যেখানে সেখানে পশু কোরবানি না করে এক স্থানে ৫০০ পশু কোরবানির আয়োজন করেছিল ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। তবে ডিএনসিসির সেই উদ্যোগে সাড়া দেয়নি এলাকাবাসী।
সোমবার (১৭ জুন) ডিএনসিসির আওতাধীন ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মিরপুর প্যারিস রোড সংলগ্ন শেখ ফজলুল হক মনি মাঠে এই আয়োজন করা হয়। এক স্থানে ৫০০ গরু কোরবানির এই বিশাল কর্মযজ্ঞ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিল নগর কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর। প্যারিস রোড ছাড়া ৭ নম্বর ওয়ার্ডেও এইবার প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে এক স্থানে একাধিক পশু কোরবানির আয়োজন করা হয়।
প্যারিস রোডের শেখ ফজলুল হক মনি মাঠ সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ডিএনসিসির পক্ষ থেকে প্রস্তুত রাখা হয় ৭০০ লিটারের দুটি পানির ভ্যান, দুটি ভ্রাম্যমাণ টয়লেট। এছাড়াও বর্জ্য পরিষ্কারের জন্য ছোট পিকআপ, মাঠ থেকে মাংস বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য কয়েকটি ভ্যান প্রস্তুত রাখা হয়ে। মাঠ জুড়ে ছোট ছোট ময়লার বক্সও রাখা হয়। কোরবানি করতে আসা মানুষদের জন্য তেরপল কেটে রাখা হচ্ছিলো যার ওপর রেখে পশুর মাংস কাটাকাটি করা যাবে।
৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী জহিরুল ইসলাম মানিকের পক্ষ থেকে কোরবানি দিতে আসা মানুষদের জন্য মাঠের দুই পাশে বিনামূল্যে লেবুর শরবত পানের ব্যবস্থাও করা হয়। দুপুরে খাবারের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
এমনকি নগরবাসীকে উৎসাহ দিতে প্যারিস রোড মাঠে কোরবানি দিতে আসলে প্রতিটি পশুর জন্য এক হাজার টাকা প্রণোদনা দেওয়ার ঘোষণা দেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
এতসব আয়োজনের পরেও এলাকাবাসীর সারা মেলেনি। সকাল থেকে দুপুর নাগাদ অপেক্ষা করে দেখা যায়, তিনটি গরু এই মাঠে কোরবানি করেন কয়েকজন। মাঠের বাইরে সড়কের ওপর কোরবানি করা হয় পাঁচ-ছয়টি গরু। বাকি সবাই নিজ নিজ বাসার সামনেই পশু কোরবানি করেছেন।
এবিষয়ে মাঠে উপস্থিত কাউন্সিলর জহিরুল ইসলাম মানিক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। স্থানীয় বাসিন্দাদের আমরা গিয়ে গিয়ে বলেও এসেছি। তবুও তারা যদি সচেতন না হয় আমরা তো আর জোর করতে পারছি না। তবে ধীরে ধীরে মানুষ সচেতন হবে বলে মনে করেন তিনি।
স্থানীয়রা মাঠে গিয়ে কোরবানির দেওয়ার নানা অসুবিধার কথা বলছেন। তারা বলেন, উদ্যোগ ভালো। কিন্তু মাঠটি বালির হওয়ায় এখানে কোরবানি দিলে স্থানটি কাদা হয়ে যাবে।বালি পশুর মাংসে লাগবে। এছাড়া মাঠটি নরম হওয়ায় কাটাকুটিতে সমস্যাও হবে।
এদিকে স্থানীয় প্রত্যেকটি এলাকার ভেতরে সড়কের অবস্থা ভালো হওয়ায় সেখানেই পশু কোরবানি সহজ মনে করেন স্থানীয়রা।
এছাড়া সকালে এই মাঠে ঈদের জামাত হওয়ায়, মাঠ খালি হতে সময় লেগেছে। ফলে অধিকাংশ মুসল্লিরা ঈদের প্রথম জামাত শেষেই তাদের পশু কোরবানি করেন নিজ নিজ এলাকায়।
স্থানীয় এভিনিউ ৫ এর বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম বলেন, আমাদের এলাকার বেশিরভাগ মানুষই নিজের গরু নিজেরাই কাটি। আমরা তেমন দক্ষও না। এলাকার ভেতর কাটলে পাশাপাশি অনেকের হেল্প পাওয়া যায়। সবাই চেনাজানা। একটা আনন্দ পাওয়া যায়। মাঠে কাটলে বালিতে মাংসে লেগে যেতে পারে।
আরেক বাসিন্দা মাহবুব আলম অন্তর বলেন, সবাই তো আর কসাই দিয়ে গরু কাটায় না। ভালো-মন্দ যেমনেই হোক নিজ এলাকায় কাটাকাটিতে ঝামেলা নাই। আর মাঠের চেয়ে শুকনায় কোরবানি দেওয়াটা সহজ। রক্ত ময়লা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করা যায়। মাঠ না দিয়ে আশপাশ বড় কয়েকটা রোড নির্ধারণ করে দিতো বা প্রত্যেক লাইনের মাথায় পশু কোরবানি হবে এরকম নিয়ম করে দিলে ভালো হবে মনে হয়।
তবে অনেক কোরবানিদাতা ডিএনসিসির এই উদ্যোগে স্বাগত জানিয়েছেন। তারা বলেন, মাঠ না করে মাঠের পাশের রাস্তায় কোরবানি এবং মাঠে বসে কাটাকাটি করলে সবার জন্য সুবিধার হবে।
ছবি: প্রতিবেদক।
আরও পড়ুন-