গাজায় ইসরায়েলের ব্যাপক হামলায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৪০৪ জন। আহত হয়েছেন আরও ৫৬২ জন। দুই মাস ধরে চলা হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে মঙ্গলবার এই হামলা চালায় ইসরায়েল। গাজার বিভিন্ন এলাকায় এই হামলা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে খান ইউনিস, রাফাহ, গাজা সিটি ও দেইর আল-বালাহ। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে অনেকেই শিশু। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, এখন পর্যন্ত গাজায় ৪০৪ শাহাদাতবরণকারী ও ৫৬২ আহতকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এখনও অনেক লাশ ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছে।
গাজা শাসনকারী সংগঠন হামাস বলেছে, ইসরায়েলের এই হামলা গত ১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর যুদ্ধবিরতি চুক্তি একতরফা বাতিল করার শামিল। হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, নেতানিয়াহু ও তার চরমপন্থি সরকার যুদ্ধবিরতি চুক্তি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা গাজায় জিম্মিদেরর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলেছে।
সংগঠনটি আরব ও ইসলামি দেশগুলোর পাশাপাশি বিশ্বের মুক্তমনা মানুষকে রাস্তায় নেমে এই হামলার প্রতিবাদ জানানোর আহ্বান জানিয়েছে।
ফিলিস্তিনি ইসলামিক জিহাদ (পিআইজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতি চুক্তি পুনরুদ্ধারের সব প্রচেষ্টা ধ্বংস করার অভিযোগ এনেছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাস ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি না দেওয়ায় এবং যুদ্ধবিরতি বাড়াতে রাজি না হওয়ায় তিনি সেনাবাহিনীকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েল এখন থেকে হামাসের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সামরিক শক্তি প্রয়োগ করবে।
গাজায় হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে স্থানীয় এক শিক্ষক আহমেদ আবু রিজক আল জাজিরাকে বলেন, আমি ও আমাদের পরিবারের সদস্যরা ইসরায়েলি হামলার শব্দে ঘুম থেকে জেগে উঠি। আমরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, আমাদের শিশুরাও ভয় পেয়েছিল। আত্মীয়স্বজনরা আমাদের অবস্থা জানতে ফোন করছিলেন। অ্যাম্বুলেন্স এক রাস্তা থেকে অন্য রাস্তায় ছুটছিল। স্থানীয় হাসপাতালে অনেক পরিবার তাদের শিশুদের লাশ হাতে নিয়ে পৌঁছেছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদক তারেক আবু আজ্জুম দেইর আল-বালাহ থেকে জানান, ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা, অস্থায়ী স্কুল ও আবাসিক ভবনগুলোতে হামলা হয়েছে। এসব স্থানে মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। তিনি বলেন, গত এক ঘণ্টায় আমরা ইসরায়েলি ড্রোন ও যুদ্ধবিমানের উপস্থিতি শুনেছি। হামলায় নিহতদের মধ্যে নবজাতক, শিশু, নারী ও বয়স্ক ব্যক্তিরাও রয়েছেন। এছাড়া হামাসের বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলেছে, ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীর এই বর্বর হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে যে তারা শুধু হত্যা, ধ্বংস ও গণহত্যার ভাষাই বোঝে। তারা নিরীহ মানুষের রক্তপাতের মাধ্যমে তাদের আসল উদ্দেশ্য প্রকাশ করেছে। এটি প্রমাণ করে যে তাদের শিশু ও নারীদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর পূর্বপরিকল্পিত পরিকল্পনা রয়েছে।
যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে। এই ধাপে প্রায় ৬০ জন ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তি ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার কথা ছিল। তবে ইসরায়েল প্রথম ধাপ মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানোর জোর দাবি জানাচ্ছে। যুদ্ধবিরতি শুরুর পর থেকে হামাস প্রায় তিন ডজন ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে, বিনিময়ে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি পেয়েছেন।
ইসরায়েল সরাসরি যুদ্ধবিরতি শেষ ঘোষণা না করলেও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজায় হামলা চলবে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ বলেছেন, বাকি জিম্মিরা মুক্তি না পেলে গাজায় জাহান্নামের দরজা খুলে দেওয়া হবে।
জর্ডানের আম্মান থেকে আল জাজিরার হামদাহ সালহুত জানান, ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে আলোচকদের বিভিন্ন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের অভিযোগ এনেছে। তবে ৬ ফেব্রুয়ারি নেতানিয়াহু যুদ্ধবিরতি চুক্তির দ্বিতীয় ধাপে আলোচনা শুরু করতে অস্বীকৃতি জানানোর পর আলোচনা স্থবির হয়ে পড়েছে। সালহুত বলেন, কয়েকজন ইসরায়েলি বিশ্লেষক, রাজনৈতিক বিরোধী দল ও নেতানিয়াহুর নিজ সরকারের কয়েকজন সদস্য বলেছেন যে এটি আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল—যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে ফিরে যাওয়া।
ইসরায়েলের ১৮ মাসের যুদ্ধে গাজার বেশিরভাগ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত গাজায় ৪৮ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন।