যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন শুনানির অনুমোদন দিয়েছে দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেট। এর আগে বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নিয়ন্ত্রিত পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে এ সংক্রান্ত বিল পাস হয়। তবে সিনেটে ট্রাম্পের নিজ দল ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান পার্টির নিয়ন্ত্রণ থাকায় শুরুতেই সেখানে এ নিয়ে বিপত্তি বাধে। ২২ জানুয়ারি বুধবার প্রথম দিনই ট্রাম্পের অভিশংসনের উদ্যোগে বাধ সাধেন রিপাবলিকান সিনেটররা। শুনানির জন্য নতুন তথ্যপ্রমাণ হাজিরের চেষ্টায় ডেমোক্র্যাটদের তিনটি প্রস্তাব খারিজ করে দেওয়া হয়। তবে ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিতর্কের পর শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পের ইমপিচমেন্ট শুনানির অনুমোদন দেয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
অভিশংসন শুনানির অনুমোদন দিলেও শেষ পর্যন্ত সিনেটে ট্রাম্পকে দোষী সাব্যস্ত করা কঠিন হয়ে পড়বে। কেননা তাকে অপসারণে সিনেটের দুই তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ ১০০ জন সিনেটরের মধ্যে ৬৭ জনকে অভিযোগের পক্ষে ভোট দিতে হবে। তবে এমনটি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কেননা সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ৫৩টি আসন রিপাবলিকানদের দখলে রয়েছে।
সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মিচ ম্যাককনেল ইতোমধ্যেই শুনানি দ্রুত শেষ করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত সিনেটে এ সংক্রান্ত শুনানির অনুমোদনকে ট্রাম্প শিবিরের জন্য একটি নাটকীয় ধাক্কা হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে। কেননা, এর মধ্য দিয়ে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যকার ফাটল বা বিবাদের বিষয়টি সামনে উঠে এসেছে। এছাড়া ২০২০ সালেই যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের বছর ঐতিহাসিক এ অভিশংসন প্রক্রিয়া নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা সচেতন নাগরিকদের ওপর প্রভাব ফেলবে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অভিশংসন শুনানির মুখে পড়া তৃতীয় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আল জাজিরা জানিয়েছে, শুনানি চলাকালে কোনও মোবাইল ফোন বা অন্য কোনও ইলেক্ট্রনক্সি ডিভাইস ব্যবহার করা যাবে না।
শুনানির প্রারম্ভিক সাক্ষ্যে ডেমোক্র্যাট নেতা অ্যাডাম স্কিফ বলেছেন, সত্য উন্মোচিত হবে। মঙ্গলবার সিনেটে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হলে এই বক্তব্য দেন তিনি।
ট্রাম্পের দাবি, বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া বিলটি অসাংবিধানিক। তাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তারা এ সংক্রান্ত বিল উত্থাপন করেছে।
ট্রাম্পের অভিশংসন প্রস্তাবে ডেমোক্র্যাটদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন অ্যাডাম। তিনি বলেন, 'বেশিরভাগ আমেরিকান বিশ্বাস করে সিনেট হবে নিরপেক্ষ'। তিনি উপযুক্ত বিচারক হিসেবে সিনেটরদের কাজ করার আহ্বান জানান। শুনানিতে ট্রাম্পের বেশ কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ তুলে ধরেন অ্যাডাম। সেগুলোতে ট্রাম্পকে বলতে শোনা যায়, সংবিধান তাকে যা খুশি করার ক্ষমতা দিয়েছে। তার বিচারে যেসব কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেবেন তাদের জরিমানা করা হবে।
ডেমোক্র্যাট নেতা বলেন, 'জাতীয় নিরাপত্তার নামে ট্রাম্প তার আচরণবিধি লঙ্ঘনের ভয়ঙ্কর সব প্রমাণ আড়াল করতে চান। প্রশ্ন হলো, আপনারা কি তা করতে দেবেন?' সাক্ষ্যের উপসংহারে তিনি বলেন, 'সত্য উন্মোচিত হবেই। প্রশ্ন হলো তা কি সময়মতো আসবে?'