X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

বদলে যাওয়া জাতি

ফিরোজ আহমেদ
০৭ এপ্রিল ২০২১, ১৮:২৯আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২১, ১৮:২৯

পাকিস্তান রাষ্ট্রে বাঙালিদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিটি সাধারণত কেমন ছিল, সেটা খুব অবিদিত নয়। একদম শুরু থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি আমলারা পূর্ববঙ্গের জ্যেষ্ঠ নেতাদেরও তাচ্ছিল্য করেই চলতেন। ৫০ সালে পূর্ববঙ্গে ও পশ্চিমবঙ্গে সর্বশেষ দুটি বৃহৎ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়, যা কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ উভয়ের পৌরহিত্যে রাষ্ট্রীয় ইন্ধনে সংঘটিত হয়। দু্টি দাঙ্গারই বিশেষ উদ্দেশ্য ছিল অবশিষ্ট ধর্মীয় পরিচয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে যথাসম্ভব ঝেটিয়ে বিদায় করে ‘স্বধর্মভুক্ত’ উদ্বাস্তুদের জন্য জায়গা করা। বদরুদ্দীন উমর তার ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস রচনা করতে গিয়ে এই সামাজিক নথিগুলো সংকলিত করতে ভোলেননি। সেখানে একজন সরকারি কর্মকর্তা প্রকাশ্য সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রীকে পর্যন্ত যেভাবে তুচ্ছ করেছেন, তার তুলনা খুব কমই মিলবে। সেই দাঙ্গার সময়ে পশ্চিম পাকিস্তানি আমলা, চিফ সেক্রেটারি আজিজ আহমদের বক্তব্য গ্রহণ করেন লন্ডনের ইকোনমিস্ট ও ম্যানচেস্টার গার্ডিয়ান পত্রিকার প্রতিনিধি তায়া জিনকিন। আজিজ আহমেদ সাম্প্রদায়িক হামলার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন,

“তার প্রশাসন ব্যবস্থার প্রায় কোনও অস্তিত্ব নেই এবং স্থানীয়দের মাঝে যারা আছে তারা ভয়ানক অযোগ্য। অধিকাংশ কেরানিই ছিল হিন্দু এবং তারা সবাই চলে গেছে। একজনই মাত্র উচ্চপদস্থ কর্মচারী ছিল, যে বাঙালি। বাকিরা সব অন্যত্র থেকে এসেছে, অধিকাংশই পাঞ্জাব থেকে, এবং তারা কেউ বাঙলা বলে না, বলে উর্দু অথবা হিন্দি। সৈন্যবাহিনী ছোট এবং সীমান্ত বরাবর নিয়োজিত। বাঙালিরা পশ্চাৎপদ এবং উচ্ছৃঙ্খল; তারা আরবি জানে না বলে বাংলাতে নামাজ পড়ে। তাদের এবং প্রশাসন ব্যবস্থার মধ্যে কোনও সাধারণ ভাষা নেই। এমনকি শপথ নেওয়ার সময় তারা কালী ও দুর্গার (বাংলাদেশের প্রিয় উপাস্য দেবী) নাম নেয়- তিনি বললেন গভীর বিতৃষ্ণার সঙ্গে। যদিও তিনি পূর্ব বাংলাকে পশ্চিম পাকিস্তানের একটা উপনিবেশ হিসেবে আখ্যায়িত করলেন না, তবু তার দৃষ্টিভঙ্গিটি ছিল একজন ঔপনিবেশিক প্রশাসকের। এ বিষয়ে তিনি একজন পাকা পশ্চিম পাকিস্তানি।...প্রধানমন্ত্রী নুরুল আমীনের উল্লেখমাত্রই আজিজ ফেটে পড়লেন, ‘তার কাছ থেকে কি আশা করতে পারেন? তিনি একটা বেকুব এবং বাঙালি!”

ওদিকে অপমানিত পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমীনও একই সাক্ষ্য দিচ্ছেন। বাতের চিকিৎসার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের শরণাপন্ন হয়ে আজিজ আহমেদ প্রসঙ্গে তিক্তভাবে অভিযোগ জানান, “আজিজ আহমেদ তার সঙ্গে এমন ব্যবহার করেন যেন তিনি একটি আবর্জনা এবং পূর্ব বাংলার লোকদের সাথে এমন ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন, যা ব্রিটিশরা কোনদিন করেনি।” (উভয় উদ্ধৃতিই বদরুদ্দীন উমরের ভাষা আন্দোলন, দ্বিতীয় খণ্ড থেকে সংগৃহীত)

নুরুল আমিনের মতো ক্ষমতাধরও যখন এই আচরণের শিকার হতেন, সাধারণ মানুষের অবস্থা তখন অনুমান করা কঠিন না। আজিজ আহমেদের আচরণে বাঙালি মুসলমানের প্রতি পুরনো মোগলাই হীনতার ধারণার সম্প্রসারণ আমরা পাচ্ছি। এটা সম্ভব হয়েছিল, কারণ পাকিস্তান রাষ্ট্রের ভিত্তিস্বরূপ শক্তি সেনাবাহিনীতে পূর্ববাংলার মানুষের প্রতি এই হীন ধারণাটি শক্তিশালীভাবে জারি ছিল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে যে অল্প ক’জন বাঙালি কিছুটা উচ্চপদে যেতে পেরেছিলেন তাদের অন্যতম, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং সেক্টর কমান্ডার কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান তার স্মৃতিকথায় অন্তত তিনটি দৃষ্টান্ত হাজির করেছেন, যেখানে পূর্ববাংলার মানুষদের সম্পর্কে একই রকম হীন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন আইয়ুব খান।

প্রথমবার আইয়ুব খান মন্তব্য করেন যে, পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম সেনাপ্রধান থাকাকালীন তিনি ঢাকার নবাব বাহাদুরের পরিবার ছাড়া আর কোনও ভদ্র পরিবারের সন্ধান পাননি। তৃতীয় ঘটনায় নুরুজ্জামানকে প্রথমে স্নেহপূর্বক অভিব্যক্তি দেখাবার পর তিনি বাঙালি শুনে অপমানজনক ভঙ্গিতে চেয়ার ঘুরিয়ে বসেন। দ্বিতীয় ঘটনাটি সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ। মধ্যাহ্নভোজে দুই বিখ্যাত বাঙালি প্রাক্তন আইজি ইসমাইল সাহেব ও আবুল হাসনাত সাহেব বিষয়ে আইয়ুব খান ও তার পারিষদবর্গ পরচর্চায় মাতেন, উপরিউক্ত দুজনকে সম্পূর্ণ অযোগ্য হিসেবে মত দেন। পরবর্তীতে নুরুজ্জামান জানতে পারেন ইসমাইল সাহেব নানাবিধ বিষয়ে গোটা চল্লিশেক গ্রন্থ রচনা করে সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেছিলেন। অন্যজন আবুল হাসনাত প্রথম বাংলায় যৌনবিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থকার, এই গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থটির একটি সমালোচনা লিখেছিলেন উপন্যাসিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়। আইয়ুব খান মন্তব্য করেন: ‘আবুল হাসনাতকে আমি আমার আর্মিতে ল্যান্স নায়েকেরও মর্যাদা দিতাম না।’

কাজী নুরুজ্জামান নিজের মনের মধ্যে এর প্রতিক্রিয়ার কথা উল্লেখ করেছেন: ‘চারদিক অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে... আইয়ুবের কথাবার্তায় বাঙালিদের প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ প্রতিফলিত হচ্ছিল। আমি বিব্রতবোধ করতে থাকি কিন্তু জাকের হোসেন (ইনিও ছিলেন একজন প্রাক্তন বাঙালি আইজি) আইয়ুবের কথায় সায় দিয়ে হাসি ভরে উপভোগ করছিলেন মনে হলো। এ ধরনের বাঙালি চাটুকারদের প্রতি আমার একটা ঘৃণা জন্মালো।’ (নির্বাচিত রচনাবলি, কর্নেল কাজী নুরুজ্জামান)।

এমনকি নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর বাঙালিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার পেছনেও জারি ছিল সেই পুরনো জাতিগত হীনতার ধারণা। স্বাধীনতা-পূর্ব আমলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে সর্বোচ্চ পদে যাওয়া বাঙালি কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার মাহমুদুর রহমান মজুমদার তার স্মৃতিকথায় জানিয়েছেন:

‘এ অবস্থার মধ্যে একদিন জিএইচকিউ থেকে দীর্ঘ দুই পাতার একটি টপ সিক্রেট চিঠি পেলাম। চিঠি পড়ে মর্মাহত হলাম। চিঠিতে লেখা হয়েছে, আওয়ামী লীগের ছয় দফার ভিত্তিতে প্রতিরক্ষা বাহিনীতে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব মেনে নিলে বাঙালির প্রাধান্যে এটি একটি তৃতীয় শ্রেণির সেনাবাহিনীতে পরিণত হবে। বিস্তৃতভাবে এসব কথা বর্ণনার পর উপসংহারে লেখা হয়েছে, এমতাবস্থায় শেখ মুজিবকে কিছুতেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে দেওয়া যায় না।’

সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব মেনে নিলে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আর উচ্চমানের থাকবে না, তৃতীয় শ্রেণির বাহিনীতে পরিণত হবে- এই ধারণাটির জন্মই হয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশে শরাফতির একটি পুরনো ব্যকরণে, এটা অনুযায়ী যে যত পশ্চিম থেকে এসেছে, সে তত অভিজাত! এই শরাফতির ভিত্তি সামরিক ও ধর্মী প্রচারকের পেশা, আর আতরাফরা স্থানীয় কৃষিজীবী ও কারিগর সম্প্রদায়। এই ধারণার সূচনা হয়েছিল ব্রাহ্মণ্য সভ্যতার বিস্তারের সাথে সাথে; পরবর্তীতে সুলতানি আমল, মোগল আমলে তা আরও ডালপালা মেলে। ব্রিটিশ আমলেও এটাই অক্ষুণ্ন ছিল।

