X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

যুক্তরাজ্যে লক্ষাধিক বাংলাদেশিকে ঈদের ছুটি দেন না দেশীয় মালিকরাই

মুনজের আহমদ চৌধুরী, লন্ডন
২৬ মে ২০১৯, ১৯:০৮আপডেট : ২৬ মে ২০১৯, ১৯:৫৮

যুক্তরাজ্যে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ৬০ ভাগই রেস্টুরেন্ট ব্যবসায় সম্পৃক্ত। লক্ষাধিক বাংলাদেশি কর্মী রয়েছেন এই সেক্টরে। ঈদের দিনে নামাজ আদায়ের সময়টুকু বাদ দিলে পূর্ণদিবস কাজ করতে হয় তাদের। এজন্য ওভারটাইম কিংবা অন্য কোনও সুবিধাও দেওয়া হয় না। বাংলাদেশি মালিকরাও তাদের বঞ্চিত করেন ঈদের আনন্দ থেকে। হোটেল কর্মীদের কোনও অধিকারভিত্তিক সংগঠন না থাকায় মালিক সংগঠনগুলোও এ ব্যাপারে নিশ্চুপ। ব্রিটেনে ঈদের দিন সরকারি ছুটি না থাকাকে কারণ দেখিয়ে এই অমানবিক পরিস্থিতি চলমান রেখেছে তারা। সাপ্তাহিক ছুটির বাইরে কেবল ক্রিসমাসের দিনেই ছুটি মেলে সেখানকার বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট কর্মীদের। তাদের আকুতি, সেই ছুটি কেড়ে নিয়ে হলেও অন্তত ঈদুল ফিতরের দিনে তাদের অবসর দেওয়া হোক।

যুক্তরাজ্যে লক্ষাধিক বাংলাদেশিকে ঈদের ছুটি দেন না দেশীয় মালিকরাই

 

বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দফতর, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, ফার্মেসি, জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, ফ্যাশন হাউস, সুপার মার্কেট পর্যন্ত প্রায় সব সেক্টরের কর্মকর্তা-কর্মচারীই সেখানকার প্রচলিত শ্রম ও কর্মসংস্থান আইন অনুযায়ী বি‌ভিন্ন ছুটি পায়। সেই সঙ্গে শ্রমিক-কর্পোরেট কর্মী-ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-মন্ত্রী-ক্লিনার-কেয়ারটেকার-নিরাপত্তাকর্মী সব পেশাজীবীই গ্রীষ্মের ছয় সপ্তাহ, ক্রিসমাস, নিউ ইয়ার হলিডে আর ব্যাংক হলিডের মতো ছুটিগুলো নির্ধারিত সময়ে অথবা পরবর্তীতে ভোগ করে থাকেন। রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানস্বীকৃত এসব নাগরিক ও আইনগত অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হয় কেবল বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে কর্মরতদের। এই খাতের লক্ষাধিক শ্রমিক-ওয়েটার-কুক-শেফ-ম্যানেজার-অ্যাসিসট্যান্ট ম্যানেজার কেউই বছরের এই নির্ধারিত জাতীয় ছুটির দিনে সবেতন ছুটি ভোগ করতে পারেন না। এমনকি বছরের দুই ঈদের দিনেও ছুটি থেকে বঞ্চিত হন তারা। কেননা, ক্রিসমাসের দিন ছাড়া রেস্টুরেন্ট কখনও বন্ধ থাকে না।

রিডিং এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে শেফের কাজ করেন জাকারিয়া খান। তিনি জানান, ব্যবসা কম হওয়ার কারণে সোম-মঙ্গলবার সেখানকার রেস্টুরেন্টগুলোতে অধিকাংশ কর্মীকে সাপ্তাহিক ছুটি দেওয়া হয়। বাংলাদেশের একজন সাবেক সংসদ সদস্যের সন্তান জাকারিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এবারের ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে মঙ্গল অথবা বুধবার। মঙ্গলবার ঈদ হলে মালিকরা ইচ্ছে করলে ওই দিনটিতে রেস্টুরেন্ট বন্ধ রাখতে পারবেন।

মহসীন আহমেদ নামের আরেকজন হোটেল কর্মী বলেন, ‘ব্রিটেনে বছরে ৩৬৪ দিন রেস্টুরেন্ট খোলা থাকে। বন্ধ থা‌কে কেবল বড়‌দিনে (ক্রিসমা‌সের দিন)। ক্রিসমাসে আমাদের কাজ করতে আপত্তি নেই, তবু অন্তত রোজার ঈদে আমাদের ছুটি দেওয়া হোক।’

ব্রিটেনে ঈদের দিনটি সরকারি ছুটির তালিকায় না থাকলেও বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসসহ বারার বি‌ভিন্ন স্কুলগুলোর প্রধান শিক্ষকরা দিনটিতে অনানুষ্ঠানিকভাবে ছেলেমেয়েদের ছুটি দিয়ে থাকেন। সারা দেশেই ঈদের দিনের এই অনানুষ্ঠানিক ছুটি ভোগের সুযোগ পান সেখানে বসবাসরত প্রবাসী মুসলিমরা। ব্যতিক্রম কেবল বাংলাদেশের রেস্টুরেন্ট কর্মীরা। মালিকরা যখন ঈদের দিনে পরিবার-বন্ধু নিয়ে ঈদের আনন্দ উপভোগ করেন, হোটেলে কর্মরতরা তখন রান্নাঘরে কিংবা বারের পেছনে কিংবা ওয়েটার হিসেবে কারও খাবার পরিবেশন করে দিন পার করেন। ঈদের আনন্দ তাদের কাছে কেবলই বাংলাদেশে রেখে যাওয়া স্মৃতি।

বিচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশি রেস্টুরেন্ট কর্মীরা বহুদিন ধরেই ঈদের ছুটির দাবি জানিয়ে আসছেন। তবে নিজেদের কোনও সংগঠন না থাকায় সম্মিলিতভাবে এই দাবি প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি তারা। চাকরি চলে যাওয়ার ভয়ে তারা প্রতিবাদ জোরালো করতেও পারেনি।

দক্ষিণ-পশ্চিম লন্ডনের একটি টেকওয়ের মুল শেফ আবু তাহের ক্ষোভ প্রকাশ করে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, 'পূর্ণ একটি মাস রোজা রেখে যখন আনন্দের ঈদ আসে তখন মালিক আমাদের ছুটি দেয় না। শুধু নামাজের সময়েই ছুটি মেলে। ছেলেমেয়ে নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে পারি না। রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের মধ্যে একতা নেই বলেই মালিক পক্ষ ঈদের ছুটি থেকে আমাদের বঞ্চিত করতে পারেন।'

প্রবীণ কমিউনিটি নেতা কে এম আবু তাহির চৌধুরী বলেন, প্রতি বছর ঈদের আগে এ নিয়ে কথা ওঠে। তবে সুরাহা হয় না। এজন্য দুই পক্ষের সংলাপ জরুরি। তবে সমস্যা হলো, ব্রিটেনে রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের কোনও সংগঠন নেই। ঐক্যবদ্ধ কোনও প্লাটফর্ম না থাকাটাই তাদের দাবি আদায়ের পক্ষে সবথেকে বড় বাধা।

রেস্টুরেন্ট কর্মীদের অধিকার প্রশ্নে লন্ডনে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে ফ্রেন্ডস হেল্পিং সোসাইটি। ঈদের ছুটির দাবিতে মানববন্ধন ও সচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়ে আসছে তারা। সংগঠ‌নের সহ-সভাপ‌তি সাংবা‌দিক সাইদুল ইসলাম বলেন, ঈদের দিনে ছুটি পাওয়া প্রত্যেক মুসলমানের ধর্মীয়, নাগরিক, আইনি ও মানবিক অধিকার। তবে ব্রিটেনের মতো দেশেও এশিয়ানদের মালিকানাধীন রেস্টুরেন্টে দিনের পর দিন নানা অজুহাতে এই ছুটি থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে। তার মতে, বিশেষ করে বাংলাদেশি মালিকদের ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টগুলোতে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ওই আন্দোলনে সম্পৃক্ত লন্ডন প্রবাসী আবু তাহের আজিজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মা‌লিকদের সংগঠনগু‌লো সম্মিলিতভবে ঈদের দিনটি ছুটি ঘোষণা না করলে কর্মীদের অধিকার কখনও নিশ্চিত হবে না।

ঈদের দিনটিকে ছুটি ঘোষণার দাবি প্রতিষ্ঠায় বি‌ভিন্ন সামাজিক সংগঠন দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে এলেও মালিকদের টনক নড়েনি। বিভিন্ন মা‌লিক সংগঠন এ ব্যাপারে কথা বলতেই নারাজ। সেখানকার মালিকদের সর্ববৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশন, ইউকে’র সভাপতি মোস্তফা কামাল ইয়াকুব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ঈদের দিন রেস্টুরেন্ট খোলা থাক‌লেও কর্মীরা বিকাল পর্যন্ত অনেক ক্ষেত্রেই ছুটি ভোগ করতে পারেন। ছুটির ব্যাপারে মালিক সংগঠনগুলোর দিক থেকে কোনও বাধ্যবাধকতা না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা বন্ধ রাখার পরামর্শ দিচ্ছি। কেউ বন্ধ রাখলে স্বাগত জানা‌চ্ছি। তবে জোর করার ক্ষমতা আমাদের নেই।’

মা‌লিক সংগঠনের নেতা ফরহাদ হোসেন টিপু বলেন, ‘ব্রিটেনে ঈদের দিন সরকারি ছুটি নেই। দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণার জন্য কয়েক বছর ধরে চেষ্টা চলমান রয়েছে। সে‌ই দাবি বাস্তবায়িত হলে দিনটিতে রেস্টুরেন্ট মালিকরাও কর্মীদের ছুটি দিতে বাধ্য হবেন।’

/বিএ/আপ-এএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
ভারতীয় পর্যটন প্রচারের আকর্ষণ এখন ব্রিটিশ এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান
ব্রিটেনে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে নিষিদ্ধের অনুমোদন
ব্রিটিশ বিমানঘাঁটিতে অনুপ্রবেশ, ৪ ফিলিস্তিনপন্থির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন
সর্বশেষ খবর
ইরানি তেল বাণিজ্যে আবারও আঘাত যুক্তরাষ্ট্রের
ইরানি তেল বাণিজ্যে আবারও আঘাত যুক্তরাষ্ট্রের
ফুটবল খেলার সময় বজ্রাঘাতে স্কুলশিক্ষার্থীর মৃত্যু
ফুটবল খেলার সময় বজ্রাঘাতে স্কুলশিক্ষার্থীর মৃত্যু
বাংলাদেশের মেয়েদের গোলের মালা পরালো জাপান
বাংলাদেশের মেয়েদের গোলের মালা পরালো জাপান
অমিতাভ বচ্চনের দেয়ালে জয়া আহসানের ট্রেলার!
অমিতাভ বচ্চনের দেয়ালে জয়া আহসানের ট্রেলার!
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড