প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, লেক, ফুল আর কাঠের সেতু দিয়ে সাজানো ছবির মতো একটি গ্রাম গিতহোর্ন। যেখানে গাড়ি চলাচলের সুযোগ নেই। থাকবে কীভাবে, গাড়ি যাওয়ার পথই তো নেই! ফলে সেখানে ঢুকতে হলে গ্রামের বাইরে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় গাড়ি রেখে আসতে হয়। এরপর হেঁটে কিংবা বিশেষ নৌকায় চড়ে যাওয়ার সময় বোঝা যায় ডাচরা জল কতটা ভালোবাসে। নেদারল্যান্ডসের রাজধানী আমস্টারডাম থেকে গিতহোর্ন পর্যন্ত গাড়িতে দেড় ঘণ্টার পথ। তবে আগেই বলা হয়েছে, গ্রামে প্রবেশের জন্য কিন্তু গাড়ি থাকলে চলবে না!
গিতহোর্নের ইতিহাস
নেদারল্যান্ডসের ওভেরিসসেল প্রদেশের গ্রামটি বেরিবেন-বেডেন ন্যাশনাল পার্কে অবস্থিত। গিতহোর্নকে ‘ছোট ভেনিস’ হিসেবেও উল্লেখ করা হয়। একসময় এটি ছিল পথচারীদের বিশ্রামের জায়গা। তবে এখন এর পরিচয় অন্যরকম।
ছোট্ট গ্রামটির বিখ্যাত হয়ে ওঠা নিশ্চিতভাবেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সুবাদে। তবে ১৯৫৮ সালে গিতহোর্নে বিখ্যাত ডাচ চলচ্চিত্র নির্মাতা বার্ট হান্সত্রা ‘ফ্যানফেয়ার’ ছবির চিত্রায়ন করার পর এর খ্যাতি আরও ছড়িয়ে পড়ে।
যোগাযোগ ব্যবস্থা
তিন হাজারের কম মানুষের বসবাস এই গ্রামে। জলপথেই তাদের যাতায়াত বেশি। এজন্য আছে বিশেষ ধরনের নৌকা। শব্দদূষণ যেন না হয় সেজন্য বিশেষভাবে বানানো হয়েছে এগুলো। ভ্রমণকারীরা চাইলে পায়ে হেঁটে কিংবা সাইকেল ভাড়া করে ঘুরতে পারেন অপরূপ সৌন্দর্যের মাঝে।
কাঠের সেতু
গিতহোর্ন গ্রামের নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের অন্যতম উপকরণ হলো কাঠের তৈরি সেতু। পায়ে হেঁটে কিংবা নৌকায় গেলে একটু পরপরই চোখে পড়ে এগুলো। সব মিলিয়ে ১৮০টি সেতু আছে এই গ্রামে। গাড়ি বাইরে রেখে হেঁটে গ্রামে যাওয়ার পথে সেতুর পাশে বসে নিসর্গে হারিয়ে যান ভ্রমণপিপাসুরা।
সাইকেলের পথ
একটা সময় কোনও পথই ছিল না গিতহোর্নে। তবে পরবর্তী সময়ে সাইকেল যাওয়ার মতো রাস্তা করা হয়। চাহিদা অনুযায়ী সাইকেল ভাড়া পাওয়া যায়। নির্দিষ্ট জায়গায় গাড়ি পার্ক করে হাঁটতে না চাইলে সাইকেল ভাড়া করে গ্রামের সৌন্দর্য উপভোগ করেন পর্যটকরা। গাছের সারি আর একপাশে এঁকেবেঁকে চলা লেকের ধার ধরে সাইকেল চালানোর মজাটাই অন্যরকম।
ইতিহাসের হাতছানি
শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য কিংবা নিরিবিলি পরিবেশ উপভোগই নয়, গ্রামটির ইতিহাস মুগ্ধ করে ভ্রমণপ্রেমীদের। সেখানে জাদুঘর ও গির্জা দেখে দিব্যি সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়। ‘হেট ওলডে ম্যাট উস’ জাদুঘরে গেলে জানা যাবে শতবর্ষ আগের ফার্মহাউজগুলো দেখতে কেমন ছিল। শিশুদের জন্য আছে চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ও বিশেষ আয়োজন। যদি পাথর কিংবা পাহাড়-পর্বত নিয়ে পড়তে ভালো লাগে, তাহলে অবশ্যই গিতহোর্নকে রাখতে হবে ভ্রমণের তালিকায়। অসংখ্য ঐতিহাসিক ভবন, দুর্গ ও গির্জা দেখে জানার আছে অনেক কিছু।
গিতহোর্নের জল
‘পানির অপর নাম জীবন’ – কথাটার অন্যরকম মানে বোঝা যায় গ্রামটিতে। সত্যিকার অর্থে পানিকে সঙ্গে নিয়েই বেঁচে আছে গিতহোর্নের মানুষ। আইস স্কেটিং করেন যারা, তাদের জন্য এটি হলো শীতের ছুটি কাটানোর কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য। এখানকার খাল কিংবা লেক, সবখানেই আইস স্কেট করা যায় তখন।
চীনা পর্যটকদের স্বর্গ
ডাচ গ্রামটিতে মনের মতো ঘুরতে হলে পরিকল্পনা থাকা চাই। আগে থেকে জেনে না গেলে কিংবা সবকিছু ঠিক করা না থাকলে কিছুটা ঝক্কির মধ্যে পড়তে হয় বৈকি! আবার অনেক কিছু মিসও হয়ে যেতে পারে। ভরা মৌসুমে তো নৌকা পাওয়াটাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। তাই পরিকল্পনা করলে যতটা সম্ভব সকালে যাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। চীনের পর্যটকরা সবচেয়ে বেশি বেড়াতে যায় সেখানে।
গ্রীষ্ম কিংবা শীত, কখনোই থাকার জায়গার সমস্যা হয় না গিতহোর্নে। তাই এই গ্রামে যেকোনও সময় বেড়ানোর পরিকল্পনা করতে সমস্যা নেই। তবে সুন্দরভাবে ঘুরতে ও সময়টা উপভোগ করতে শীতে না গেলেই ভালো।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া