X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন বছরে স্বাস্থ্য খাতে যত চ্যালেঞ্জ

জাকিয়া আহমেদ
০১ জানুয়ারি ২০২২, ২০:৫৯আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২২, ১৫:১৩

২০১৯ সালের শেষ নাগাদ চীনের উহানে শনাক্ত হয় করোনাভাইরাস। এরপর ২০২০ সালের ৮ মার্চে বাংলাদেশে প্রথম তিন জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর করোনায় আক্রান্ত প্রথম রোগীর মৃত্যুর কথা জানায় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। সেই থেকে দেশে করোনা মহামারির শুরু। আশঙ্কা ছিল শীতে এর প্রকোপ বাড়বে। যদিও তখন করোনার প্রকোপ কমে  আসে। এরপর সেটি বাড়তে থাকে ২০২১ সালের মার্চ নাগাদ।

এরপর গত বছরের মধ্য জুন থেকে আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত  ডেল্টার বিধ্বংসী রূপ দেখতে হয়েছে দেশকে। এই সময়ের মধ্যেই করোনা মহামারিকালে একদিনে সর্বোচ্চ ২৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে, একদিনে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জন রোগী শনাক্ত হয়। শনাক্তের হার ওঠে ৩২ শতাংশে।

সেপ্টেম্বর নাগাদ ধীরে ধীরে ডেল্টার প্রকোপ কমে এলেও এখন আবার চোখ রাঙাচ্ছে করোনা। স্বাস্থ্যবিধি না মানার চলমান প্রবণতার সঙ্গে যোগ হয়েছে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। যা কিনা বিশ্বকে আতঙ্কগ্রস্ত করেছে। ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপে বাধ্য হয়েছে।

করোনা পরিস্থিতির শুরুতে দেশের স্বাস্থ্য খাতের এক ভয়াবহ রুগ্ন অবস্থা দেখেছে দেশবাসী। হাসপাতাল তৈরি ছিল না, হাসপাতালে বেড ছিল না, আইসিইউ ছিল না, অক্সিজেন ছিল না। তবে ধীরে ধীরে সেখানে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। সেইসঙ্গে করোনাকালে স্বাস্থ্যের দুর্নীতি ছিল পুরো বছর জুড়ে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা স্বাস্থ্য খাতের ভঙ্গুর চিত্র চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। আগামী বছরের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো এবং সেই বাজেটের যথাযথ প্রয়োগ করাই হবে প্রধান কাজ। কোনও মানুষকে চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে এসে ফিরে যেতে না হয়— সে ব্যবস্থা করতে হবে।

শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘নতুন বছর স্বাস্থ্যের জন্য, স্বাস্থ্য খাতে ভগ্নচিত্র না দেখতে চাইলে এখানে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হবে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে মহামারি মোকাবিলা। স্বাস্থ্যের কোনদিকে নজর দিতে হবে সেটা আমরা এই মহারিতেই দেখেছি। সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে আর দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে সবার আগে’।

করোনাকালে আমাদের ভুলগুলো চোখের সামনে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, করোনাকে কেন্দ্র করে দেশে অনেক ল্যাব প্রতিষ্ঠা হয়েছে। সেগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।  দেশের মানুষ এখন যেখানে বেসরকারিতে হাজার হাজার টাকা খরচ করে পরীক্ষা করাতে হয়, সেখান থেকে রেহাই পাবে।

ডা. জাহিদুর রহমান বলেন, দেশের হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করতে হবে। যন্ত্রপাতি কমসহ নানা হয়রানির ভেতর দিয়ে মানুষকে যেতে হয়েছে। সেইসঙ্গে প্রশাসনিক দুর্বলতার চিত্র দেখা গেছে।

মহামারি মোকাবিলায় আরেকটি বিষয়ের দিকে নজর দেওয়া দরকার জানিয়ে জাহিদুর রহমান বলেন, টিকা উৎপাদনে যেতে হবে। ভারত যদি টিকা উৎপাদন করতে পারে তাহলে আমরা কেন পারবো না?

