X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১
ট্রাভেলগ

ভালোবাসার পাহাড় আমার

রিয়াসাদ সানভী
১৭ অক্টোবর ২০১৮, ২৩:৪০আপডেট : ১৮ অক্টোবর ২০১৮, ০০:০০

বান্দরবানে আমাদের আগামী দুই দিনের আবাস ঠিক হয়েছে যেখানে, সেটি বেশ বিলাসী মানুষদের জায়গা। হলফ করে বলতে পারি, পাহাড়ে এসে কখনও এত দামি জায়গায় থাকিনি। এখানে এলে সবারই নয়ন জুড়িয়ে যায়। বাংলোর ব্যালকনিতে দাঁড়ালেই আদিগন্ত পাহাড়ের সারি। একটু ওপরে ওঠার পর দূরে বান্দরবান শহরের একাংশ দেখা যাচ্ছে।

সময়টা ভরা শরৎ। পাহাড়ে এমন সময় এই রোদ্দুর এই বৃষ্টি। কিছুক্ষণ আগেও আকাশ ছিল ঘন নীল। এর মধ্যে একপাশ ধরে মেঘেরা এসে তাদের দখল করে নিয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, আরেক পাশে কিন্তু রোদ আছে! তক্কে তক্কে বসে আছি। ঝুপ করে শুধু বৃষ্টি নামতে বাকি। হলোও তাই। পাঁচ মিনিটের ঝুম বৃষ্টি। তারপর শুরু হলো রঙের জাদু।

ভালোবাসার পাহাড় আমার সামনের পাহাড়টার ঠিক পেছন থেকে কাস্তের মতো বেঁকে রঙধনু উঠতে উঠতে রাঙিয়ে দিলো পুরো দিগন্ত। রীতিমতো হইচই শুরু হয়ে গেলো। যে যার ক্যামেরা বাগিয়ে ফটাফট শাটারে ঝড় তুলছি। চোখের সামনে প্রকৃতির এমন ভোলবদল ভাগ্যের বরাত না থাকলে দেখা যায় না। একসময় বোধ হলো, মিছেমিছি ছবি তুলে সময়টা নষ্ট করছি। তার চেয়ে গা এলিয়ে এমন জাদু বাস্তবের রূপে মুগ্ধ হই না কেন!

বর্ষার স্পর্শ পেয়ে এখন সবুজ বরণ উপত্যকার প্রতিটি ভাঁজ। রংধনু বিলীন হলো সেই সবুজ ক্যানভাসে। কিন্তু তার রেশ থেকে গেলো। দিগন্তে মিশে গিয়ে তৈরি করেছে এমন রঙিন কোলাজ, যার দিকে তাকিয়ে না থেকে পারা যায় না। আমার ঘণ্টাখানেক লাগলো ঘোর কাটতে। ধীরে ধীরে বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসছে পাহাড়ে।

ভালোবাসার পাহাড় আমার আমরা শহরে ফিরলাম সন্ধ্যেবেলা। বান্দরবান শহরে আদিবাসী খাওয়া-দাওয়ার ভালো ব্যবস্থা আছে। শহরে উজানী পাড়ার দিকে বেশকিছু হোটেল পাওয়া যায়। তবে কেউ বুনো জীবজন্তুর মাংস খাওয়ার প্রলোভনে পা দেবেন না যেন। আমার সঙ্গে একেবারে শহুরে খাবার-দাবারে অভ্যস্ত অনেক মানুষ। তাই আর আদিবাসী হোটেলগুলোর দিকে পা বাড়ালাম না। এই পাহাড়ি শহরে এসেও কবজি ডুবিয়ে ভাত, মাছ, ডাল খেতে ভালো লাগে যাদের, তারা তাজিনডং হোটেলে ঢুঁ দিতে পারেন। সেখানে খাদ্য তালিকায় বৈচিত্র্য আছে। খাবারও বেশ সুস্বাদু। রাতের খাওয়া বেশ জম্পেশ হলো।

ভালোবাসার পাহাড় আমার পাহাড়ি শহর। রাত বাড়লেই হালকা শীতের আমেজ পাওয়া যায়। আমাদের সেই বিলাসী আবাসও শহর থেকে খানিকটা দূরে। অবশ্য সঙ্গে বাহন আছে, এই রক্ষা। আমরা আর দেরি করলাম না। রাতের পাহাড়ি হাইওয়ে ছেড়ে হুডখোলা জিপ একসময় চড়াইয়ের পথ ধরলো। ফোর হুইলার এজন্যই খুব ভালো লাগে। হোক দম ফাটানো চড়াই কিংবা ভীতিকর উতরাই, সবখানেই এই বাহন সমান স্বাচ্ছন্দ্য দেয়।

আকাশে বিশাল চাঁদ। তার আলোয় ভেসে যাচ্ছে চরাচর। পাহাড়ে এমন পরিবেশ পাওয়াও রোমাঞ্চকর ব্যাপার। শহুরে চাঁদের কাছ থেকে এমন অনুভূতি কখনও পাবেন না। এটা মোটামুটি নিশ্চিত! একটানা ঝিঁঝির সমবেত সংগীত সেই আগুনে ঘি ঢেলে দিলো। পাহাড়ের আরেকটু গহীনে এমন একটা রাত কাটানোর জন্য মনটা আকুপাকু করলেও এবার অন্তত এখান থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই মনে হলো।

ভালোবাসার পাহাড় আমার দূরে বান্দরবান শহরে আলো দেখা যাচ্ছে। কৃত্রিম আলোর ছোট্ট সেই বিন্দুগুলোকে পূর্ণিমার কাছে রীতিমতো ম্লান দেখাচ্ছে। খোলা আকাশের নিচে সারারাত বসে থেকে মশার কামড়ে পা ফুলিয়ে ফেললে কী এমন ক্ষতি!

সকালে একটু দেরি করে ঘুম ভাঙলো। চোখ খুলতেই জানালোর পর্দাটা সরালাম। মুহূর্তে ফিরে এলো ঠিক আগের রাতের মুগ্ধতা। চাঁদ ছিল আগের কুশীলব, আর এখন মেঘ! চোখের সামনে দিগন্ত অবধি সাদা মেঘ চাদর বিছিয়ে ঢেকে দিয়েছে চরাচর। ফাঁকে ফাঁকে কিছু পাহাড়ের চূড়া মাথা গলানোর চেষ্টা করছে। প্রথম সূর্যটা ঠিক মেঘের ওপরে।

ভালোবাসার পাহাড় আমার পাহাড়ের ঢালে বাংলোর ব্যালকনি থেকে এই অপার্থিব ভোরকে উৎসর্গ করে লাফ দেওয়ার উৎসাহ পাইনি, তা বলা যাবে না। ঘোরটা অনেকক্ষণ ছিল। কেন সেই একই পাহাড়ে ঘুরেফিরে আসি, সেই প্রশ্ন শুনতে শুনতে কান পচে গেছে। সম্ভবত এই ভোরের একটা ছবিই সেইসব উৎসুক নিন্দুকদের জবাব দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

পাহাড়ে আর ক’দিনই থাকি। কিন্তু শহুরে ব্যস্ত সময়গুলোতে যখন এসব ছবি মানসপটে ভেসে ওঠে, সেখান থেকেই ভালোবাসার পাহাড়ে ফেরার প্রণোদনা পাই।

ছবি: লেখক

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনে জরিমানার পরিমাণ বাড়ছে: আইনমন্ত্রী
শ্রমিক অধিকার লঙ্ঘনে জরিমানার পরিমাণ বাড়ছে: আইনমন্ত্রী
চুয়াডাঙ্গাকে টপকে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড গড়লো যশোর
চুয়াডাঙ্গাকে টপকে মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড গড়লো যশোর
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদফতরকে টাকা বাঁচিয়ে কাজের মান অক্ষুণ্ণ রাখার নির্দেশ
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত অধিদফতরকে টাকা বাঁচিয়ে কাজের মান অক্ষুণ্ণ রাখার নির্দেশ
ডিজাবের নতুন সভাপতি আলমগীর, সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ উল্লাহ
ডিজাবের নতুন সভাপতি আলমগীর, সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ উল্লাহ
সর্বাধিক পঠিত
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
ফালুর বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট অনুমোদন
আওয়ামী লীগ নেতাকে হারিয়ে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা রউফ জয়ী
আওয়ামী লীগ নেতাকে হারিয়ে বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা রউফ জয়ী
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো