X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফ্যাশনের পঞ্চাশ

নওরিন আক্তার 
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:৩৪আপডেট : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২০:৪৭

দেশীয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির স্বর্ণযুগের শুরুটা কিন্তু বহু আগে। স্বাধীনতার অনেক বছর আগে থেকেই লোকজ মোটিফ, দেশীয় কাপড় নিয়ে কাজ করার তীব্র আকাঙ্ক্ষা থেকে ধীরে ধীরে গড়ে উঠতে শুরু করে আমাদের নিজস্ব ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। সেই আকাঙ্ক্ষা কখনও মিশেছে ব্যর্থতায়, কখনও আবার উঠে দাঁড়ানোর উদ্যম এনেছে নতুন আশার আলো। নানা চরাই উতরায় পার করে আজকে দেশের ফ্যাশন বাজারের ব্যাপ্তি হাজার কোটি টাকার বেশি। ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির পাশাপাশি যুগে যুগে পরিবর্তিত হয়েছে মানুষের রুচি, পছন্দ-অপছন্দ এবং স্টাইলও। আদ্যোপান্ত থাকছে দ্বিতীয় পর্বের প্রতিবেদনে।   

আশির দশক

আশির দশকে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ফ্যাশন। ছবি: সংগৃহীত

আশির দশকে শুরু হওয়া অন্যতম ব্যবসাসফল ফ্যাশন হাউস ‘আনোখি।’ আনোখির ডিজাইনার ও সত্ত্বাধিকারী হুমায়রা খান জানান, আশির দশকের শুরুতে সালোয়ার কামিজের প্রচলন শুরু হয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে। সেগুলো ছিল ফ্রক স্টাইলের। নিউ মার্কেট, চাঁদনিচক মার্কেটে প্রচুর দরজির দোকান গড়ে ওঠে। মায়েরা তাদের মেয়েদের জন্য এসব টেইলার্স থেকে এই ধরনের কামিজ বানিয়ে সালোয়ার আর ওড়না ম্যানেজ করে দিতো। ডিজাইনিং বা ম্যাচিংয়ের কনসেপ্ট তখনও শুরু হয়নি। ফলে দেখা যেত কোনোটার সঙ্গে কোনোটার মিল নেই। সাধারণত ঈদ কিংবা কোনও উৎসবে বানানো হতো নতুন কাপড়। 

শাড়ির প্রচলন তো ছিলই। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সে সময়ের নারীরা বেশ সাহসী স্টাইলে পরতেন শাড়ি। রুবিয়া ভয়েলের হল্টার নেক কিংবা স্লিভলেস রেডিমেড ব্লাউজ খুব কম দামে পাওয়া যেত নিউ মার্কেট ও চাঁদনিচক মার্কেটে। 

তাঁতশিল্প মাথা তুলে দাঁড়ানো শুরু করে এ সময়টাতেই। ১৯৮২ সালে টাঙ্গাইলের তাঁতিদের হাতে বোনা শাড়ি শহুরে নারীদের কাছে পরিচিত করতে উদ্যোগ নেন মুনিরা এমদাদ। সে সময়কার শাড়িগুলো হতো দশ হাতের মতো। ফলে চাইলেও সবাই পরতে পারতেন না। এদিকে দাম বেড়ে যাবে কেউ কিনবে না- এই ভেবে তাঁতিরাও বড় শাড়ি বানাতেন না। সে সময় অর্ডার দিয়ে কয়েকটি বারো হাতের শাড়ি বানিয়ে এনে বিক্রি শুরু করেন মুনিরা এমদাদ। অল্প সময়ের মধ্যেই এসব শাড়ির তুমুল চাহিদা তৈরি হলো। পরের বছর পহেলা বৈশাখের আগে টাঙ্গাইল শাড়ি কুটিরের সব শাড়ি বিক্রি হয়ে গিয়েছিল। 

টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির ও তার অনুসরণে ফ্যাশন হাউস কনিষ্ক তাঁতশিল্পে নিয়ে আসে বিপ্লব। ধীরে ধীরে নারীদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে তাঁতের শাড়ি।

আশির দশকে ছেলেদের পশ্চিমা পোশাক নিয়ে কাজ শুরু করে ফ্যাশন হাউস ক্যাটস আই। ১৯৮০ সালে সাইদ সিদ্দিকী রুমী ও আশরাফুন সিদ্দিকী ডোরার হাত ধরে এলিফ্যান্ট রোডে গড়ে উঠেছিল দেশীয় এ ব্র্যান্ডটি। এটি ছিল তখনকার তরুণদের মধ্যে ভীষণ জনপ্রিয়। পিয়ারসন্স নামের আরেকটি ব্র্যান্ডও বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে সে সময়। এলিফ্যান্ট রোডে ছিল তাদের শোরুম। ১৯৮৯ সালে সেরা হাউস হিসেবে পিয়ারসন্স লাভ করেছিল বিচিত্রা কাপ। কিন্তু নব্বইয়ের দশকে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বন্ধ হয়ে যায় হাউসটি।  

আশির দশকের অভিনেত্রীরা। ছবি: সংগৃহীত

আশির দশকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ফ্যাশন নিয়ে কাজ করতেন হাতে গোনা কয়েকজনই। এদের মধ্যে আধুনিক রুচির কয়েকজন ডিজাইনার আন্তর্জাতিক ট্রেন্ডগুলো অনুসরণ করতে শুরু করলেন পোশাক ডিজাইনের ক্ষেত্রে। নাসরিন, তানিজসহ কয়েকজন ডিজাইনার ব্যক্তিগত উদ্যোগে ডিজাইনার সালোয়ার কামিজের প্রচলন শুরু করেন ১৯৮৫ সালের দিকে। তবে এগুলো সবার হাতের নাগালে ছিল না। ১৯৮৯ সালে শুরু হয় আনোখি। একেবারেই নিরীক্ষাধর্মী রঙ ও ডিজাইন ছিল আনোখির পোশাকের বিশেষত্ব। ভিন্নধর্মী গলার নকশা, অল্প কারুকাজ- এগুলো মানুষ ভীষণ পছন্দ করে। ডিজাইনার সালোয়ার কামিজ সবার মধ্যে জনপ্রিয় করতে আনোখির ভূমিকা ছিল দুর্দান্ত। এছাড়া কারিকা, কুমুদিনী, ভূষণ- এগুলোও দেশীয় পোশাকশিল্পকে নিয়ে যায় অনন্য এক উচ্চতায়।    
এরমধ্যে বিচিত্রা পত্রিকা দেশে প্রথমবারের মতো ঈদ ফ্যাশন প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। সেটা ১৯৮৬ সালের কথা। সে বছর ফ্যাশন হাউস নিপুণ লাভ করে প্রথম পুরস্কার। প্রতিযোগিতাটি তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। এরপর মানুষকে দেশীয় ফ্যাশন ও পোশাক সম্পর্কে জানাতে প্রথমবারের মতো টেলিভিশন বিজ্ঞাপন করেছিল নিপুণ। বাংলাদেশের দেশীয় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে সেটাই প্রথম এই ধরনের পদক্ষেপ। 

এদিকে ঈদ ফ্যাশন প্রতিযোগিতার সাড়া জাগানিয়া শুরুর পর এই সংক্রান্ত অন্যান্য অনুষঙ্গের সংযোজন করে বিচিত্রাই। দেশের কাপড় কোথায় পাওয়া যাবে, কীভাবে বানানো যাবে পোশাক, আসল খাদি কোথায় মিলবে, ঈদের ছুটিতে কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়- এসব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিচিত্রা। ফ্যাশন প্রতিযোগিতার মডেলিংয়ের প্রয়োজনে তৎকালীন বিচিত্রা সম্পাদক শাহাদাত চৌধুরী ১৯৮৮ সালে শুরু করেন ‘আনন্দবিচিত্রা ফটোসুন্দরী প্রতিযোগিতা।’ এসব কিছু মিলিয়ে দুর্দান্ত এক হাওয়া লাগে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির পালে। এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হতে শুরু করে ফ্যাশন জগতে। 

নব্বইয়ের দশক 

অভিনেত্রী শাবানা। ছবি: সংগৃহীত

নব্বই দশকের ফ্যাশন ট্রেন্ডে লক্ষ করা যায় চলচ্চিত্র তারকাদের প্রভাব। বিশেষ করে ফ্যাশন আইকন হিসেবে সালমান শাহ ছিলেন অত্যন্ত জনপ্রিয়। সালমানের অনুকরণে গোল ফ্রেমের চশমা, বিভিন্ন রঙের টুপি, হাঁটুতে রঙিন রুমাল বেঁধে রাখার চল দেখা যেত তরুণদের মধ্যে। ব্যান্ডানা বাঁধার চলও দেখা যেত খুব।

বর্তমানের অনেক জনপ্রিয় ফ্যাশন হাউসের শুরুটা হয়েছিল নব্বয়ের দশকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে অঞ্জন’স, কে ক্র্যাফট, রঙ। এছাড়া আশির দশকে শুরু হওয়া বেশকিছু ফ্যাশন হাউস দোর্দণ্ড প্রতাপে সেসময় দেশীয় পোশাক শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ক্যাটস আই ও নিপুণ। নব্বই দশকের গোড়ায় ধানমন্ডির সোবহানবাগের হোসেন প্লাজার বিশাল ফ্ল্যাগশিপ শপ শুরু করে নিপুণ। 

১৯৯২ সালে নানা ধরনের পাঞ্জাবি প্রদর্শনীর মাধ্যমে শুরু হয় ফ্যাশন হাউস ‘কারুজ’ এর পথচলা। মাত্র কয়েক ঘণ্টায় বিক্রি হয়ে যায় সব পাঞ্জাবি। 

অভিনেত্রী রোজিনা। ছবি: সংগৃহীত

১৯৯৫ সালে শুরু হওয়া ফ্যাশন হাউস অ্যান্ডেজ অক্ষরের মোটিফ নিয়ে কাজ করে পেয়েছিল জনপ্রিয়তা। এই সময়টাতেই দেশে ফিরে দেশীয় ফ্যাশন শিল্পকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে কাজ শুরু করেন বিবি রাসেল। নিজস্ব ব্র্যান্ড ‘বিবি প্রোডাকশন’ এর লক্ষ্য ছিল নিজস্ব সংস্কৃতিকে পৃথিবীর বুকে তুলে ধরা।

আরও পড়ুন: ইতিহাসে বাংলার ফ্যাশন

/এফএএন/এনএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পাঁচ মাস পর অবশেষে মুক্তির বার্তা
পাঁচ মাস পর অবশেষে মুক্তির বার্তা
এমপিপুত্র প্রার্থী হওয়ায় ‘আগুন জ্বলছে’ সেলিম প্রধানের গায়ে
এমপিপুত্র প্রার্থী হওয়ায় ‘আগুন জ্বলছে’ সেলিম প্রধানের গায়ে
ব্রাজিলিয়ানের গোলে আবাহনীতে স্বস্তি
ব্রাজিলিয়ানের গোলে আবাহনীতে স্বস্তি
স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করল ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভস্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করল ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
সর্বাধিক পঠিত
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!