X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যেভাবে প্রতিশোধ নিতে চায় ইরান

বিদেশ ডেস্ক
২৯ নভেম্বর ২০২০, ১৭:১৮আপডেট : ২৯ নভেম্বর ২০২০, ১৭:২৩

ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদে হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন দেশটির নেতারা। তারা বিশ্বাস করেন যে, ইসরায়েলই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তবে এর প্রতিশোধ ‘‌ইরান যখন সঠিক সময় এসেছে বলে মনে করবে তখনই’ নেওয়া হবে। যেভাবে প্রতিশোধ নিতে চায় ইরান

ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, হঠকারী কোনও কিছু করা হবে না। প্রতিশোধ নেওয়ার সময়টা ইরান নিজেই বেছে নেবে।

এতে কোনও সন্দেহ নেই যে, ইরানের মাটিতে আক্রমণ চালিয়ে এতো গুরুত্বপূর্ণ একজন ব্যক্তিকে হত্যা করে দেশটির শত্রুরা এক বিরাট এবং অপমানজনক আঘাত হেনেছে।

শুক্রবারের হত্যাকাণ্ডটি নতুন কিছু নয়। এর আগেও চারজন ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। সেগুলোর জন্যও ইরান ইসরায়েলকেই দায়ী করেছে। এখন যে প্রশ্ন সবার মনে আসবে তা হলো, তেহরান কীভাবে এর পাল্টা জবাব দেবে? কখন দেবে? ইরানের সামরিক বাহিনী বলেছে, ‘বজ্রের মতো আঘাত হেনে‌’‌ প্রতিশোধ নেওয়া হবে।

প্রতিশোধের দাবিতে তেহরানের রাস্তায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা বিক্ষোভ করেছে। একজন বিক্ষোভকারী সেখানে বলেছেন, আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার ক্ষমতার শেষ দুই মাসে একটা 'যুদ্ধের পরিস্থিতি' তৈরি করতে চাইছেন।

ইরানের বাস্তববাদী প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানির কথাগুলো ছিল অবশ্য অনেক মেপে মেপে, হিসেব করে বলা। তিনি বলছেন, প্রতিশোধ নেওয়া হবে ঠিকই। কিন্তু হয়তো এক্ষুণি তা হবে না।

ইসরায়েলের দিকে ইঙ্গিত করে রুহানি বলেন, ‘ইরান যথাসময়ে ব্যবস্থা নেবে, ফাঁদে পা দেবে না। তারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়। কিন্তু আমরা তাদের হাতে কি তাস আছে তা বুঝে ফেলেছি। তারা সফল হবে না। কারণ ইরান জানে, পরবর্তী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইরানের সঙ্গে সংঘাত নয় বরং সংলাপ চান।‌‌‌‌’ প্রশ্নটা সেখানেই। ইরান কেন এখনই কোনও পাল্টা পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছে না?

ইসরায়েল আর যুক্তরাষ্ট্র মিলে একটা ফাঁদ পেতেছে?

বিবিসি-র বিশ্লেষক ও ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সম্পাদক এ্যালান জনস্টন বলছেন, এই সতর্কতার কারণ হলো, রুহানি মনে করেন যে ইসরায়েলের কট্টর যুদ্ধবাজরা এবং যুক্তরাষ্ট্র মিলে ইরানের জন্য একটা ফাঁদ পেতেছে।

এ্যালান জনস্টন বলেন, ‘তারা (ইসরায়েল ও ট্রাম্প প্রশাসন) চাইছে, ইরান একটা ভুল পদক্ষেপ নিয়ে বড় ধরনের সংঘাতে জড়িয়ে পড়ুক।’

জনস্টন বলছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদের শেষ কয়েকটি সপ্তাহ চলছে এখন। এই সময়টাতে সম্ভবত রুহানি বড় কোনও সংঘাত এড়াতে চাইছেন।

তিনি আশা করছেন, ট্রাম্পের বিদায়ের পর জো বাইডেন প্রশাসন দায়িত্ব নিলে ইরানের জন্য একটা অপেক্ষাকৃত ভালো সময় আসবে। হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটা যোগাযোগ এবং ইরানের ওপর আরোপিত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার সুযোগ মিলে যেতে পারে।

কিছু একটা করতে হবে

কোনও কোনও বিশ্লেষক মনে করেন, ইরানের ওপর চাপ বাড়ছে। এ বছর জানুয়ারি মাসে মার্কিন ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় জেনারেল কাসেম সোলাইমানি নিহত হওয়ার পরও ইরান প্রতিশোধের কথা বলেছিল। কিন্তু এখনও তারা সে রকম কিছু করেনি। এখন পরমাণু কর্মসূচির এতো গুরুত্বপূর্ণ একজনকে হত্যার পর মানুষের মধ্যে প্রতিশোধের স্পৃহা বেড়ে গেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক আব্বাস আসিয়ানি বলছেন, এবার হয়তো ইরানকে কিছু একটা করতে হবে। তার ভাষায়, ‘আমার মনে হয় ইরানের একটা জবাব দেওয়া ছাড়া কোনও বিকল্প নেই। তারা যদি কিছু না করে, তাহলে তারা এ রকম আরও পদক্ষেপের বিরাট বিপদ ডেকে আনবে, এমনকি ভবিষ্যতে সংঘাতও বাধতে পারে।‌‌’

বিবিসি-র বিশ্লেষক পল এ্যাডামস বলেন, বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর সঙ্গে ২০১৫ সালে তেহরানের যে চুক্তি হয়েছিল তার লক্ষ্য ছিল ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণকে একটা সীমার মধ্যে রাখা। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে ওই চুক্তি থেকে বের করে নিয়ে যাবার পর তেহরান সেই সীমা লঙ্ঘন করে ইউরেনিয়াম মজুত ও সমৃদ্ধ করা শুরু করেছে। হয়তো পরমাণু কর্মসূচির প্রধান মোহসেন ফাখরিজাদেহ-এর ওপর আক্রমণের পেছনে এটা কারণ হিসেবে কাজ করে থাকতে পারে।

তিনি বলছেন, ইরানের পুরো পারমাণবিক ইস্টাব্লিশমেন্টের প্রতি এটা একটা হুঁশিয়ারি।

মধ্যপ্রাচ্যের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ

যুক্তরাষ্ট্রের আগামী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন হয়তো চান ইরানকে আবার আলোচনার পথে নিয়ে আসতে। কিন্তু সেই কঠিন কাজকে আরও কঠিন করে দিয়েছে এই ফাখারিজাদেহ হত্যাকাণ্ড।

মার্কিন দৈনিক ওয়াশিংটন পোস্টে এক নিবন্ধে বিশ্লেষক হেনরি অলসেন বলছেন, ২০১৪ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময় ইরানের সঙ্গে শক্তিধর দেশগুলোর যে পরমাণু চুক্তি হয় - সৌদি আরব ও উপসাগরীয় রাজতন্ত্রগুলো তাতে বিচলিত হয়েছিল।

কারণ হিসেবে তিনি বলছেন, ইসরায়েল ও উপসাগরীয় রাজতন্ত্রগুলো জানে যে, ইরান তাদের ধ্বংস করতে চায়।

হেনরি অলসেন বলেন, ‘অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, ইসরায়েলের হাতে ইতোমধ্যেই পারমাণবিক অস্ত্র আছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা এবং আরব রাজতন্ত্রগুলো দীর্ঘদিন ধরেই ইরানের হুমকির হাত থেকে যুক্তরাষ্ট্র তাদের রক্ষা করবে - এই আশ্বাসের ওপর নির্ভর করতো।’ কিন্তু ইরানের সঙ্গে ২০১৫ সালের চুক্তিটি সেই আশ্বাসকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।

হেনরি অলসেন বলেন, ‘ইসরায়েল মনে করে, এ চুক্তির অর্থ হলো - কোনও একটা সংকটের মুহুর্তে এ অঞ্চলে মার্কিন সেনা মোতায়েন করা হবে এমন নিশ্চয়তা আর নেই। অন্যদিকে উপসাগরীয় রাজতন্ত্রগুলো মনে করছে, ইরানের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে এমন অন্য একটি পরমাণু শক্তিধর মিত্র তাদের দরকার।‌‌’

হয়তো সে রকম একটা হিসেব মাথায় রেখেই সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে।

কয়েকদিন আগে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও-র উপস্থিতিতে বৈঠক করেছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

ওয়াশিংটন পোস্ট-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসনের শেষ সপ্তাহগুলোতে ইরাকের মাটিতে ইরানের সঙ্গে কোনও একটা সংঘাত বেধে যায় কিনা- এমন উৎকণ্ঠার মধ্যে আছেন ইরাকের প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা আল কাদিমির সরকার।

তার ঠিক পরপরই ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যাকাণ্ড ঘটলো - যার প্রতিক্রিয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে জটিল কোনও ঘটনাপ্রবাহের সৃষ্টি হয় কিনা, তাই বোঝার চেষ্টা করছেন বিশ্লেষকরা। সূত্র: বিবিসি।

/এমপি/
সম্পর্কিত
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
সর্বশেষ খবর
ডুবন্ত শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেলো আরেক শিশুরও
ডুবন্ত শিশুকে বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ গেলো আরেক শিশুরও
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
‘ডে আফটার টুমরো’ নয়, টুডে
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
জিম্মি মুক্তির বিষয়ে আন্তরিক হলেও গাজায় আগে যুদ্ধবিরতি চায় হামাস
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
হাসিনা-তাভিসিন আন্তরিক বৈঠক, থাইল্যান্ডের সঙ্গে ৫ দলিল স্বাক্ষর
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ
রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়, হাইকোর্টের রায় প্রকাশ