বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএমইউ) বিশ্ব রক্তদাতা দিবস উদ্যাপন করা হয়েছে। বুধবার (১৮ জুন) দিবসটি উপলক্ষে বিএমইউর ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের উদ্যোগে স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সম্মাননা সনদ প্রদান ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
সেমিনারে জানানো হয়, ২০২৪ সালে ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের উদ্যোগে ৩৩ হাজার ৫৯৩ ব্যাগ রক্ত বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে নিরাপদভাবে সংগ্রহ করা হয়। ওই বছরে স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংখ্যা ছিল ৩৭৯ জন, অন্যরা ছিলেন রোগীর আত্মীয়-স্বজন। এসব রক্ত যথাযথভাবে স্ক্রিনিং করা হয়। স্ক্রিনিং করে উক্ত রক্তে ১১৬ জনের হেপাটাইটিস বি, ৭ জনের হেপাটাইটিস সি, ৬ জনের এইচআইভি এবং ৪৩ জনের সিফিলিস পাওয়া যায়। যে সব রক্তে হেপাটাইটিস বি, সি, এইচআইভি ও সিফিলিস পাওয়া যায়—তা ফেলে দিয়ে বাকী নিরাপদ রক্ত রোগীদের জন্য ব্যবহার করা হয়। গত বছর উক্ত বিভাগের উদ্যোগে সংগ্রহ করা রক্ত থেকে ১৩ হাজার ৫৯৫ ব্যাগ লোহিত কণিকা, ১২ হাজার ৭১০ ব্যাগ প্লাটিলেট এবং একই সংখ্যক ব্যাগ প্লাজমা তৈরি করে রোগীদের জীবন বাঁচাতে ব্যবহার করা হয়। গত বছরে রোগীদের রক্তে এন্টিবডি রয়েছে কিনা সে বিষয়ে স্পেশালাইজড ল্যাবরেটরিতে প্রায় ৫ হাজার পরীক্ষা করা হয়। ওই বছরে ডে-কেয়ার সেন্টারে ১১ হাজার ৫০২ জন রোগীকে নিরাপদ রক্তের মাধ্যমে চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়।
সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএমইউ’র ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, রক্তের মাধ্যমে রোগীদের সেবা প্রদানের গুণগত মান অতীতের তুলনায় অনেক বেড়েছে। নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালনে দেশ অনেক এগিয়েছে। বিএমইউ’র ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের মাধ্যমে নিরাপদভাবে রক্ত সংগ্রহ করে রোগীদের সেবাদান, ছাত্রছাত্রীদের উন্নত উচ্চ শিক্ষা প্রদানে বিরাট অবদান রাখছে। তবে গবেষণায় আরও গুরুত্ব দিতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএমইউ’র প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (গবেষণা ও উন্নয়নর) অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, রক্তে বিকল্প রক্ত। রক্তদাতাদের ঋণ কোনও কিছুর বিনিময়ে শোধ করা যায় না। তাদের রক্তের বিনিময়ে মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচে। দেশব্যাপী নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন নিশ্চিতকরণে আরও জোর দিতে হবে। এই বিষয়ে জনসচেতনতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে।
তিনি তার বক্তব্যে ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের আরও উন্নয়ন ও প্রসারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাসম্ভব সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএমইউ’র কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাহরীন আখতার স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সম্মান জানিয়ে বলেন, অনেক সময় এমন রোগীও থাকে যে ১০ ব্যাগ নিরাপদ রক্তের ব্যবস্থা করে রোগীর অস্ত্রোপচার শুরু করতে হয়। তাই চিকিৎসাসেবায় রক্ত বিশেষ করে নিরাপদ রক্ত যে কতটা প্রয়োজনীয় তার সহজেই অনুধাবন করা যায়। বিএমইউর ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় জায়গা, জনবল নিশ্চিত করাসহ আরও সুন্দর পরিবেশ প্রতিষ্ঠায় অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন যথাসাধ্য সহযোগিতা করবে।
বিএমইউ’র ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. আয়েশা খাতুন বক্তব্যে রক্তদানের সক্ষম এমন ব্যক্তিদের জন্মদিনসহ বিভিন্ন উপলক্ষে বছরের কমপক্ষে একবার রক্তদানের আহ্বান জানান।
সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সহকারী অধ্যাপক ডা. সোনিয়া শরমিন মিয়া ও ডা. নাদিয়া শারমিন তৃষা। সঞ্চালনা করেন সহকারী অধ্যাপক ডা. ফারাহ আনজুম সোনিয়া। উক্ত অনুষ্ঠানে পরিচালক হাসপাতাল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নোমান মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দিন, নিউরোসার্জন সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল কদ্দুস বিপ্লব, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. শেখ সাইফুল ইসলাম শাহিন, সহকারী অধ্যাপক ডা. সুবর্না সাহা প্রমুখসহ শিক্ষক, চিকিৎসক, রেসিডেন্টরা, টেকনোলজিস্টরা ও স্বেচ্ছায় রক্তদাতারা উপস্থিত ছিলেন।