গাজা উপত্যকার উত্তরে শত শত ফিলিস্তিনি বিক্ষোভ করে হামাসের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা ‘যুদ্ধ বন্ধ করো’ ও ‘হামাস বেরিয়ে যাও’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর থেকে চলমান যুদ্ধের বিরুদ্ধে এটি একটি বিরল প্রকাশ্য প্রতিবাদ। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
গাজার উত্তরের বিধ্বস্ত এলাকা বেইত লাহিয়ায় ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দিয়ে বিক্ষোভকারীদের মিছিল চলার দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে। এক ভিডিওতে দেখা গেছে, লোকজন ধুলো-ধূসর রাস্তায় দাঁড়িয়ে ‘হামাস, বেরিয়ে যাও’ বলে চিৎকার করছেন।
এক প্রত্যক্ষদর্শী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এটি যুদ্ধবিরতির দাবিতে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ। মানুষ ক্লান্ত, তাদের যাওয়ার জায়গা নেই। অনেকে হামাসের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলেন। সবাই না হলেও অনেকেই বলছিলেন, ‘হামাস, বেরিয়ে যাও’। মানুষ অতিষ্ঠ, তাদের দোষ দেওয়া যায় না।”
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা ‘আমরা যুদ্ধ চাই না’ স্লোগান দিচ্ছেন। এক ব্যানারে লেখা ছিল, ‘যুদ্ধ যথেষ্ট হয়েছে’।
হামাসের একজন ঊর্ধ্বতন নেতা বাসেম নাইম বলেন, যুদ্ধের দুর্ভোগের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ করার অধিকার আছে। তবে আমরা সন্দেহ করি, কিছু সন্দেহজনক রাজনৈতিক এজেন্ডা এই পরিস্থিতি কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, পশ্চিম তীরে যা ঘটছে, সেখানে কেন তারা প্রতিবাদ করছে না?
এই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা আগে, হামাসের প্রতিদ্বন্দ্বী ফাতাহ আন্দোলন গাজাবাসীর ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য হামাসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল। ফাতাহ পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) নেতৃত্ব দেয়।
যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ ও রাজনৈতিক উত্তেজনা
ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে গাজায় এখন পর্যন্ত ৫০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গত বছরের অক্টোবরে হামাসের হামলায় ইসরায়েলে ১ হাজার ২০০ জন নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। এর জবাবে ইসরায়েলের বিধ্বংসী অভিযানে গাজার অধিকাংশ এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
গত জানুয়ারিতে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর হাজারো বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি উত্তরে ফিরেছিলেন। কিন্তু ১৮ মার্চ ইসরায়েলের নতুন হামলার পর আবারও উত্তরে থাকা বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এক বিক্ষোভকারী বলেন, পুরো গাজা ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন আবার আমাদের উত্তরে থাকতে বারণ করা হচ্ছে। আমরা কোথায় যাব?
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক দিনে ইসরায়েলের হামলায় ৭০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
হামাস-ফাতাহ দ্বন্দ্ব ও গাজার ভবিষ্যৎ
২০০৭ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে গাজার নিয়ন্ত্রণ নেয় হামাস। এরপর থেকে সেখানে বিরোধী মতামতের জন্য খুব কমই জায়গা রাখা হয়েছে। অনেক ফিলিস্তিনি হামাসের সমালোচনা করতে ভয় পান, কারণ প্রতিশোধের শঙ্কা রয়েছে।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) দাবি করে, যুদ্ধের পর গাজা তাদের অধীনেই থাকবে। কিন্তু হামাস বলছে, নতুন প্রশাসন গঠনে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এই বিভেদের মধ্যেই গাজাবাসীর কণ্ঠস্বর আরও জোরালো হচ্ছে—যুদ্ধ বন্ধ হোক, শান্তি ফিরে আসুক।