বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮১ মিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় শুরু থেকেই ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক এবং সুইফট নেটওয়ার্ককে দায়ী করে আসছে বাংলাদেশ। বিষয়টি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবং সুইফট নেটওয়ার্কের কাছে বিশদ জানতে চাওয়ারও পরিকল্পনা করেছে ঢাকা। এক প্রতিবেদনে ফরচুন ম্যাগাজিন জানিয়েছে, এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে ফেডারেল ব্যাংক এবং সুইফট কর্তৃপক্ষের মধ্য সুইজারল্যান্ডে বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ঢাকা সূত্রের বরাত দিয়ে ফরচুনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আগামী সপ্তাহে উচ্চ পর্যায়ের দুটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হবেন। এর একটি হচ্ছে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের প্রধানের সঙ্গে। অন্য বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হবে সুইফট নেটওয়ার্কের একজন জ্যেষ্ঠ নির্বাহীর সঙ্গে। এসব বৈঠকে চুরি হওয়া ৮১ মিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ উদ্ধারের বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ অ্যাকাউন্ট থেকে ১০১ মিলিয়ন ডলার চুরি যায়। এর মধ্যে ২০ মিলিয়ন ডলার গ্রাহকের নাম ভুল করায় শ্রীলংকায় আটকে যায়, পরে তা ফেরত আনা হয়। বাকি ৮১ মিলিয়ন ডলার যায় ফিলিপাইনের একটি বেসরকারি ব্যাংকে। সেখান থেকে ক্যাসিনো হয়ে হংকংয়ে ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের দুজন কর্মকর্তা ফরচুনকে জানান, বাংলাদেশ ব্যাংক বিশ্বাস করে গত ফেব্রুয়ারিতে সংঘটিত ওই রিজার্ভ চুরির ঘটনায় নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক এবং সুইফটের দায় রয়েছে। গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি না হওয়ায় তারা নিজেদের নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
আগামী ১০ মে সুইজারল্যান্ডে বৈঠক করবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, নিউ ইয়র্ক ফেডারেল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম ড্যুডলে এবং সুইফটের একজন প্রতিনিধি। এ সময় তাদেরকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বক্তব্য জানানো হবে। তবে ওই বৈঠকে সুইফটের পক্ষ থেকে কে প্রতিনিধিত্ব করবেন সেটা এখনও পরিষ্কার নয়।
বিষয়টি নিয়ে সুইফটের মুখপাত্র কিংবা নিউ ইয়র্ক ফেডারেল ব্যাংকের কোনও কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, সুইজারল্যান্ডের বাসেলে’র ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আইনজীবী উপস্থিত থাকবেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে সেখানে আজমালুল হোসেন নামে ঢাকার একজন আইনজীবীকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে। রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় তিনি বাংলাদেশ ব্যাংককে সাহায্য করবেন। তবে ওই আইনজীবীর বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তার পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তিনি দেশের বাইরে রয়েছেন।
গত মার্চে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক নিজস্ব প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, তারা তহবিল হারানোর ঘটনায় নিউ ইয়র্ক ফেডারেল ব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
এর আগে গত মার্চে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন রিজার্ভ চুরির ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিযুক্ত আইনজীবী ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি। তার মতে, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত দেবেই। নিজেদের সুনামের স্বার্থেই তারা এটা দেবে। সূত্র: ফরচুন ম্যাগাজিন।
/এমপি/বিএ/