করোনাভাইরাসের কারণে অবরুদ্ধ অবস্থা (লকডাউন) শিথিল করার সঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পর্যটন শিল্পকে চাঙা করতে নানান কৌশল বেছে নিচ্ছে। একইভাবে অভ্যন্তরীণ ভ্রমণকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কীভাবে?
বেলজিয়াম এক্ষেত্রে উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। দেশীয় পর্যটনের বিকাশে অন্যরকম একটি উদ্যোগ নিয়েছে দেশটির সরকার। এর অংশ হিসেবে সব নাগরিক বিনামূল্যে ১০ বার ট্রেনে যাতায়াতের পাস পাচ্ছেন।
শুধু তাই নয়, অভ্যন্তরীণ পর্যটনের বিকাশে চাকরিজীবীদের শুল্কমুক্ত ৩০০ ইউরো তথা ৩০ হাজার টাকা করে (ভাউচার) দেওয়া হচ্ছে। এগুলো সিনেমা হল, মঞ্চ, জাদুঘর, রেস্তোরাঁয় ব্যবহার করা যাবে।
কোভিড-১৯ রোগের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে তিন মাস ধরে লকডাউন ছিল বেলজিয়ামে। গত ৮ জুন তৃতীয় ধাপে তা শিথিল করা হয়। ফলে ওইদিন থেকে ক্যাফে, রেস্তোরাঁ ও হোটেল ফের খুলেছে। তবে সবখানে সামাজিক দূরত্ব (দেড় মিটার) বজায় রাখা হচ্ছে। সব দোকানপাট রাত ১টার মধ্যে বন্ধ করা বাধ্যতামূলক।
গত ১৫ জুন সীমান্ত খুলে দিয়েছে দেশটি। যদিও ভ্রমণে বিধিনিষেধ থাকায় আপাতত আন্তর্জাতিক পর্যটক সংখ্যা সীমিত থাকছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশীয় পর্যটনের বিকাশে জোর দিতে বেলজিয়াম সরকার রেল পাস প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। একইসঙ্গে লক্ষ্য অর্থনীতিকে চাঙা করা। হসপিটালিটি খাতের কর কমানো হয়েছে। এছাড়া মাতৃত্ব ও পিতৃত্বকালীন ছুটি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত রয়েছে।
রেল পাস কার্যকর থাকবে ১ জুলাই থেকে আগামী ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। একটি পাস দিয়ে বেলজিয়ামের যেকোনও গন্তব্যে একজন ব্যক্তি ১০ বার ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারবেন।
করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের কারণে এবারের বসন্তে সবাইকে গৃহবন্দি থাকতে হয়েছে। তাই বিনামূল্যে রেল পাস পেয়ে নিরাপদে ভ্রমণ করার সম্ভাবনা রয়েছে অসংখ্য মানুষের।
সাধারণত বেলজিয়ামে ১০টি রেল ভ্রমণে ২৬ বছরের বেশি বয়সী প্রত্যেক যাত্রীকে গুনতে হয় ৮৩ ইউরো (৮ হাজার টাকা)। কিন্তু সরকারি পাস পেলে বিনামূল্যে যাতায়াত করা যাবে। এছাড়া নিজেদের বাইসাইকেল ট্রেনে বিনামূল্যে নিতে পারবেন যাত্রীরা।
বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস এবং দেশটির বড় শহর গেন্ট, ব্রুজ ও আন্টওয়ার্পসহ সবখানে ট্রেনে চড়ে অনায়াসে যাতায়াত করা যায়। সেই সঙ্গে আর্ডেনসস অঞ্চলের পাহাড়ি বনভূমিতে যেতে পারেন ভ্রমণপিপাসুরা।
তবে জাতীয় রেল সংস্থার দাবি, সরকার তাদের সঙ্গে কোনও পরামর্শ না করেই রেল পাস বিতরণের ঘোষণা দিয়েছে। সরকারি রেল প্রতিষ্ঠান এসএনসিবি’র ধারণা, এর মাধ্যমে ২০২০ সালে ১০ কোটি অতিরিক্ত ভ্রমণের বোঝা সামলাতে হবে তাদের। তাছাড়া নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
অনেক দেশ গণপরিবহনে যাতায়াতের ক্ষেত্রে মুখে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। এছাড়া রেল সংস্থাগুলো সুরক্ষা ব্যবস্থা বজায় থাকে এমন আসনের মডেল নিয়ে ভাবছে। লন্ডন ও চীন ভিত্তিক ডিজাইন প্রতিষ্ঠান প্রিস্টম্যানগুড প্রস্তাব দিয়েছে, ট্রেনে সামাজিক দূরত্বের জন্য বাইক রাখার জায়গা ব্যবহার করা যেতে পারে।
ইউরোপের যেসব দেশে করোনাভাইরাসে মৃত্যুহার বেশি, বেলজিয়াম সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। ১ কোটি ১৫ লাখ জনসংখ্যার এই দেশে ৯ হাজার ৬০০রও বেশি মানুষ কোভিড-১৯ রোগে মারা গেছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন ট্রাভেল