X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

৫৭ ধারার মামলা নিয়ে মন্তব্য নয়, ফেসবুকে শিক্ষকদের দায়িত্বশীল হতে বললেন ঢাবি ভিসি

হারুন উর রশীদ
১৪ জুলাই ২০১৭, ১৭:৩৭আপডেট : ১৫ জুলাই ২০১৭, ০৮:৫৪

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক (ছবি: সংগৃহীত) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে একই বিভাগের আরেক শিক্ষকের তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা দায়ের এবং আরেকজন শিক্ষককে ফেসবুকে মন্তব্যের কারণে বাধ্যতামূলক ছুটির বিষয়টি তুমুল আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ৫৭ ধারার ওই মামলা নিয়ে মন্তব্য না করলেও শিক্ষকদের ফেসবুক ব্যবহারে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের কথা বলেছেন। আর তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার বিরুদ্ধেও তার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. ফাহমিদুল হকের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করেছেন একই বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল মনসুর আহমেদ। বিভাগের মাস্টার্সের ফল নিয়ে ড. ফাহমিদুল হক একটি ফেসবুক পোস্ট দেওয়ায় ওই মামলা দায়ের করা হয়।

এদিকে ফেসবুকে সহকর্মীদের সম্পর্কে ‘বাজে’ মন্তব্যের অভিযোগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রুশাদ ফরিদীকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলা ট্রিবিউনের সঙ্গে কথা বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তার কাছে প্রশ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ফেসবুক ব্যবহারে কোনও নিয়ন্ত্রণ বা নীতিমালা হচ্ছে কিনা?

জবাবে তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের ব্যাপারে আমরা কোনও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে চাই না। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করবেন। তবে আমরা প্রত্যাশা করি, তারা যখন ফেসবুক বা স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহার করবেন, তখন দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ব্যবহার করবেন। অন্যের সম্পর্কে অশোভন কিছু শিক্ষকরা করবেন, এটা কাম্য নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষকরা শেখাবেন, ছাত্র-ছাত্রীরা যেন দায়িত্বশীলতার সঙ্গে ফেসবুক বা স্যোশাল মিডিয়া ব্যবহার করে। আমরা চাই, শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের যে একটা শক্তি আছে, তা সঠিকভাবে ব্যবহার করুক। তাই শিক্ষকদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে কোনও নিয়ন্ত্রণ আরোপের চিন্তা করছি না।’

তাহলে শিক্ষকদের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে কোনও ওরিয়েন্টেশনের ব্যবস্থা হবে কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা ছাত্রদের এ বিষয় নিয়ে কথা বলি। আমরা বলি, তোমরা স্বাধীনভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মুক্ত গণমাধ্যম ব্যবহার করবে। কিন্তু মনে রাখবে, স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয়। তোমার স্বাধীনতা মানে অন্যের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করাও নয়। কাউকে অন্যায়ভাবে হেয় করা কিংবা কারও বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করা  কোনোভাবেই কাম্য নয়।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের ছেলেমেয়েরা দায়িত্বশীল আচরণ করে। দুই/চারজন একটু এদিক-ওদিক করে। তবে আমরা বুঝিয়ে বললে তা বোঝে এবং আপত্তিকর পোস্ট প্রত্যাহার করে নেয়।’

ফেসবুকে মন্তব্যকে ধরে একজন শিক্ষক আরেকজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলা করা ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে উপাচার্য বলেল, ‘এ নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। তারা দু’জনই আমাদের সহকর্মী। তারা দু’জনই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, দু’জনই একই বিভাগের অধ্যাপক। তাই বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে এলেও প্রতিকার পাবেন। আমরা দেখব। কিন্তু যখন আইনের বিষয় আসছে, তখন মন্তব্য করতে পারি না, এটি তাদের দু’জনের বিষয়।’

তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা নিয়ে আপনার কোনও ব্যক্তিগত অবস্থান আছে কিনা? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কারও স্বাধীন অভিমত প্রকাশে কোনও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হোক, এটা আমি চাই না। এজন্য যদি আইনের সংশোধন প্রয়োজন হয়, সেটা করা উচিত। কিন্তু একইভাবে কেউ যদি স্বাধীনতার অপব্যবহার করে, অন্যায়ভাবে কারও ওপর কিছু চাপিয়ে দেয়, সেখানেও আইনগত প্রতিকার যেন পাওয়া যায়, তারও ব্যবস্থা থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে দাঙ্গা লাগানোরও উদাহরণ আছে। জঙ্গি ও মৌলবাদীরারও তাদের নানা ধরনের অপকর্মে লিপ্ত আছে। সে সব জায়গায় একটা নিয়ন্ত্রণ দরকার।’

সাংবাদিকদের ব্যাপারে ঢাবি ভিসি বলেন, ‘এটা দেখতে হবে গণমাধ্যমকর্মী সাংবাদিক, যারা সম্পাদনা করেন, তারা যেন কোনও নিয়ন্ত্রণের মধ্যে পড়ে না যান। তাদের জন্য সহনশীলতা দেখাতে হবে। তবে আমি মনে করি, তাদের কোড অব কনডাক্ট থাকতে হবে। কোনও সংবাদমাধ্যম যদি স্বাধীনতার অপব্যবহার করে, তাহলে সেই সংবাদমাধ্যমকেই ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের কোনও কর্তৃপক্ষ বা সাংবাদিকদের সংগঠন এটা করতে পারে। অনেক দেশেই সাংবাদিকদের কোড অব কন্ডাক্ট, এথিকস সাংবাদিকরাই ঠিক করে নিয়েছে। কারণ কেউই জবাবদিহিতার বাইরে থাকতে পারে না। সর্বোপরি যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুক্তমত প্রকাশ করেন নিয়ম মেনে, যথার্থভাবে তাদের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।’

 আরও পড়ুন: শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষকের মামলা

/এমএনএইচ/

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রুশ বোমারু বিমান ভূপাতিতের দাবি ইউক্রেনের
রুশ বোমারু বিমান ভূপাতিতের দাবি ইউক্রেনের
মেলায় এসেছেন চিত্রনায়িকা, দেখতে যাওয়ার পথে ব্যবসায়ী নিহত
মেলায় এসেছেন চিত্রনায়িকা, দেখতে যাওয়ার পথে ব্যবসায়ী নিহত
এ জে মোহাম্মদ আলীর সম্মানে বন্ধ থাকবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ
এ জে মোহাম্মদ আলীর সম্মানে বন্ধ থাকবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ
শিশুর ত্বকের যত্নে বাজারে এলো ‘সিওডিল বেবি ক্রিম’
শিশুর ত্বকের যত্নে বাজারে এলো ‘সিওডিল বেবি ক্রিম’
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি