে না’
‘আ.লীগ রাজনীতি করতে পারবে কিনা— এই আলোচনা আসতে পারে না’
দীঘিনালা-মারিশ্যা সড়কে যান চলাচল শুরু
দীঘিনালা-মারিশ্যা সড়কে যান চলাচল শুরু
এনসিপির বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু
এনসিপির বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু
সর্বাধিক পঠিত
অস্ত্র নিয়ে সাবেক এমপির ওপর হামলা, অল্পের জন্য রক্ষা
অস্ত্র নিয়ে সাবেক এমপির ওপর হামলা, অল্পের জন্য রক্ষা
টেকনাফে সরকারি বরাদ্দের মালামাল মিয়ানমারে পাচার
টেকনাফে সরকারি বরাদ্দের মালামাল মিয়ানমারে পাচার
সাপের কারণে জাপানে বুলেট ট্রেন চলাচল বন্ধ
সাপের কারণে জাপানে বুলেট ট্রেন চলাচল বন্ধ
চিন্ময়ের জামিন কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা না, ইন্টেরিম সাবধান: হাসনাত আব্দুল্লাহ
চিন্ময়ের জামিন কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা না, ইন্টেরিম সাবধান: হাসনাত আব্দুল্লাহ
কূটনীতিক সুফিউর রহমানের নিয়োগ নিয়ে হচ্ছে কী
কূটনীতিক সুফিউর রহমানের নিয়োগ নিয়ে হচ্ছে কী