অ্যান্টিবায়োটিক বা ঔষধ সাময়িকভাবে আমাদেরকে দ্রুত রোগ সারিয়ে তুলতে সাহায্য করলেও তা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ধীরে ধীরে নষ্ট করে দেয়। এতে আমরা আরও বেশি ঔষধ নির্ভর হয়ে পড়ি। সঠিক নিয়মে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা তাই ভীষণ জরুরি। এটি শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে এবং ঔষধ নির্ভরতা অনেকাংশেই কমে যায়। জ্বর ও জ্বর পরবর্তী সময়ে কী খাচ্ছেন, দ্রুত সুস্থ হওয়ার জন্য সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ডেঙ্গু জ্বর হলে হাই প্রোটিন সমৃদ্ধ ডায়েট চার্ট মেনে চলুন। পাশাপাশি পানি ও পানিজাতীয় খাবার খান বেশি করে। ডাবের পানি, মালটা বা ডালিমের জুস খাওয়া যেতে পারে। সঙ্গে থাকতে পারে এক বা দুই পিস পাকা পেঁপে।
রক্তের প্লাটিলেট বাড়াতে ও জ্বরের ক্লান্তি কমাতে একটি বিশেষ স্যুপ বানিয়ে নিতে পারেন। রেসিপি জেনে নিন।
উপকরণ
- ১টি আস্ত মুরগি (হাড়গুলো থেঁতো করা)
- ১টি গোটা রসুন
- ২ টেবিল চামচ আদা কুচি
- ২টি টমেটো
- ৭/৮টি কালো গোলমরিচ
- ৪/৫ টুকরো কাঁচা পেঁপে
- ৪/৫ টি লেমন গ্রাস/লেবু পাতা (অপশনাল)
এই উপকরণগুলো একটি বড় প্রেসার কুকারে অথবা বড় সসপ্যানে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন যতক্ষণ পর্যন্ত না মুরগির হাড় নরম ও ভঙ্গুর হয়ে আসে (এতটাই সেদ্ধ করতে হবে)। এরপর তা নামিয়ে ছেঁকে তরল অংশটুকু একটি বাটিতে ঢেলে নিন।
অন্য একটি সসপ্যানে-
- ৪ টি ডিম (ফেটিয়ে নিন)
- ৭/৮ টি খোসা ছাড়ানো মাঝারি সাইজের চিংড়ি (টুকরো করে কেটে নিন)
- সয়াসস ১ টেবিল চামচ
- টমেটো সস ৩ টেবিল চামচ
- লেবুর রস ২ টেবিল চামচ
- কাঁচা মরিচ ২/৩ টি
- চিনি ৩ টেবিল চামচ
- লবণ (স্বাদমতো)
জ্বরের সাথে পাতলা পায়খানা থাকলে একটি কাঁচা কলাও দিতে পারেন। শিশুদের কাছে স্যুপটাকে মজাদার করার জন্য দুই প্যাকেট থাই স্যুপ ১ বাটি পানিতে গুলিয়ে নিয়ে এই মিশ্রণে যোগ করতে পারেন। এখন ছেঁকে রাখা তরল চিকেন স্টকটুকু এই সসপ্যানে ঢেলে নিন।
সমস্ত উপকরণ একসঙ্গে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন এবং প্রয়োজনে দুই-তিন কাপ পানি যোগ করুন। এখন সসপ্যানটিকে চুলায় বসিয়ে মিডিয়াম হিটে ১০-১২ মিনিট অনবরত নাড়তে থাকুন। স্যুপটি যেন ছয় বাটি পরিমাণ পরিবেশন করা যায়। একটু ঘন হয়ে গেলে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন। রোগীকে চার বেলা অর্থাৎ দিনে চারবার এই স্যুপটি খেতে দিন। প্রতিবার পরিবেশন এর আগে যেটুকু স্যুপ খাওয়াবেন, সেটুকু ঢেলে নিয়ে গরম করে দিন। এই হাই প্রোটিন স্যুপে চিনি ও লবণ থাকায় শরীরের ইলেকট্রোলাইট ব্যালেন্স ঠিক রাখতেও সাহায্য করবে।
জ্বরের তৃতীয় দিনে, আধা কাপ চাল ও আধা কাপ ডালের সাথে দুই বা তিন ধরনের সবজি যেমন, গাজর, মিষ্টি কুমড়া বা পটল ছোট ছোট টুকরো করে খুব নরম সবজি খিচুড়ি খাওয়ানো যেতে পারে। এছাড়াও দুধের সাথে দুটি খেজুর বা পাকা কলা দিয়ে মিল্কশেক করে পরিবেশন করা যেতে পারে।
জ্বরের সময় রোগীর হজম ক্ষমতা খুব কম থাকে তাই তেল ছাড়া সেদ্ধ খাবার শরীরে খুব দ্রুত শোষিত হয়। এ সময় রোগীর খাবারে অরুচি হয় এবং চিবিয়ে খাবার ক্ষমতা থাকে না। তাই যদি এই হাই প্রোটিনযুক্ত খাবারের সাথে সুষম খাবার সুস্বাদু করে পরিবেশন করা যায়, তবে তা রক্তের প্লাটিলেট বাড়াতে এবং সর্বোপরি দ্রুত সুস্থ করে তুলতে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
লেখক:
পিএইচডি গবেষক (বঙ্গবন্ধু ফেলো)
ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিন, সিএমইউ, থাইল্যান্ড
সহকারী অধ্যাপক, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা