X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা

নুরুজ্জামান লাবু
০৯ আগস্ট ২০১৯, ১৬:০৩আপডেট : ০৯ আগস্ট ২০১৯, ১৬:৪৯

সিটিটিসির সংবাদ সম্মেলন পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গিরা। কিন্তু গোয়েন্দা নজরদারি ও আগাম অভিযানের মাধ্যমে জঙ্গিদের সেই পরিকল্পনা নস্যাতের দাবি করেছে ঢাকার কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট (সিটিটিসি)। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে হামলা পরিকল্পনার বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেননি তারা।

সিটিটিসির প্রধান ও ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম শুক্রবার (৯ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
মনিরুল ইসলাম বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে নব্য জেএমবির ‘উলফ প্যাক’ এর পাঁচ জঙ্গিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা  হলো, মোহাম্মদ শিবলী শাহাজাদ ওরফে সাথী, শাহ এম আসাদুল্লাহ মর্তুজা কবীর ওরফে আবাবীল, মাসরিক আহমেদ, আশরাফুল আল আমীন ওরফে তারেক ও এসএম তাসনিম রিফাত। এদের মধ্যে দু’জন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।
তিনি বলেন, ‘গ্রেফতারকৃত জঙ্গিরা পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে জঙ্গিদের পুরো পরিকল্পনাকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন সিটিটিসির কর্মকর্তারা। তাদের কাছ থেকে এমন কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে, যেগুলোর সঙ্গে সম্প্রতি খামারবাড়ি ও পল্টন এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া আইইডি’র সঙ্গে মিল রয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।’
সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলেন, গ্রেফতারকৃতরা দেশের ও বিদেশের কিছু সন্ত্রাসী সংগঠনের অনলাইন প্রচারণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পুলিশকে টার্গেট করে হামলার পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নের জন্য শলা-পরামর্শ করতে মিলিত হয়েছিল।
সিটিটিসি সূত্রে জানা গেছে, লোন উলফ বা একাকী শিকারি যাকে একাকী মুজাহিদ বলে জঙ্গিরা। উলফ প্যাক সেরকমই। এরা স্লিপার সেলের মতো কার্যক্রম পরিচালনা করে। তবে তাদের সাংগঠনিক কোনও ভিত্তি নেই বা সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। এরা ‘সেলফ র‌্যাডিক্যালাইজড’ হয়ে ছোট ছোট গ্রুপ তৈরি করে গ্লোবাল জিহাদ এগিয়ে নেওয়ার কথা বলে হামলার পরিকল্পনা করে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে শিবলী একটি ইস্তেহাদি হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আবাবীল ছিল তাদের আধ্যাত্মিক নেতা। ক্রিপ্টো কারেন্সির মাধ্যমে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজ করতো। এই হামলা চালাতে যে অর্থ লাগতো ডার্ক ওয়েব থেকে তা সংগ্রহের চেষ্টা করছিল। আমাদের কাছে অর্থ সংগ্রহের সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য প্রমাণও রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মাশরিক আহমেদের দায়িত্ব ছিল সীমান্ত দিয়ে অস্ত্র সংগ্রহ করা। সে যশোরের বাসিন্দা। এছাড়া তারেক ও তাসনিম রিফাত মূলত সদস্য সংগ্রহের কাজ করতো। এই পাঁচ জনের সঙ্গে আরও কিছু নাম পেয়েছি। তাদের গ্রেফতার করতে পারলে পুরো গ্রুপটি সম্পর্কে জানা যাবে।’

গ্রেফতার হওয়া উলফ প্যাকের ৫ সদস্য সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, এই গ্রুপের পাঁচ সদস্যের মধ্যে সাদী ২০১৪ সাল থেকে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত। হলি আর্টিজানে হামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত বাসারুজ্জামান চকলেটের মাধ্যমে সে জঙ্গিবাদে জড়ায়। তারা একসঙ্গে কলাবাগান এলাকার আলামীন মসজিদে ‘হালাকা’ (একত্রিত হওয়া) করতো।
সিটিটিসির উপ-কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, আবাবীল অনলাইনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। এরপর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ পড়তে গিয়ে তারা পরস্পর পরিচিত হয়ে ‘উলফ প্যাক’ গ্রুপটি গড়ে তোলে। আবাবীলের বন্ধু হলো মাশরিকের মাধ্যমে তাসনিম রিফাত এই গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হয়।

সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এই গ্রুপটির কাছ থেকে পুলিশের ওপর হামলার এমন কিছু কৌশল জানতে পেরেছেন, যা সত্যিই উদ্বেগের। বিষয়টি ইতোমধ্যে পুলিশ সদর দফতরের মাধ্যমে সারাদেশের সব ইউনিটকে জানানো হয়েছে। কৌশলগত কারণে তারা এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে চাইছেন না। তাহলে সাধারণ মানুষের মধ্যেও উদ্বেগ বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তারা।
শুরু থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ‘তাগুত বাহিনী’ আখ্যায়িত করে তাদের টার্গেট করে আসছিল জঙ্গিরা। গত কয়েক বছর ধরে সেই প্রবণতা আরও বেড়েছে। চলতি বছর অন্তত চারটি ঘটনায় পুলিশকে টার্গেট করে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গুলিস্তান ও মালিবাগের দু’টি ঘটনায় কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
সিটিটিসির প্রধান মনিরুল ইসলাম বলছেন, পুলিশের বিভিন্ন অভিযানে বেশি সংখ্যক জঙ্গিরা গ্রেফতার বা অভিযানে নিহত হয়েছে। সেজন্য  তারা পুলিশকে টার্গেট করছে।
সিটিটিসির কর্মকর্তারা বলছেন, হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর পুলিশের ধারাবাহিক জঙ্গিবিরোধী অভিযানের কারণে জঙ্গিরা অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। তবে একেবারেই তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি। গোপনে গোপনে তারা ফের সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। সাংগঠনিকভাবে সক্রিয় হতে না পেরে ‘লোন উলফ’ বা ‘উলফ প্যাক’-এর মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে হামলার জন্য আহ্বান জানানো হচ্ছে। সারা দুনিয়া জুড়েই এই প্রবণতা বেড়েছে।
সিটিটিসির অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘উলফ প্যাকে সাধারণত ৫-৭ জন সদস্য থাকে। আমরা গ্রেফতারকৃতদের আরও কয়েকজন সহযোগীর সম্পর্কে তথ্য পেয়েছি। তাদের গ্রেফতার করতে অভিযান চলমান রয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’


/এনএল/এসটি/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ন্যায়বিচার পাওয়া প্রত্যেকের মৌলিক অধিকার: প্রধান বিচারপতি
ন্যায়বিচার পাওয়া প্রত্যেকের মৌলিক অধিকার: প্রধান বিচারপতি
খারকিভে হামলা আরও তীব্র করবে রাশিয়া, আশঙ্কা ইউক্রেনের
খারকিভে হামলা আরও তীব্র করবে রাশিয়া, আশঙ্কা ইউক্রেনের
যে জাদুঘরের পরতে পরতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
যে জাদুঘরের পরতে পরতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
সর্বাধিক পঠিত
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
অতিরিক্ত ডিআইজি মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ ইসির
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
ইসরায়েলগামী অস্ত্রের জাহাজ নোঙর করতে দেয়নি স্পেন
ইসরায়েলগামী অস্ত্রের জাহাজ নোঙর করতে দেয়নি স্পেন
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
দাম কমেছে সবজি-মাংসের, তবু পরিস্থিতি অস্বাভাবিক
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির