অস্ট্রেলিয়ায় জাতীয় নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অস্থির কূটনৈতিক নীতি ও জীবিকার ব্যয় মাথায় রেখেই শনিবার (৩ মে) ভোট দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ানরা। ভোট গণনার প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, আলবানিজ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা ধরে রাখার দিকেই এগোচ্ছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সময় সকাল আটটায় শুরু হয় ভোট গ্রহণ। ভোটগ্রহণ শেষ হয় সন্ধ্যা ৬টায়। এবারের নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা এক কোটি ৮০ লাখ। এর মধ্যে রেকর্ড ৮০ লাখ ভোটার আগেই ভোট দিয়েছেন।
ট্রাম্পের অস্থির কূটনৈতিক নীতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকা অস্ট্রেলীয় ভোটারদের মধ্যে পরিবর্তনের প্রতি আগ্রহে ভাটা পড়েছে।
নির্বাচনের প্রধান দুই দল প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি এবং বিরোধী পিটার ডাটনের লিবারেল-ন্যাশনাল জোট।
নির্বাচনে দুই বড় দলই জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়া–সংক্রান্ত চাপের বিষয়টিকে তাদের প্রচারের কেন্দ্রে রেখেছে। তবে জনমত জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে বিশ্বজুড়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, সেটি দ্রুত অস্ট্রেলিয়ার ভোটারদের কাছে নির্বাচনী প্রচারণার প্রধান ইস্যু হয়ে ওঠে।
এর প্রধান কারণ হিসেবে অস্ট্রেলীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা বলেছেন বিশ্লেষকরা। অস্ট্রেলিয়া যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ নিরাপত্তা মিত্র। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের বাণিজ্যে ঘাটতি থাকে। এরপরও অস্ট্রেলিয়াকে ট্রাম্পের শুল্কনীতি থেকে রেহাই দেওয়া হয়নি।
ভিক্টোরিয়া রাজ্যের মেলবোর্ন শহরে দেওয়া এক বক্তব্যে আলবানিজ বলেন, ‘আমরা অস্ট্রেলিয়ার লক্ষ্যগুলো পূরণ করার কাজ চালিয়ে যেতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাস্তব মজুরি বৃদ্ধির পথে, মূল্যস্ফীতি কমে আসছে।’ এরপর ভোট দিতে তিনি নিজ জেলা সিডনির উদ্দেশ্যে রওনা হন।
আলবানিজ বলেছেন, তাঁর নেতৃত্বাধীন মধ্য-বামপন্থি সরকার এ মেয়াদে ‘খুবই শক্ত ভিত’ গড়ে তুলেছে। পাঁচ সপ্তাহের প্রচার শেষে আলবানিজ প্রতিশ্রুতি দেন দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি আবাসন সাশ্রয়ী করবেন এবং অস্ট্রেলিয়ার সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ‘মেডিকেয়ার’কে আরও শক্তিশালী করবেন।
ডাটনও তাঁর দিন শুরু করেছেন মেলবোর্নে। সেখানকার বেশ কয়েকটি আসনের ফল অনিশ্চিত। তা যেকোনো দিকেই যেতে পারে। ডাটন ‘দেশকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য’ লিবারেল-ন্যাশনাল জোটকে ভোট দিতে ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডাটন দুই দশক ধরে পার্লামেন্টে সীমান্ত নীতিতে কঠোর অবস্থান দেখানোর মধ্য দিয়ে সুনাম অর্জন করেছেন। তিনি নির্বাচনে জয়ী হলে হাজার হাজার সরকারি চাকরি কমানোর অঙ্গীকার করেছেন।
সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ডাটন দুই দশক ধরে পার্লামেন্টে সীমান্ত নীতিতে কঠোর অবস্থান দেখানোর মধ্য দিয়ে সুনাম অর্জন করেছেন। তিনি নির্বাচনে জয়ী হলে হাজার হাজার সরকারি চাকরি কমানোর অঙ্গীকার করেছেন।
তবে ট্রাম্পের উপদেষ্টা ইলন মাস্কের সরকারি সংস্থায় কর্মী ছাঁটাইয়ের মনোভাবের সঙ্গে যেন তাঁকে তুলনা না করা হয়, সে চেষ্টাও করেন ডাটন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অস্ট্রেলিয়ার ওপর শুল্ক আরোপ করার পর ডাটন পিছিয়ে পড়েন। অথচ ফেব্রুয়ারি মাসেও ডাটন জনমত জরিপে এগিয়ে ছিলেন।
শুক্রবার দ্য অস্ট্রেলিয়ান পত্রিকায় প্রকাশিত জনমত জরিপ অনুযায়ী, লেবার পার্টি ৫২ দশমিক ৫ শতাংশ ও লিবারেল ন্যাশনাল জোট ৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ ভোট পাবে।
লেবার পার্টিকে সংখ্যালঘু সরকার গঠন করতে হতে পারে বলে কয়েকটি জনমত জরিপে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।