এক সময় ব্রিটেন প্রবাসীরা দেশেই কোরবানি দিতেন। কিন্তু গত কয়েক বছরে বিলেতের দশ লাখ বাংলাদেশি বহুল কমিউনিটিতে স্থানীয়ভাবে কোরবানি দেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। সন্তানদের কোরবানির ত্যাগের দীক্ষার বিষয়টি শেখাতেই প্রধানত স্থানীয়ভাবে কোরবানির দিকে ঝুঁকছেন প্রবাসীরা।
বিলেতে এখন বাংলাদেশি বহু পরিবারের চতুর্থ প্রজন্ম চলছে। কোরবানির মাংস নিজের ভাই বোনের বাড়ি, অনেকে ছেলে-মেয়ের শ্বশুড়বাড়িতেও পাঠাচ্ছেন। তবু দেশের ঈদের উৎসবমুখরতার অভাববোধ করার বেদনা রয়েছে প্রবাসীদের।
ব্রিটেন প্রবাসীদের অনেকে আফ্রিকার বিভিন্ন দরিদ্র দেশে দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে কোরবানি দিয়ে থাকেন। কিন্তু এবার বাংলাদেশের বন্যা কবলিত নিজ দেশের মানুষদের জন্য দেশে কোরবানি দেওয়ার জন্য প্রবাসীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন বাংলাদেশি কমিউনিটির বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ।
রয়েল লন্ডন হাসপাতালে কর্মরত ফারজানা আফরোজ বলেন, দেশে ঈদ উদযাপনে আনন্দের সেই আবহ এখানে পাওয়া যায় না। তবু আমরা যতটুকু সম্ভব ভালোভাবে ঈদ পালনের চেষ্টা করি। ঈদের দিন বিভিন্ন ধরনের রান্না করি, কেনাকাটা তো করি। একটু ভিন্ন প্রক্রিয়ায় কোরবানিও দেওয়া যায়।
কনজারভেটিভ পার্টির সংগঠক সৈয়দা শাহনাজ শাহিমা বলেন, দেশে ও বিদেশে ঈদ উদযাপনের অনেক পার্থক্য। দেশে ঈদের উৎসবের যে আমেজ থাকে তা এখানে পাওয়া যায় না। আমাদের পরিবারের প্রায় সবাই এখানে থাকেন। তবু দেশে ঈদের দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ে। এখানে কাজে যেতে হয়। ঈদের দিন কী আর কাজের দিন কী– তা আলাদা করা যায় না। এদেশে বাচ্চারা কোরবানির ঈদটা বুঝতেই পারে না। দোকান থেকে যেমন মাংস নিয়ে আসি, কোরবানিটাও তেমন হয়ে যায়। মাংস বণ্টনের বিষয়টিও তারা দেখতে পারে না, বুঝতে পারে না।
ব্যবসায়ী ফয়েজ উল্লাহ বলেন, ঈদে নামাজ পড়ি, কোরবানি দেওয়া হয়। দেশে ঈদগাহে নামাজ পড়া, কোলাকুলি, অনেক দিন পর সবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের যে আনন্দ তা এখানে পাওয়া যায় না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সিনেট সদস্য নসরুল্লাহ খান জুনায়েদ বলেন, ব্রিটেনে এখন বাংলাদেশিদের চতুর্থ প্রজন্ম চলছে। আমরা এখানে মসজিদে ঈদের নামাজ পড়ি একসঙ্গে। একে অপরের বাসায় বেড়াতে যাই। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে অনেক আয়োজন হয়। সব মিলিয়ে একটা ঈদের আমেজ পাওয়া যায়। কোরবানির ব্যবস্থা রয়েছে। আগে অনেকটা অসুবিধা ছিল। কিন্তু এখন অনেকগুলো অনুমোদিত কোরবানি ব্যবস্থাপনা কোম্পানি হয়েছে। এখানকার অনেকেই বাংলাদেশ ছাড়াও বিভিন্ন অভাবগ্রস্ত দেশে কোরবানি দিয়ে থাকেন। এবার দেশে ভয়াবহ বন্যার কারণে আমি অনুরোধ করব সবাইকে দেশে কোরবানি দেওয়ার জন্য।
ইউকে-বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি কেএম আবু তাহের চৌধুরী বলেন, আমরা এখন ব্রিটেনে ঈদ উদযাপন করি, অতীতে বাংলাদেশেও করেছি। দেশে ঈদ উদযাপন করা খুব আনন্দের। বাংলাদেশে দলবেঁধে ঈদগাহে গিয়েছি, ঈদের নামাজ পড়েছি, পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়িতে গিয়েছি। এখানে বাংলাদেশের ঈদের আনন্দগুলো সীমিত। এখানে ঈদগাহ নেই। ঈদের নামাজ পড়ি মসজিদে। সম্প্রতি পার্কে ঈদের নামাজের আয়োজন করা হচ্ছে। এটি আমাদের অনেকটা আনন্দ দেয়।
তিনি আরও বলেন, আমরা এখানে কোরবানি দেই মূলত সন্তানদের কোরবানির শিক্ষা দিতে। কীভাবে কোরবানি দিতে হয়– তা যেন তারা শিখে। আমি অনুরোধ করব, সবাই যেন দেশেও কোরবানি দেন। এতে করে দেশের বন্যা কবলিত মানুষের উপকার হবে।