ব্রিটেনে মুদ্রাস্ফীতি গত ত্রিশ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। নিত্যপণ্যের উচ্চমূল্য ভোক্তাদের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। এ পরিস্থিতিতে সুদের হার আরেক দফা বাড়ানোর চাপে রয়েছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড। এই ফেব্রুয়ারি মাসেই বর্ধিত সুদের হার কার্যকর করতে পারে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্রিটেনের জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয়ের সবশেষ হিসেবে দেখা গেছে, করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঝুঁকিতে ছিলেন দেশটিতে বসবাসরত বাংলাদেশিরা। ১৩ জুন ২০২১ থেকে শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশ পুরুষ ও নারীদের তুলনায় ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ভাইরাসের ঝুঁকি ছিল যথাক্রমে ৪.৪ এবং ৫.২ গুণ বেশি। সব মিলিয়ে প্রায় ৯ লাখ মানুষের ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটি এখন সংকটে রয়েছে।
লন্ডনের ক্রয়োডনের ব্রিটিশ বাংলাদেশি ব্যবসায়ী মেহেদী মাসুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, করোনার দুই ডোজ টিকা ও বুস্টার ডোজ নেওয়ার পরও ব্রিটেনে বাংলাদেশি কমিউনিটির ঘরে ঘরে করোনা রোগী। স্কুলেও শিশু শিক্ষার্থীরা সংক্রমিত হচ্ছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, ব্রিটেনে আর্থিকভাবে সবচেয়ে সংকটের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশিরা। জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে গিয়ে দেশটিতে বাংলাদেশি ও সোমালীয় কমিউনিটির মানুষের মধ্যে অভাব ও দরিদ্রতা এখন রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে।
পূর্ব লন্ডনের বাঙালি পাড়ার ব্যবসায়ী বাংলাদেশি শফিকুর রহমান বলেন, কমিউনিটিতে জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহের সংকট দিন দিন বাড়ছে। মানুষের হাতে খরচের পর্যাপ্ত অর্থ নেই।
পূর্ব লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল এলাকার মার্কেটে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশি কমিউনিটির ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেন বাংলা ট্রিবিউনের এ প্রতিবেদক। সেখানকার এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘ব্রিটেনে করোনা মহামারি কমেছে, কিন্তু আর্থিক মহামারি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। ব্রিটেনের মতো দেশে বসবাস করে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই পরিবার, স্ত্রী, সন্তানের খাবার, কাপড় কেনা বা গ্যাসের বিল মেটানোর অর্থের অভাব বলতে বিব্রতবোধ করেন।’
এ প্রসঙ্গে সৈয়দা শাহনাজ নামে এক কর্মজীবী নারী বলেন, দেশটিতে গত ৫০ বছরের মধ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম এত বেশি ছিল না। কর্মজীবী নারী ও কবি নুরজাহান শিল্পী ট্রিবিউনকে বলেন, করোনা মহামারি বৈশ্বিক মহামন্দায় জনজীবনে অর্থনৈতিক বিপর্যয়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আয় রোজগারে প্রভাব, বেকারত্ব বৃদ্ধিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে।
এখানকার বাংলাদেশি কমিউনিটি দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটেনের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বলে সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দেশটির সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজ। প্রতিবেদনে এসেছে, বাংলাদেশি ও সোমালিয়ান কমিউনিটির পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতির দিকে।
ইউকে-বাংলা প্রেসক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফখরুল ইসলাম খছরু বলেন, বাঙালির এখনও মূল ব্যবসা রেস্তোরাঁ। ব্রিটেনের রেস্তোরাঁগুলো করোনার ধকল কাটিয়ে উঠতে পারেনি।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের সাবেক ডেপুটি মেয়র অহিদ আহমদ জানান, করোনায় ব্রিটেনে সংখ্যালঘু ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী কমিউনিটিগুলোর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কমিউনিটি বাংলাদেশি। পরিস্থিতি উত্তরণে সময় লাগবে বলে মনে করেন তিনি।