বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হতে যাচ্ছে বিশ্বখ্যাত বোয়িংয়ের তৈরি ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমান। আশা করা হচ্ছে, আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন এই উড়োজাহাজ আকাশপথে যাত্রীদের উপহার দেবে আরামদায়ক ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এর মাধ্যমে পাওয়া যাবে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা।
বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, আগামী ২০ আগস্ট ও নভেম্বরে রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হবে একটি করে দুটি ড্রিমলাইনার বিমান। এরপর ২০১৯ সালে আরও দুটি ড্রিমলাইনার যুক্ত করবে এই সংস্থা। আগামী ১ সেপ্টেম্বর ঢাকা-সিঙ্গাপুর ও ঢাকা থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর রুটে ড্রিমলাইনার চলাচল শুরু করবে।
বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হতে যাওয়া চারটি ড্রিমলাইনারের নাম পছন্দ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এগুলো হলো— আকাশবীণা, হংসবলাকা, গাঙচিল ও রাজহংস। ২০ আগস্ট বহরে যুক্ত হতে যাওয়া ড্রিমলাইনারের গায়ে নাম লেখা হয়েছে আকাশবীণা। ইতোমধ্যে সিভিল এভিয়েশন অথোরিটি থেকে নেওয়া হয়েছে এর নিবন্ধন (এস২-এজেএস)। এতে আসন সংখ্যা থাকছে ২৭১টি। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাস ২৪টি আর ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাস। সব আসনই বাঁকানো যাবে ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত।
অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ও ওয়াইফাই সুবিধা পাবেন যাত্রীরা। একইসঙ্গে থাকবে মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ। বিমানটি যে স্থানের ওপর দিয়েই যাবে, যাত্রীদের সামনে তখন স্ক্রিনে দেখা যাবে থ্রিডি ম্যাপ। একইসঙ্গে উঠে আসবে সেই স্থানের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। ড্রিমলাইনারের জানালা থেকে শুরু করে কেবিনেও রয়েছে মুড লাইট সিস্টেম। ফলে যাত্রীরা সহজেই পরিবর্তন করতে পারবেন লাইটিং মুড।
ড্রিমলাইনারে ভ্রমণকালীন যাত্রীরা চাইলে আকাশে কেনাকাটাও করতে পারবেন। এই উড়োজাহাজে অলঙ্কার ও সুগন্ধিসহ বিভিন্ন পণ্য কেনা যাবে শুল্কমুক্ত সুবিধায়। যাত্রীদের পছন্দমতো খাবারও থাকবে ড্রিমলাইনারে। স্টেট অব দ্য আর্ট প্রযুক্তিসম্পন্ন ড্রিমলাইনারে দেখা যাবে ৯টি টিভি চ্যানেল। ড্রিমলাইনারের ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেমে (আইএফই) থাকবে ক্ল্যাসিক থেকে ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র। গান শোনা, ভিডিও গেমস ও খেলার ব্যবস্থা থাকবে বিমানটিতে।
শুধু আরামদায়ক নয়, ভ্রমণকে নিরাপদ করতে ড্রিমলাইনারের অবকাঠামোতে থাকছে নতুনত্বের ছোঁয়া। কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি হওয়ায় এই বিমান ওজনে হালকা। দীর্ঘ সময় ভ্রমণেও যাত্রীরা যেন ক্লান্তি অনুভব না করেন সেজন্য এর ভেতরে এয়ার কম্প্রেসার সিস্টেম অন্যান্য বিমানের তুলনায় উন্নত। টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম এই উড়োজাহাজে অন্যান্য বিমানের তুলনায় ২০ শতাংশ কম জ্বালানি লাগবে।
শুধু তাই নয়, বিমানটির ককপিটেও রয়েছে নতুনত্ব। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঢাকায় বিমানের ফ্লাইট অপারেশন রুমের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এটি। ফলে এর সব তথ্য জানতে পারবেন ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের কর্মকর্তারা।
ফ্লাইট শেষে দেশে ফেরার আগেই ড্রিমলাইনারের কোনও সমস্যা আছে কিনা তা জানতে পারবেন প্রকৌশলীরা। তাই ত্রুটি পেলে বিমানটি দেশে পৌঁছানোর আগেই প্রস্তুতি নিতে পারবেন তারা। ফলে যেকোনও সময় ককপিট থেকে ফ্লাইট অপারেশন রুমের সহায়তা নিতে পারবেন পাইলট। একইসঙ্গে আকাশে ওড়ার সময় আইপ্যাড ও ট্যাব ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় তথ্য নিতে পারবেন তারা।