করোনার সংক্রমণ কিছুটা কমে এসেছে, সেইসঙ্গে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করতে যতটা প্রয়োজন ততটা জেনোম সিকোয়েন্সিং করা হচ্ছে না কবলে মন্তব্য করেন কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ওমিক্রনের শনাক্ত কতজন সেটা সঠিকভাবে রিপোর্টেড হচ্ছে না। প্রকৃত চিত্র বোঝা যাচ্ছে না। তার ফলে চলতি মাসে ওমিক্রনের ব্যাপক বিস্তৃতি দেখা যেতে পারে। এটা নতুন বছরের বড় চ্যালেঞ্জ।

আবার বাংলাদেশে টিকাদান কার্যক্রমে আমরা অনেকখানি সক্ষম হলেও কিন্তু পুরোটা সেফটি নেটওয়ার্কের মধ্যে সেটা আনা যায়নি বা আনতে পারিনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, যার ফলে বাংলাদেশ থেকে যে কোনও নতুন ভ্যারিয়েন্টের উৎপন্ন হবার সম্ভাবনা থেকে যাবে- এটা অনেক বড় সমস্যা হবে বলে আমি মনে করি। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে সার্বিকভাবে স্বাস্থ্যের ‘সার্ভিস ডেলিভারি সিস্টেম’।

স্বাস্থ্যের এই ডেলিভারি সিস্টেম দেশে এখনও সন্তোষজনক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য অনেক অনেক বড় চ্যালেঞ্জ মন্তব্য করে অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান বলেন, এখানে স্বাস্থ্যসেবা, রেফারেল সিস্টেমকে দাঁড় করাতে পারিনি। রোগীদের ‘হেলথ ইনস্যুরেন্স’ করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটা করা যায়নি। সেইসঙ্গে করোনা সংক্রান্ত আরেকটি সমস্যা হবে, করোনামুক্ত হয়েও পোস্ট কোভিড যে সমস্যাগুলো হচ্ছে সেটাও অনেক বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেবে।  ‘অটো ইমিউন’ ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য খাতে বড় চাপ সৃষ্টি করার আশঙ্কাও থেকে যাবে বলে মনে করছি। 

স্বাস্থ্যের দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য যে ম্যাকানিজম তৈরি করা উচিত সেই ম্যাকানিজম এখনও তৈরি হয়নি। ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সম্পৃক্তদের যখন যোগ্যতা না থাকার পরও ‘চুজ অ্যান্ড পিক’ করা হয় তখন সেটা অনেক বড় ভ্যাকুয়াম তৈরি করে পুরো সিস্টেমের ওপর। এদিকে নজর না দিলে দুর্নীতি বন্ধ হবে না। দুর্নীতি বন্ধ করাটাও স্বাস্থ্যের একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলেন অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান। তার মতে, রিওয়ার্ড এবং পানিশমেন্ট-দুটোরই অনেক অভাব দেশে, এই দুটো সমন্বিতভাবে ব্যবস্থা না থাকলে দুর্নীতির লাগাম টানা যাবে না।

/এমআর/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রথম ধাপের প্রার্থীদের ৫৬ শতাংশই ব্যবসায়ী: টিআইবি
উপজেলা নির্বাচনপ্রথম ধাপের প্রার্থীদের ৫৬ শতাংশই ব্যবসায়ী: টিআইবি
বিজেপি ও তৃণমূলের মাথাব্যথা এখন কম ভোটার উপস্থিতি
লোকসভা নির্বাচনবিজেপি ও তৃণমূলের মাথাব্যথা এখন কম ভোটার উপস্থিতি
দিনে টার্গেট, রাতে ট্রান্সফরমার চুরি করতে লাগে ২০-২৫ মিনিট
দিনে টার্গেট, রাতে ট্রান্সফরমার চুরি করতে লাগে ২০-২৫ মিনিট
আওয়ামী লীগ এখন শূন্য মুড়ির টিন: রিজভী
আওয়ামী লীগ এখন শূন্য মুড়ির টিন: রিজভী
সর্বাধিক পঠিত
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
অভিযোগের শেষ নেই মাদ্রাসায়, চলছে শুদ্ধি অভিযান
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র