মৌমাছির বিষ স্তন ক্যানসারের আগ্রাসী কোষ ধ্বংস করতে সক্ষম বলে প্রমাণ পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীরা। পরীক্ষাগারে এই বিষ এবং এতে থাকা মেলিটিন নামের উপাদান ব্যবহার করে ট্রিপল নেগেটিভ ও এইচইআর২ নামে দুই ধরনের স্তন ক্যানসারের কোষ ধ্বংস করতে সমর্থ হয়েছেন তারা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, এই আবিষ্কারকে উৎসাহব্যঞ্জক মনে করা হলেও এ নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই বিজ্ঞানীরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বে ২১ লাখ নারী স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। বিজ্ঞানীরা বলছেন, পরীক্ষাগারে ক্যানসার কোষ ধ্বংস করতে সক্ষম হাজার হাজার উপাদানের সন্ধান পাওয়া গেলেও বাস্তবে মানুষের চিকিৎসায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে সেগুলোর খুব কম সংখ্যকই কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। এর আগে অন্য ধরনের ক্যানসার কোষ ধ্বংসে মৌমাছির বিষের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে। এবারের গবেষণায় স্তন ক্যানসান নিরাময়ে এটি কার্যকর বলে প্রমাণ হয়েছে।
পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার হ্যারি পারকিনস ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল রিসার্চের করা গবেষণায় এই প্রমাণ পাওয়া গেছে। ন্যাচার প্রিসিশন অনকোলোজি নামের জার্নালে গবেষণাকর্মটি প্রকাশিত হয়েছে।
নতুন গবেষণাটিতে তিনশ’রও বেশি মৌমাছি থেকে সংগৃহীত বিষ পরীক্ষা করা হয়েছে। গবেষণাটির নেতৃত্ব দেওয়া পিএইচডি গবেষক সিয়ারা ডাফি জানান, মৌমাছির বিষ ক্যানসার কোষের বিরুদ্ধে মারাত্মক শক্তিশালী বলে প্রমাণ মিলেছে। বিষের একটি উপাদান এক ঘণ্টার মধ্যে ক্যানসার কোষ মারতে পারে, সেক্ষেত্রে অন্য কোষের ক্ষতি হয় সর্বনিম্ন পরিমাণ। তবে মাত্রা বাড়ালে বিষক্রিয়া বাড়তে পারে।
গবেষকেরা আরও দেখেছেন, বিষের মেলিটিন নামের উপাদান ক্যানসার কোষের বৃদ্ধিতে বিঘ্ন ঘটাতে কিংবা বন্ধ করে দেওয়ার ক্ষেত্রেও কার্যকর। মেলিটিন প্রাকৃতিকভাবে মৌমাছির বিষে থাকলেও কৃত্রিমভাবেও এটি বানানো যায়।
ট্রিপল নেগেটিভ স্তন ক্যানসার সাধারণত অন্যতম আগ্রাসী একটা রোগ। সাধারণত ১০ থেকে ১৫ শতাংশ স্তন ক্যানসার হয় এই প্রকৃতির। বর্তমানে এটি নিরাময়ে অস্ত্রোপচার, রেডিওথেরাপি ও কেমোথেরাপি ব্যবহার হয়।
বুধবার পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার প্রধান বিজ্ঞানী এই উদ্ভাবনকে চরম উৎসাহব্যঞ্জক আখ্যা দেন। প্রফেসর পিটার ক্লিনকেন বলেন, ‘মানব রোগের চিকিৎসায় প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করতে পারার আরেকটি চমৎকার উদাহরণ এই গবেষণা।’
তবে ক্যানসারের ওষুধ হিসেবে এটি ব্যবহার উপযোগী করে তোলার আগে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার বলেও সতর্ক করেছেন গবেষকেরা।