লোহিত সাগরে হামলা চালিয়ে এই সপ্তাহে দুটি কার্গো জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা। বুধবার (৯ জুলাই) হুথিদের টানা দুই দিনব্যাপী ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হয়ে লোহিত সাগরে ডুবে যায় লাইবেরিয়ান পতাকাবাহী এবং গ্রিক-মালিকানাধীন কার্গো জাহাজ ‘ইটারনিটি সি’। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
গাজায় চলমান যুদ্ধ ও ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার প্রতিবাদে চালানো হচ্ছে গত সাত মাস ধরে বৈশ্বিক বাণিজ্যিক নৌযানের ওপর হামলা চালিয়ে আসছে হুথিরা। তবে সাত মাসের মধ্যে এই প্রথম এত বড় আকারে সামুদ্রিক অভিযান চালালো ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠীটি।
২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে হুথিরা লাল সাগর দিয়ে চলাচলকারী শতাধিক বাণিজ্যিক জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। এর মধ্যে তারা চারটি জাহাজ ডুবিয়েছে, একটি জাহাজ দখল করেছে এবং অন্তত আটজন নাবিককে হত্যা করেছে।
সমুদ্র চলাচল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘ইটারনিটি সি’ নামের জাহাজে হামলায় চার নাবিক নিহত হয়েছে। ১০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং আরও ১১ জন নিখোঁজ রয়েছে।
ইয়েমেনে নিযুক্ত মার্কিন মিশন অভিযোগ করেছে যে, হুথিরা নিখোঁজ নাবিকদের অনেককেই অপহরণ করেছে। তাদের ভাগ্য এখনও অজানা।
আরেকটি লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী, গ্রিক-পরিচালিত বাল্ক ক্যারিয়ার ‘ম্যাজিক সিজ’ গত রবিবার (৬ জুলাই) ডুবে যায়। গুলিবর্ষণ, ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও চারটি দূরনিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরকের আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল জাহাজটি। নাবিক ও ক্রু’রা পরে পাশ দিয়ে যাওয়া আরেকটি বাণিজ্যিক জাহাজে উঠে জীঊবন বাঁচিয়েছে। পরে হুথি গোষ্ঠীর মিডিয়া শাখা হামলা এবং জাহাজে অস্ত্রধারীদের অভিযান চালানোর ভিডিও প্রকাশ করে।
গ্রিক-নিবন্ধিত ট্যাঙ্কার ‘সৌনিয়ন’ গত বছর ২১ আগস্ট হামলার শিকার হয়। বেশ কয়েকটি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের আঘাতে এতে আগুন ধরে যায়। ফলে জাহাজে থাকা এক লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন অপরিশোধিত তেলের কারণে একটি সম্ভাব্য পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা তৈরি করে। জাহাজটিকে নিরাপদ ঘোষণা করতে এবং কার্গো সরাতে কয়েক মাস লেগে যায়।
গ্রিক মালিকানাধীন কয়লা পরিবহনকারী জাহাজ 'টিউটর' গত বছর জুনে ইয়েমেনের হোদেইদাহ বন্দরের কাছে হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র ও বিস্ফোরকবোঝাই রিমোট-নিয়ন্ত্রিত নৌকার হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে কয়েকদিন পর ডুবে যায়। ইঞ্জিনরুমে কর্মরত এক নাবিক নিখোঁজ থাকেন। বাকিদের উদ্ধার করে সামরিক বাহিনী নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠায়।
এছাড়া গত মার্চে হুথিদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় গ্রিক মালিকানাধী বার্বাডোস পতাকাবাহী ‘ট্রু কনফিডেন্স’ নামের জাহাজে তিনজন নাবিক নিহত হন। এটি ছিল হুথি হামলায় প্রথম প্রাণহানির ঘটনা। ইয়েমেনের এডেন বন্দরের উপকূল থেকে প্রায় ৫০ নটিক্যাল মাইল দূরে এই হামলায় জাহাজে আগুন ধরে যায়।
গত ফেব্রুয়ারিতে ব্রিটিশ মালিকানাধীন ‘রুবিমারে’ একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। জাহাজটি ২ মার্চ ডুবে যায়। এটি ছিল হুথিদের হামলায় ডুবে যাওয়া প্রথম জাহাজ।
গত বছর জানুয়ারিতে গ্রিক মালিকানাধীন ‘জোগ্রাফিয়া’ ভিয়েতনাম থেকে ইসরায়েল যাওয়ার পথে, ইয়েমেনের সালীফ বন্দরের কাছে যখন আক্রমণের শিকার হয়, তখন এটি খালি ছিল এবং জাহাজটিতে ২৪ জন নাবিক ছিল। এই হামলায় জাহাজের পানির নিচের অংশে একটি বড় ছিদ্র তৈরি হয়।
এছাড়া ২০২৩ সালের নভেম্বরে হুথি কমান্ডোরা আন্তর্জাতিক জলসীমায় বাহামাস পতাকাবাহী গাড়ি পরিবহনকারী জাহাজ ‘গ্যালাক্সি লিডার’ এবং তার ক্রুদের জিম্মি করে। দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় পর ওই ২৫ নাবিককে ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে মুক্তি দেয় তারা।