ইরানের পাহাড়ঘেরা ফরদো পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালাবে কিনা, এই প্রশ্ন এখন মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতিকে আরও অস্থির করে তুলেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বিষয়ে এখনও সরাসরি কিছু বলেননি। তবে সামরিক প্রস্তুতির ইঙ্গিত স্পষ্ট। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।
গত সপ্তাহান্ত থেকে মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সামরিক উপস্থিতি বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার রাতে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট্রাল কমান্ডের অধীনে অতিরিক্ত সামরিক সক্ষমতা মোতায়েনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তার ভাষায়, এটি আঞ্চলিক প্রতিরক্ষা জোরদার করার একটি পদক্ষেপ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র ইরানের ফরদো কেন্দ্রটিতে হামলার পরিকল্পনা করে থাকে, তাহলে সেটি হবে অত্যন্ত জটিল ও কৌশলগত একটি অভিযান। কারণ, এই সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রটি পাহাড়ের নিচে আনুমানিক ৮০ থেকে ৯০ মিটার গভীরে অবস্থিত। একে ধ্বংস করতে পারে কেবল ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের জিবিইউ-৫৭ নামক বাংকার বিধ্বংসী বোমা। এটি কেবল অত্যাধুনিক মার্কিন বি-২ বোমারু বিমানেই বহন করা সম্ভব।
ব্রিটিশ সামরিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরইউএসআই-এর বিশেষজ্ঞ জাস্টিন ব্রঙ্ক বলছেন, ফরদো ধ্বংস করতে একাধিক আঘাত প্রয়োজন হবে। একটি বোমা প্রথমে পাথরে গর্ত তৈরি করবে, এরপর পরেরটি সেখানে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটাবে।
তার মতে, এমন সফল হামলার জন্য একাধিক বি-২ বোমারু বিমান দরকার পড়বে।
চলতি বছরের মে মাসে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, মার্কিন নিয়ন্ত্রিত ডিয়েগো গার্সিয়া ঘাঁটিতে ছয়টি বি-২ বোমারু বিমান অবস্থান করছে। যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট সক্রিয় বি-২ বিমানের প্রায় অর্ধেক। ডিয়েগো গার্সিয়া থেকে ফরদো দূরত্ব ৩ হাজার ২০০ মাইল। যা বি-২-এর আওতার মধ্যেই পড়ে। তবে ফিরে আসার পথে একবার জ্বালানি ভরার প্রয়োজন হতে পারে।
২০১৯ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, এক দশক আগে যুক্তরাষ্ট্রের পেন্টাগন ফরদোর অনুরূপ কেন্দ্র তৈরি করে সেখানে এই বিশাল বোমার পরীক্ষা চালায়। ওই সময়ের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিওন প্যানেটা ইসরায়েলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাককে সেই পরীক্ষার ভিডিও দেখিয়েছিলেন। ওই সময় বোমাটি পুরো কেন্দ্র ধ্বংস করেছিল।
মঙ্গলবার ওয়াশিংটনে ফিরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, আমি যুদ্ধবিরতি চাই না, আমি এর চেয়েও ভালো কিছু খুঁজছি। তবে তিনি পরিষ্কার করেননি, এর মানে কী। অনেকেই মনে করছেন, বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প।
রবিবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৩১টি কেসি-১৩৫ এবং কেসি-৪৬ জ্বালানি বিমান ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যের দিকে রওনা হয়েছে। মঙ্গলবার আরও কিছু বিমানকে পূর্বদিকে যেতে দেখা গেছে। এ ছাড়া ইউএসএস নিমিটজ-এর নেতৃত্বে দ্বিতীয় একটি বিমানবাহী স্ট্রাইক গ্রুপও মধ্যপ্রাচ্যে পাঠানো হয়েছে। এটি ইতোমধ্যে আরব সাগরে অবস্থানরত ইউএসএস কার্ল ভিনসন-এর সঙ্গে যুক্ত হবে। পূর্ব ভূমধ্যসাগরে অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত তিনটি ডেস্ট্রয়ার।
ইরানের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক কেন্দ্র নাতাঞ্জ। সেখানে শুক্রবার ইসরায়েল আংশিক বোমাবর্ষণ করেছে বলে দাবি করেছে। যদিও আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা আইএইএ বলেছে, কেন্দ্রটির ভূগর্ভস্থ স্থাপনাগুলো প্রায় অক্ষত রয়েছে। এই কেন্দ্রটিও যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ হামলার টার্গেট হতে পারে।
গত শুক্রবার ইসরায়েল ইরানে হামলা শুরু করার সময় মাত্র একবার ফরদোকে নিশানা করেছিল। তারপর আর এ কেন্দ্রটিকে লক্ষ্য করা হয়নি। আইএইএ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত কেন্দ্রটিতে কোনও দৃশ্যমান ক্ষয়ক্ষতি দেখা যায়নি।
