X
বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫
১১ আষাঢ় ১৪৩২

গাজা ‘দখলের’ পরিকল্পনা ইসরায়েলের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৫ মে ২০২৫, ২২:০৭আপডেট : ০৫ মে ২০২৫, ২২:০৭

ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অভিযান সম্প্রসারণ ও ত্রাণ বিতরণ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে— যা অঞ্চলটির পূর্ণাঙ্গ দখলের দিকে ইঙ্গিত দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা সর্বসম্মতভাবে এই পরিকল্পনায় সায় দিয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।

নেতানিয়াহুর নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা অতিরিক্ত রিজার্ভ সেনা ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং গাজার ২৩ লাখ অবরুদ্ধ মানুষের জন্য খাদ্য ও জরুরি সহায়তা বিতরণে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।

রয়টার্স ও এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গাজার পূর্ণ দখল ও নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ থাকতে পারে। এক সূত্র জানায়, পরিকল্পনায় গাজা দখল এবং অঞ্চল ধরে রাখার বিষয়টি রয়েছে। গাজাবাসীদের সুরক্ষার কথা বলে তাদের দক্ষিণাঞ্চলে সরিয়ে নেওয়ার কথাও আছে।

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের ‘স্বেচ্ছা-প্রস্থান’ উদ্যোগকেও নেতানিয়াহু অগ্রাধিকার দিচ্ছেন বলে দাবি করেছে সূত্রটি।

ত্রাণকে ‘রাজনৈতিক অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার

ইসরায়েলি সরকার মার্চের ২ তারিখ থেকে গাজায় সব ধরনের ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ রেখেছে। এর মধ্যেই তারা দাবি করছে, খাদ্য ঘাটতির অভিযোগ অতিরঞ্জিত, যদিও জাতিসংঘের সংস্থাগুলো একে মানবিক বিপর্যয় বলে চিহ্নিত করেছে।

টাইমস অব ইসরায়েল-এর বরাতে জানা গেছে, ভবিষ্যতে গাজায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো ও বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থার মাধ্যমে খাদ্য বিতরণের পরিকল্পনা করেছে ইসরায়েল। এই কার্যক্রমে বাহ্যিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে ইসরায়েলি সেনারা।

ইসরায়েলে মতবিরোধ

ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও এ নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র মতানৈক্য। সেনাবাহিনীপ্রধান এয়াল জামির হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, পুরো অভিযান চালালে গাজায় বন্দি থাকা ইসরায়েলি জিম্মিদের হারানোর ঝুঁকি আছে।

অন্যদিকে কট্টর ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন-গভির দাবি করেন, আগের মতোই খাদ্য, পানি, ওষুধ ও জ্বালানি আটকে রাখতে হবে, খাদ্য গুদাম ও জেনারেটর বোমা মেরে উড়িয়ে দিতে হবে।

জামির এর প্রতিবাদে বলেন, আপনার কথাগুলো বিপজ্জনক। আন্তর্জাতিক আইন আছে, আমরা তা মানতে বাধ্য। গোটা গাজাকে অনাহারে রাখলে সেটি আমাদেরকেই বিপদে ফেলবে।

বিরোধীদলীয় নেতা ইয়ার লাপিদ সেনা মোতায়েনের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, সরকার লক্ষ্যের স্পষ্টতা ছাড়াই সেনাদের তলব করছে, দীর্ঘমেয়াদি কোনও পরিকল্পনা নেই।

অপর এক বিরোধী নেতা ইয়াইর গোলান বলেন, এই পরিকল্পনা নিরাপত্তা নিশ্চিতে নয়, বরং সরকারের পতন ঠেকাতে প্রণীত।

মানবিক সহায়তায় সামরিক শর্ত

ইসরায়েল নতুন একটি মানবিক অঞ্চল স্থাপন করতে চায় গাজার দক্ষিণে, যেখানে তাদের নির্ধারিত শর্তে ত্রাণ পৌঁছানো হবে। তবে জাতিসংঘের হিউম্যানিটারিয়ান কান্ট্রি টিম (এইচসিটি) জানিয়েছে, তারা এই পরিকল্পনায় অংশ নেবে না।

এইচসিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই প্রস্তাব মানবিক নীতিমালার পরিপন্থি এবং এটি মূলত জীবনধারণযোগ্য দ্রব্যের নিয়ন্ত্রণকে সামরিক কৌশল হিসেবে ব্যবহার করার প্রচেষ্টা।

হামাস এই পরিকল্পনাকে ‘রাজনৈতিক ব্ল্যাকমেইল’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে। এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ত্রাণকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের এই চেষ্টা আমরা মানি না। গাজার মানবিক বিপর্যয়ের দায় ইসরায়েলকেই নিতে হবে।

ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি?

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাজায় ‘ময়দার গণহত্যা’ নামে পরিচিত এক ঘটনার সময় ত্রাণের জন্য অপেক্ষমান জনগণের ওপর গুলি চালায় ইসরায়েলি সেনারা, যাতে ১০০-র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হন। পরে জানা যায়, ত্রাণ বহনকারী ওই বহর জাতিসংঘ নয়, বরং বেসরকারি ঠিকাদারদের সঙ্গে সমন্বয় করে পাঠানো হয়েছিল।

তদুপরি, মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র ২৩ কোটি ডলারের খরচে গাজায় ভাসমান জেটি নির্মাণের চেষ্টা করে, যাতে ত্রাণ পৌঁছানো সহজ হয়। কিন্তু কয়েক মাসেই সেই কাঠামো বন্ধ হয়ে যায় এবং কেবল একদিনের যুদ্ধপূর্ব খাদ্যের সমপরিমাণ ত্রাণ সরবরাহ করা সম্ভব হয়।

বিভিন্ন প্রচেষ্টার মাঝেও মার্চে আকাশপথে ত্রাণ পাঠানোর সময় অন্তত পাঁচজন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারান।

জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থা বলছে, দলগুলো গাজায় রয়েছে এবং জরুরি খাদ্য, পানি, স্বাস্থ্যসেবা ও পুষ্টি সহায়তা আবার শুরু করতে প্রস্তুত। বিশ্বনেতাদের প্রতি অনুরোধ, অবরোধ তুলে দিন, যাতে সীমান্তে আটকে থাকা বিপুল ত্রাণ পৌঁছানো যায়।

/এএ/
সম্পর্কিত
আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস আজমাদকের বিভীষিকায় ধুঁকছে সমাজ!
ট্রাম্পের দাবি মেনে প্রতিরক্ষা ব্যয় দ্বিগুণের বেশি বাড়ানোর অঙ্গীকার ন্যাটোর
ইরানের সঙ্গে বৈঠক হবে, তবে চুক্তি জরুরি নয়: ট্রাম্প
সর্বশেষ খবর
ঘুষ ও দুর্নীতির দায়ে ওসি থেকে এসআই মাসুদ
ঘুষ ও দুর্নীতির দায়ে ওসি থেকে এসআই মাসুদ
সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট
সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে: জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট
৫ আগস্ট জুলাই অভ্যুত্থান, ৮ আগস্ট নতুন বাংলাদেশ ও ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ দিবস
৫ আগস্ট জুলাই অভ্যুত্থান, ৮ আগস্ট নতুন বাংলাদেশ ও ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদ দিবস
কনা দিলেন বিচ্ছেদের খবর, স্বামী বললেন ‘না’!
কনা দিলেন বিচ্ছেদের খবর, স্বামী বললেন ‘না’!
সর্বাধিক পঠিত
রাইস কুকারে রান্না করতে গিয়ে মা-মেয়ের মৃত্যু
রাইস কুকারে রান্না করতে গিয়ে মা-মেয়ের মৃত্যু
যে কারণে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী টিটুকে সরিয়ে দিলেন ট্রাইব্যুনাল
যে কারণে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী টিটুকে সরিয়ে দিলেন ট্রাইব্যুনাল
বছরে ৯৬০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়, চলছে না আইসিবি: অধ্যাপক আবু আহমেদ
বছরে ৯৬০ কোটি টাকা সুদ দিতে হয়, চলছে না আইসিবি: অধ্যাপক আবু আহমেদ
আটকের পর অধ্যক্ষ বললেন ‘আ.লীগ করায় দোষ হলে যেকোনও শাস্তি মেনে নেবো’
আটকের পর অধ্যক্ষ বললেন ‘আ.লীগ করায় দোষ হলে যেকোনও শাস্তি মেনে নেবো’
ইশরাক বললেন ক্ষমা চাইতে, আসিফ দিলেন ‘কড়া বার্তা’
ইশরাক বললেন ক্ষমা চাইতে, আসিফ দিলেন ‘কড়া বার্তা’