ঘূর্ণিঝড় ‘রেমেল’ মোকাবিলায় উপকূলীয় এলাকায় প্রস্তুতি রাখার নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। শনিবার (২৫ মে) বিকালে অনলাইনে জরুরি বৈঠক করে পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রাখার নির্দেশনা দেন অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম। এ সময় ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ১১টি নির্দেশনা দেওয়া হয়।
অধিদফতরের সভার নথি থেকে জানা যায়, সভার শুরুতে মহাপরিচালক স্বাস্থ্য অধিদফতর ও এর নিয়ন্ত্রণাধীন স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ঘূর্ণিঝড়কেন্দ্রিক প্রস্তুতি ও প্রয়োজনীয় চাহিদার ব্যাপারে জানতে চান। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা তাদের প্রস্তুতির ব্যাপারে মহাপরিচালককে অবগত করেন।
মহাপরিচালক সভায় সংযুক্ত কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেন। তিনি মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের স্বাস্থ্য অধিদফতরের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা, বিকল্প বৈদ্যুতিক ব্যবস্থাপনা তৈরি রাখা, মোবাইল যোগাযোগ নিরবিচ্ছন্ন রাখা এবং প্রয়োজনীয় ওষুধের বাফার স্টক প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেন।
পাশাপাশি তিনি অধিদফতরের কর্মকর্তাদের উপকূলীয় হাসপাতালগুলোর যেকোনও চাহিদা তাৎক্ষণিকভাবে পূরণের নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা ও নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থাও নিশ্চিত করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি আরও জানান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন দেশের বাইরে থেকে সার্বক্ষণিক খোঁজ নিচ্ছেন ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।
সভায় নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো হলো-
১. জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রাখতে হবে। জরুরি বিভাগে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ করতে হবে।
২. খাবার স্যালাইনসহ জরুরি প্রতিরোধ ও প্রতিষেধক ওষুধ ও উপকরণ উপকূলবর্তী জেলায় পর্যাপ্ত মজুত রাখতে হবে।
৩. প্রয়োজনীয় সংখ্যক পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এবং সাপে কামড় দেওয়া রোগীর জন্য অ্যান্টিভেনম মজুত রাখতে হবে।
৪. উপকূলবর্তী এলাকায় মাঠকর্মীদের (স্বাস্থ্য পরিদর্শক, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক, স্বাস্থ্য সহকারীসহ অন্যান্য) মাধ্যমে নিয়মিত পরিদর্শন এবং সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
৫. কমিউনিটি ক্লিনিক, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে হবে।
৬. যেকোনও দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনে কর্মকর্তা/কর্মচারীর নৈমিত্তিক ছুটি বাতিলসহ প্রতিষ্ঠান প্রধান ও চিকিৎসকদের কর্মস্থলে অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। এই সময়ে মাঠ পর্যায়ের সব কর্মকর্তাদের যেকোনও ট্রেইনিং কয়েকদিন পিছিয়ে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী সময়ে আয়োজন করতে হবে।
৭. ২৫ মে রাতে চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের সব পর্যায়ের স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করার নির্দেশনা প্রদান করতে হবে।
৮. স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলোর অ্যাম্বুলেন্সগুলো প্রয়োজনীয় জ্বালানিসহ প্রস্তুত রাখতে হবে। যেসব স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানে ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স সচল আছে, সেসব ওয়াটার অ্যাম্বুলেন্স মেডিক্যাল টিম এবং প্রয়োজনীয় জ্বালানিসহ প্রস্তুত রাখতে হবে।
১০. স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সার্বক্ষণিক চালু রাখতে হবে। (নিয়ন্ত্রণ কক্ষের জরুরি হটলাইন নম্বর ০১৭৫৯১১৪৪৮৮)
১১. সর্বোপরি সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি ও সতর্কতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারে।
সভায় সব কর্মকর্তাকে দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত রাখার জন্য কাজ করে যাওয়ার আহ্বান জানান মহাপরিচালক।