X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৫ বৈশাখ ১৪৩১

‘তারা চেয়েছিল একটা লাশ’

তাসকিনা ইয়াসমিন
১৬ আগস্ট ২০১৮, ০২:১২আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০১৮, ১৮:৩৯

হাসপাতালের বেডে আরাফাতুল ইসলাম বাপ্পি (ছবি- তাসকিনা ইয়াসমিন) দুর্বৃত্তদের হামলায় একটি চোখ নষ্ট হয়ে যাওয়াকে নিজ দলের জন্য ত্যাগ বলেই মনে করছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আরাফাতুল ইসলাম বাপ্পি। সোমবার (১৩ আগস্ট) জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কেবিনে শুয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে এ কথা বলেন বাপ্পি। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট তিনি হামলার শিকার হন।

তিনি দুঃখ করে বলেন, ‘সামনে তো জাতীয় নির্বাচন, তারা চেয়েছিল একটা লাশ; তাহলে তারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে পারত। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ব্যাগের মধ্যে চাপাতি এসব কিছু ছিল না। আমি নিজে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মাথায় হাত বুলিয়ে বুঝিয়েছি। তারা আমার-আমাদের কথা মেনে নিয়েছে, এরপরই পেছন থেকে হামলা করা হয়েছে।’

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ওদের আন্দোলন তো যৌক্তিকই ছিল। আমি ওদেরকে বলেছি, তোমাদের দাবির সঙ্গে আমরাও একমত। নিরাপদ সড়কের জন্য যে আন্দোলন হয়েছে, এটা তো সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন না। এটা একটা অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলন। আন্দোলনের মধ্যেই শিক্ষার্থীদের ভুল বোঝানো হয়েছে। ওইখানে খুব সূক্ষ্মভাবে সরকারের বিরুদ্ধে উসকে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।’

বাপ্পি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি মনের দিক থেকে সবসময় সবল ছিলাম। আল্লাহ সবাইকে দিয়ে ত্যাগ করায় না। আমার মনে হয়, এটা আমার দলের জন্য একটি ত্যাগ।’

নিরাপদ সড়কের দাবিতে কিশোরদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ৪ আগস্ট চার শিক্ষার্থী হত্যা ও কয়েকজন ছাত্রীকে আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতনের ‘গুজব’ ছড়িয়ে পড়ে। এই গুজবকে কেন্দ্র করে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে হামলার অভিযোগ ওঠে। এ সময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে।

আরও পড়ুন: আহত আ.লীগ কর্মীদের দেখতে চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে প্রধানমন্ত্রী

বাপ্পি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমি ভেঙে পড়লে আম্মু ভেঙে পড়বে, তাই আমি সতর্ক রয়েছি। জীবন তো থেমে থাকে না। যদি আল্লাহ না করে যে আমার চোখটা ঠিক হলো না, তাই বলে আমার জীবনের কোনও কিছুই থেমে থাকবে না। আমার চেয়ে বেশি টেনশনে রয়েছেন আমার আম্মা নাজমা বেগম (৪৫)। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্বস্ত করাতে এখন কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমার চিকিৎসার জন্য যা কিছু করা দরকার, তিনি করবেন।’

নিজের পরিবারের প্রসঙ্গে বাপ্পি বলেন, ‘আমি একা, আমার একটি ছোট বোন আছে। তারও বিয়ে হয়ে গেছে। আমার বাবা ১৯৯৫ সালে মারা গেছেন। পরিবারে আমিই প্রধান। তাই আমার পরিবারের অভিভাবক আমি। এখন আমি অসুস্থ। আমার মা এটা মেনে নিতে পারছেন না।’

স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা আরাফাতুল ইসলাম বাপ্পি আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তির পর তাকে দেখতে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন বাপ্পি। তার নিজ এলাকার সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

বাপ্পি বলেন, ‘আমার এখানকার সমস্ত চিকিৎসা সরকারিভাবেই হচ্ছে। প্রথম দিনেই আমার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে, প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে। ইনিশিয়াল ট্রিটমেন্ট দিয়েছেন চিকিৎসকরা। কিন্তু মেইন ট্রিটমেন্ট এখনও শুরু হয়নি। প্রধানমন্ত্রী সব ধরনের সহায়তার কথা বলেছেন। প্রয়োজনে দেশের বাইরে নিয়েও চিকিৎসার নির্দেশ দিয়েছেন।’

হাসপাতালে উপস্থিত বাপ্পির ছোট বোনের স্বামী গাজী মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আঘাতের কারণে ওর চোখের আইবল বের হয়ে এসেছিল। সেটা চিকিৎসকরা চোখে ঠিকমতো বসিয়ে দিয়েছেন। ভারতে যাওয়ার পর আবার তার চোখে অস্ত্রোপচার করা হবে। চোখটা যেন জীবিত থাকে তাই ড্রপ ও ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। চোখে যেন আলোটা বুঝতে পারে।’

গাজী মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান জানান, কাগজপত্র রেডি করা হচ্ছে। সব ঠিক থাকলে আগামী সপ্তাহে ভারতে নিয়ে যাওয়া হবে।

প্রাণচঞ্চল স্বেচ্ছাসেক লীগ নেতা বাপ্পি এ কয়দিন হাসপাতালের থাকার কষ্ট উল্লেখ করে বলেন, ‘হাসপাতালে শুয়ে বসে থাকতে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছে। ভাই, বন্ধু ওরাই সব। আমার বংশে এখন আমিই একমাত্র পুরুষ সদস্য। বন্ধুদের মধ্যে দু-একজন এক বেলায় আর অন্যরা বাকি সময় পাশে থাকেন। ভাই, বন্ধুরাই সবকিছু দেখভাল করেন।’

আহত হওয়ার ঘটনার বর্ণনা করতে গিয়ে দীর্ঘশ্বাস টেনে বাপ্পি বলেন, ‘পার্টি অফিসে লাশ এসেছে, এমন গুজব ছড়িয়েছিল। ছাত্রছাত্রীদের পার্টি অফিসে নির্যাতন করা হচ্ছে, এমন গুজবও ছড়ানো হয়। যারা বিরুদ্ধ পক্ষ, তারা চেয়েছিল একটা লাশ। একটা লাশ ফেললেই অনেক মানুষ মারা যেতে পারত। হয়তবা আল্লাহ আমাকে আহত  করে সবাইকে সেভ করে দিয়েছে। এতেই আমি শুকরিয়া করি।’

বাপ্পি বলেন, ‘সেদিন কিন্তু অনেকবার পার্টি অফিসে হামলা করেছে। আমরা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের বুঝিয়েছি। তারা একাত্মতা প্রকাশ করেছে। যখন আমরা ওদের বোঝাচ্ছিলাম তখন পেছন থেকে ছাত্রদল-শিবিরের নেতাকর্মী ছিল, তারাই হামলা করেছে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা আমাদের সেভ করেছে বলেই আমরা জানে বাঁচছি। আমরা তখন ১৪-১৫ জন ছিলাম। দুটো টিম করে বাচ্চাদের সঙ্গে কথা বলছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল, বাচ্চাদের ওপর কোনও ধরনের আঘাত করা যাবে না। আমরা বোঝানোর চেষ্টা করেছি। ওরা যখন আশ্বস্ত হয়েছে, এরপরই আমার এই ঘটনা ঘটেছে।’

 

/টিওয়াই/এনআই/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কবিগুরুর  ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী: গঠিত হলো সোসাইটি, দেশজুড়ে বর্ণিল আয়োজন
কবিগুরুর ১৬৩তম জন্মজয়ন্তী: গঠিত হলো সোসাইটি, দেশজুড়ে বর্ণিল আয়োজন
প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণ শুরু
প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণ শুরু
পিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালে ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগপিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালে ডর্টমুন্ড
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
সর্বাধিক পঠিত
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি
শেখ হাসিনাই হচ্ছেন ভারতে নতুন সরকারের প্রথম বিদেশি অতিথি