X
মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪
১০ বৈশাখ ১৪৩১

টিকার দ্বিতীয় ডোজের পর কি সামাজিকীকরণ নিরাপদ?

ড. মালিহা শিফা, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ
২৫ এপ্রিল ২০২১, ২২:৩৯আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২১, ২২:৩৯

সারাদেশব্যাপী কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রদান শুরু হয় চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি। এর মধ্যে প্রায় ৬০ লক্ষের বেশি মানুষ প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী দ্বিতীয় ডোজ  নেওয়াও শুরু হয়েছে। ২টি টিকার ডোজ সম্পন্ন করার পর কি আমরা আগের মত সামাজিক জীবনে ফিরে যেতে পারবো নাকি এরপরও আমাদের কতটা সতর্ক হয়েই  চলতে হবে? আসুন এ বিষয়গুলো জেনে নেওয়া যাক।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে মহামারি চলাকালীন ভ্যাকসিন এর দুই ডোজ নেওয়ার পরও আবার অন্যদের সাথে সামাজিকীকরণ শুরু করার আগে বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা উচিত। ভ্যাকসিন ডোজ কমপ্লিট করেছেন এমন দুজনের জন্য একসাথে সময় কাটানো কতখানি নিরাপদ, সে বিষয় এখনও বিবেচনাধীন। ফাইজার এবং মোডার্না ভ্যাকসিনগুলো সর্বোচ্চ সুরক্ষায় পৌঁছানোর জন্য দ্বিতীয় ডোজের পরে ২ সপ্তাহ লাগে। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের জন্য এটি ৪ সপ্তাহ। যারা এই  টিকা পেয়েছেন তাদের এখনও মাস্ক পরতে হবে এবং জনসাধারণের মধ্যে সামাজিক বা শারীরিক দূরত্ব অনুশীলন করতে হবে।

ভ্যাকসিন দ্বারা সুরক্ষিত হওয়ার জন্য  আমাদের আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে?

চলমান ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলোতে দেখা গেছে, কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনটির দ্বিতীয় ডোজ যদি ৪ থেকে ১২ সপ্তাহের ব্যবধানে দেওয়া হয়, তাহলে এটি রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। কোভিড-১৯ রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষার সময়কালটি বর্তমানে অজানা। কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজের ৪ সপ্তাহ পরে আপনি প্রতিরক্ষামূলক প্রতিরোধ ক্ষমতা পেতে পারেন। অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা ভ্যাকসিনের আন্তর্জাতিক ক্লিনিকাল ট্রায়ালগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, প্রথম এবং দ্বিতীয় ডোজগুলোর মধ্যে দীর্ঘতর ব্যবধান রেখে এর সামগ্রিক কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এই ভ্যাকসিনটি। প্রথম ডোজ প্রয়োগের পরে এটি ৭০% কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়। কিছু প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে যা ডোজের ২ সপ্তাহ পর বিকাশ শুরু করে, তবে আপনি যদি ৪ সপ্তাহ অপেক্ষা করেন তাহলে এটি সবচেয়ে প্রতিরক্ষামূলক হয়।

ঘরের অভ্যন্তরে টিকা সম্পন্ন করা ব্যক্তিদের সাথে দেখা করা কি নিরাপদ?

সিডিসির মতে, টিকা দেওয়াদের মাস্ক বা শারীরিক দূরত্ব ছাড়াই ঘরের অভ্যন্তরে পুরোপুরি টিকা দেওয়া ব্যক্তিদের সাথে দেখা করা নিরাপদ। তবে বিশেষজ্ঞরা আরও কিছু বিষয় বিবেচনা করার আছে বলে জানিয়েছেন। একটি হলো আপনার বা আপনার বন্ধুর অন্তর্নিহিত স্বাস্থ্য পরিস্থিতি যা আপনাদের  উভয়কেই ভাইরাস থেকে গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকিতে ফেলছে কিনা। কারণ টিকা প্রাপ্তরা এখনও ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে কিনা এটি এখনও পরিস্কার হয়নি। যদি আপনি এবং আপনার বন্ধু উভয়ই সুস্থ আছেন এবং উভয়ই সম্পূর্ণরূপে টিকা প্রদান করেছেন এবং অল্প সময়ের জন্য একটি ভালো আলো ও বাতাস চলাচল করে এমন রুমে দেখা করতে চান, তবে আপনার মাস্ক ব্যাবহার না করলেও চলবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।

কেন এখনও মাস্ক পরতে হবে এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে?

জনসংখ্যার বেশিরভাগ লোককে টিকা দেওয়া না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যেকের জন্য শারীরিক দূরত্ব, মাস্ক পরা এবং হ্যান্ড হাইজিন অনুশীলনসহ জনস্বাস্থ্যের নির্দেশিকা মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ, এমনটাই সিডিসি বলেছে। পুরোপুরি টিকা দেওয়া হলেও, মনে রাখবেন এখনও ভাইরাসে  আক্রান্ত এবং অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। মর্ডানা এবং ফাইজার ভ্যাকসিনগুলো ৯৫ শতাংশ কার্যকর এবং এই টিকা প্রাপ্তরা প্রত্যেকে ধরে নিতে চান যে তারা ৯৫% শতাংশের মধ্যেই  রয়েছেন। তবে ভুলে গেলে চলবে না, তারাও কিন্তু এখনও ৫ শতাংশ ঝুঁকিতে রয়েছেন।

বর্তমানে বিশ্বজুড়ে আরও নতুন, আরও সংক্রামক রূপগুলো উদ্ভূত হয়েছে। প্রাথমিক তথ্য থেকে জানা যায়, বর্তমান ভ্যাকসিনগুলো এই নতুন স্ট্রেইনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারলেো সেগুলো কতোখানি কার্যকর হবে সেটি এখনও নিশ্চিত না। নতুন ভেরিয়েন্টগুলোতে ভ্যাকসিন কতটা ভালো লড়াই করতে পারে, তা পুরোপুরি বুঝতে আরও অধ্যয়নের প্রয়োজন।

কখন আমরা আবার স্বাভাবিকভাবে সামাজিকীকরণ করতে সক্ষম হব?

সবার মনে এখন একটাই প্রশ্ন, সেটা হলো কখন আবার আগের মতো অন্যের সাথে যোগাযোগ করা নিরাপদ হবে আর কখন আমরা আগের মতো স্বাধীন পৃথিবী ফিরে পাব? এটি হওয়ার জন্য, আমাদের এমন পর্যায়ে পৌঁছাতে হবে যখন মানুষের মধ্যে এই ভাইরাস সংক্রমণ করতে পারবে না এবং সহজেই কোভিড-১৯ তার বিস্তার করতে পারবে না। আমরা এখনও জানি না যে এই প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জনের জন্য জনসংখ্যার কত শতাংশকে ভ্যাকসিন দেওয়া দরকার।

তবে আশার কথা হচ্ছে, পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ভালো হতে চলেছে এবং আমাদের এই থমকে যাওয়া অবস্থার কোনও অগ্রগতি নেই এমন আর বলা যাচ্ছে না। মনে রাখতে হবে, এটি কোনও ম্যাজিকের মতো শেষ হবে না এবং আমরা খুব সহজেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যেতে পারবো এমন না। এটি থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা থাকতে হবে।

/এনএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে ‘বড় পরিবর্তন’ দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র
বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতিতে ‘বড় পরিবর্তন’ দেখছে না যুক্তরাষ্ট্র
পদে থেকেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন
পদে থেকেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন
জীবনানন্দ পুরস্কার পেলেন জাহিদ হায়দার ও মোস্তফা তারিকুল আহসান
জীবনানন্দ পুরস্কার পেলেন জাহিদ হায়দার ও মোস্তফা তারিকুল আহসান
শাকিবের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা অন্যরকম: চঞ্চল
শাকিবের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা অন্যরকম: চঞ্চল
সর্বাধিক পঠিত
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
রাজকুমার: নাম নিয়ে নায়িকার ক্ষোভ!
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
সাবেক আইজিপি বেনজীরের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করবে দুদক
তাপপ্রবাহ থেকে ত্বক বাঁচানোর ৮ টিপস
তাপপ্রবাহ থেকে ত্বক বাঁচানোর ৮ টিপস
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
মাতারবাড়ি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনছে বাংলাদেশ
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপমাত্রা আরও বাড়ার আভাস