টেডি উপহার হিসেবে জনপ্রিয় হয় গত শতাব্দীর গোড়ায়। বিশ শতকের প্রথম দশকে যুক্তরাষ্ট্রে মরিস মিচটম এবং জার্মানিতে রিচার্ড স্টিফ পৃথক পৃথকভাবে একই সময়ে এটি উদ্ভাবন করেন।
১৯০২ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট থিওডর টেডি রুজভেল্ট শিকারে বেরিয়েছিলেন। মিসিসিপির ও লুসিয়ানিয়ার সীমান্ত নিয়ে তখন সমস্যা চলছে। তার মধ্যেই তিনি বের হন শিকারে। কিন্তু অনেক খুঁজেও সেদিন মিসিসিপিতে শিকার পাননি তিনি। শিকারের খোঁজে তিনি অস্থির হয়ে পড়েন।
প্রেসিডেন্টকে খুশি করতে তার সঙ্গীরা ধরে আনেন এক লুসিয়ানিয়া কালো ভালুক ছানা। কিন্তু গাছের গুঁড়িতে বেঁধে রাখা আহত ভালুক ছানার উপর গুলি চালাতে মন চায়নি রুজভেল্টের। ছোট্ট ছানাটিকে ছেড়ে দেন তিনি।
‘ড্রইং দ্য লাইন ইন মিসিসিপি’ কার্টুনে এই গল্প তুলে ধরেন ওয়াশিংটন স্টার কার্টুনিস্ট ক্লিফর্ড বেরিম্যান। ছবিতে তিনি আঁকেন টেডি রুজভেল্ট রাইফেল হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। তার পিছনে পুঁচকে এক ভালুক ছানা।
এই কার্টুন দেখে অনুপ্রাণিত হন ব্রুকলিনের খেলনার দোকানের মালিক মরিস মিচম। ছোট্ট একটা নরম ভালুকছানার পুতুল তৈরি করেন, প্রেসিডেন্টের নামানুসারে নাম দেন 'টেডিস বিয়ার।' রুজভেল্টের কাছে একটা পুতুল পাঠিয়ে তার নাম ব্যবহার করার অনুমতিও নিয়ে নেন। তবে তা বিক্রি করার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না তার। দোকানের জানালার পাশে সাজিয়ে রাখেন টেডি। পাশে বেরিম্যানের আঁকা কার্টুনের কপি।
তাকে অবাক করে অনেকেই দোকানে ঢুকেই কিনতে চান টেডি। মিচম ছুটে যান রুজভেল্টের কাছে। তার ও তার স্ত্রীর বানানো বিয়ার বিক্রির অনুমতি চান। জন্ম হয় টেডি বিয়ারের। ১৯০৩ সালে তৈরি হয় আইডিয়াল টয় কোম্পানি। বাকি গল্প সবারই জানা।
ঠিক একই সময়ে জার্মানিতে রিচার্ড স্টিফের করা নকশানুযায়ী খেলনা তৈরিকারক প্রতিষ্ঠান স্টিফ ফার্ম একটি স্টাফ তথা মমি করা ভালুকছানার পুতুল তৈরি করে। ১৯০৩ সালের মার্চে লিপজিগের খেলনা মেলায় তারা সেটার প্রদর্শনী করে এবং এটি দেখে তখন নিউইয়র্কস্থ জর্জ বর্জফেল্ট অ্যান্ড কোম্পানির প্রতিনিধি হারম্যান বার্গ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ৩০০০ ভালুক অর্ডার করেন। যদিও স্টিফের রেকর্ডবুক অনুসারে ভালুকগুলো তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছানোর কোনও দলিলপ্রমাণ পাওয়া যায়নি এবং সেই মডেলের কোনও ভালুকও আর কখনও দেখা যায়নি; তাই লোকমুখে ছড়ায় যে পুতুলগুলো জাহাজডুবি হয়েছিলো। তবে গানথার ফিয়েফারের মতে, ঐ মডেলের পুতুলগুলো আজকের দিন পর্যন্ত থাকার মতো অত টেকসই ছিল না-এমন সম্ভাবনা প্রবল। যাইহোক, স্টিফ এবং মিচকম একই সময়ে প্রথম টেডি বিয়ার তৈরি করলেও আটলান্টিকের এপার-ওপার যোগাযোগব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে কেউই অপরজনের সৃষ্টির কথা জানতে পারেননি।
প্রথমদিকের টেডি বিয়ারগুলো বানানো হতো সত্যিকার ভালুকের মতো করে। তবে আধুনিক টেডি বিয়ারগুলোর হয় বড় বড় চোখ, চওড়া কপাল আর শিশুসুলভ রূপে। শুরুতে মোহেয়ার নামক উজ্জ্বল হলদে-বাদামী পশমে টেডি বিয়ারগুলো আবৃত থাকতো। আর বর্তমানে কৃত্রিম তন্তু, ভেলোর, তুলা অথবা ডেনিম, ক্যানভাস বা সাটিনের কাপড় দিয়েও টেডি তৈরি হচ্ছে।
তথ্যসূত্র: উইকিপিডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস