গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলায় পাঁচ জন নিহত হয়েছেন বলে স্থানীয় চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। সোমবার গাজার মধ্যাঞ্চলে তিন জন ফিলিস্তিনি পুরুষ রান্নার জন্য জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে গেলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তাদের প্রাণহানি ঘটে। এ ঘটনার পর ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি সংগঠন হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতি চুক্তি টিকিয়ে রাখার আলোচনায় কোনও অগ্রগতি দেখা যায়নি। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ইসরায়েল গত দুই সপ্তাহ ধরে গাজায় জ্বালানি, খাদ্য ও চিকিৎসা সামগ্রী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি রেখেছে। এ কারণে অনেক গাজাবাসীর জন্য জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করা দৈনন্দিন কাজে পরিণত হয়েছে। সোমবারের হামলায় নিহত তিন জন একই পরিবারের সদস্য ছিলেন। তারা গাজার মধ্যাঞ্চলে তাদের বাড়ি থেকে জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে বের হয়েছিলেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে জানায়, তারা তাদের সেনাদের কাছাকাছি সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছিল এবং বোমা পুঁতে রাখার চেষ্টা করেছিল বলে তাদের নিশানা করে।
গাজার দেইর আল-বালাহের আল-আকসা হাসপাতালে নিহত তিন জনের পরিবারের সদস্যরা তাদের সাদা কাফনে মোড়া লাশের কাছে ভিড় জমায়। নিহত একজনের পিতা জাবর আবু হাজির বলেন, তাদের লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। যখন তাদের চাচাতো ভাই ও এলাকার অন্যরা তাদের উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে, তখন ড্রোন থেকে বোমা নিক্ষেপ করা হয়।
সোমবার পরে চিকিৎসকরা জানান, গাজার বুর্জ শরণার্থী শিবিরে একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া এক পরিবারের সদস্য বাবা ও তার ছেলেকে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় দিনের মোট নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় পাঁচ জনে। এ ঘটনায় ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কোনও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজা সরকারের মিডিয়া অফিসের পরিচালক ইসমাইল আল-থাওবতা বলেন, ইসরায়েলের চুক্তি লঙ্ঘন যুদ্ধবিরতির চুক্তি বাস্তবায়নের সব প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। তিনি জানান, জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা ফিলিস্তিনিদের বোমা পুঁতে রাখা বা তাদের সেনাদের হুমকি দেওয়ার চেষ্টা বারবার ব্যর্থ করেছে।
গাজার ২৩ লাখ মানুষের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলের ১৬ দিন ধরে চলমান নিষেধাজ্ঞা। এই নিষেধাজ্ঞার কারণে গাজাবাসীরা খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানি সংকটে পড়েছেন। ইসরায়েল বলছে, যুদ্ধবিরতি আলোচনায় হামাসের ওপর চাপ তৈরি করতেই এই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
ইসরায়েলের নিষেধাজ্ঞার কারণে গাজায় বেশ কিছু বেকারি বন্ধ হয়ে গেছে এবং খাদ্যের দাম বেড়েছে। বিদ্যুৎ সংকটের কারণে গাজাবাসী বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ইসরায়েল কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় সম্পাদিত যুদ্ধবিরতি চুক্তির প্রথম ধাপ বর্ধিত করতে চায়। এই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের দূত স্টিভ উইটকফ। অন্যদিকে, হামাস বলেছে, তারা শুধু চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ শুরু হলে জিম্মিদের মুক্তি দেবে। এই ধাপটি ২ মার্চ শুরু হওয়ার কথা ছিল।
ইসরায়েল ও হামাস কায়রোতে মিসরের মধ্যস্থতায় ধারাবাহিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। হামাসের মুখপাত্র আবদেল-লতিফ আল-কানুয়া সোমবার বলেন, যদিও তার দল যুদ্ধবিরতির শর্ত মেনে চলছে, ইসরায়েল চুক্তি বানচাল করে নতুন শর্ত চাপিয়ে দিতে চাইছে।
শুক্রবার হামাস জানায়, তারা মার্কিন-ইসরায়েলি সেনা এডান আলেকজান্ডার ও চার জিম্মির দেহ মুক্তি দিতে রাজি আছে, যদি ইসরায়েল চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ বাস্তবায়নের আলোচনা শুরু করে। ইসরায়েল এ প্রস্তাবকে জিম্মি পরিবারগুলোর ওপর মানসিক যুদ্ধ চালানোর অভিযোগ এনেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, মধ্যস্থতাকারীদের প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে আলোচনা চালিয়ে যেতে নেগোসিয়েটরদের প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব অনুযায়ী, এখনও জীবিত ৫৯ জন জিম্মির মধ্যে ১১ জন এবং মৃত জিম্মিদের অর্ধেককে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে সীমান্ত পেরিয়ে হামলা চালানো হয়। এই হামলায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর জবাবে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক হামলা চালায়। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, ইসরায়েলের হামলায় এখন পর্যন্ত ৪৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার বেশিরভাগ জনগণ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং এলাকার অনেক অংশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।