ক্লাইভ আর হেস্টিংস এই দুই ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সেনাকর্তার জীবনী লিখতে গিয়ে ম্যাকওলে দুই দফায় উল্লেখ করেছিলেন বাঙালিদের কথা, ভীরু আর কেবল শাসিত হওয়ার উপযুক্ত জাতি হিসেবে। আপস আর টিকে থাকার দক্ষতাই তাদের শেষ কথা, প্রত্যাঘাতের স্বভাব তাদের মাঝে নেই। ফলে ব্যক্তিগত শত্রুতার দিক দিয়ে তারা নিষ্ঠুর হলেও সামষ্টিক রাজনৈতিক চেতনা এখানে ভীরু। শাসকরা আতঙ্কিত করে তুলতে পারলেই তারা স্তব্ধ হয়ে থাকে।

২৫ মার্চ রাতেও ঠিক তাই চেয়েছিল পাকিস্তানি সামরিক কর্তারা। আতঙ্কে বিমূঢ় করে দিতে চেয়েছিল জাতিটিকে, শুধু টের পায়নি মাঝের সময়টাতে এই জাতির রসায়নে ঘটে গেছে বিপুল বদল। আরও অনেকের সাথে যেমন কর্নেল কাজী নুরুজ্জামানের ১৫ বছরের ছেলে নদিম রাত তিনটায় রক্তস্নাত নগরী ঘুরে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে বাড়িতে ফেরত এসেছিল বন্দুক সংগ্রহ করতে। চলচ্চিত্র নির্মাতা জহির রায়হান নিজের গাড়িটি শিবপুরের বিপ্লবী কমিউনিস্টদের স্থানীয় প্রতিরোধ যুদ্ধের জন্য দিয়ে নিজে চলে যান সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বৃহত্তর যুদ্ধের প্রস্তুতিতে। মাওলানা ভাসানীর মতো ৮০ পেরুনো মানুষ টাঙ্গাইল থেকে রওনা হন আসামের দিকে, অজস্র মানুষের ভিড়ে তিনি আশ্রয় পান, খাবার পান, কিন্তু কেউ তাকে ধরিয়ে দেয়নি হানাদার বাহিনীর হাতে; পাকিস্তানিরা তার কুঁড়েঘরটি ছাই করে দিয়ে মনের জ্বালা মেটায়। বিপ্লবী রাজনীতির সাথে যুক্ত আরেকজন রুমী আমেরিকার উচ্চশিক্ষার মোহ ছেড়ে ক্র্যাকপ্লাটুনে নাম লেখায়। গণযুদ্ধের অকুতোভয় সৈনিকে পরিণত হন হাজার হাজার কৃষক শ্রমিক। বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে শরাফতির রাজনীতির শেষ যুগটির অবসান ঘটে, শরিফ পরিবারের সন্তান তাদের পদবি ভুলে আতরাফের কাতারে মিশে যান।

২৬ মার্চের এই জাতিগত হীনতার ধারণার শিকার বাঙালি জনগোষ্ঠী নিজের রাজনৈতিক চর্চায় অবশ্য এই শিক্ষাকে সমুন্নত রাখেনি। তাই ৫২ সালে ভাষা আন্দোলন করা জাতিটিকে দেখি নিজের রাষ্ট্রেই অপরাপর ভাষাগুলোকে দমন করার রাজনৈতিক কাঠামো এবং সংস্কৃতি। দেখি সংখ্যার বিচারে কম এমন জাতিগুলোর ভূমি গ্রাসের পাঁয়তারা এবং তারই জন্য আইনি ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাও।

পাশাপাশি এটাও সত্যি যে, সংখ্যালঘুর ওপর নিপীড়ক এই রাষ্ট্র সংখ্যাগুরুর জন্যও এমন কোনও নিরাপদ রাষ্ট্র ও সমাজ উপহার দিতে সক্ষম হয়নি, সক্ষম হয়নি নিজের ভাষাকেও স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত করতে।

যে আকাঙ্ক্ষার জন্ম দিয়েছিল একাত্তর, তাই তার বিনাশ নেই। এই চেতনা কেবল কোনও কাল্পনিক যোগসূত্র না, আজও প্রতিটা সংগ্রামে আমরা রসদ নেই মুক্তিযুদ্ধ যে অপরিমেয় সম্ভাবনা তৈরি করেছিল এই জাতির জন্য, সেই অফুরন্ত খনি থেকে। প্রতারিত, লাঞ্ছিত হয়েও বারবার রুখে দাঁড়ানোই এই জাতির চরিত্রে পরিণত হয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ তার অনন্য এক দৃষ্টান্ত।

লেখক: কেন্দ্রীয় সদস্য, গণসংহতি আন্দোলন। সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন।

/এসএএস/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ সামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ সামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
আশরাফুলের হ্যাটট্রিকে আবাহনীর টানা ৮ জয়
আশরাফুলের হ্যাটট্রিকে আবাহনীর টানা ৮ জয়
সর্বাধিক পঠিত
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!