ম্যাগনেসিয়াম আমাদের শরীরের জন্য একটি অপরিহার্য খনিজ যা পেশী সংকোচন, স্নায়ুর কার্যকারিতা এবং হাড়ের স্বাস্থ্য ঠিক রাখাসহ অসংখ্য শারীরিক ক্রিয়াকলাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দিনে ৩৬০ থেকে ৪১০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম খাওয়া উচিত। ম্যাগনেসিয়ামের অভাব হলে বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিতে পারে। কয়েকটি সাধারণ উপসর্গের ব্যাপারে জেনে নিন, যা শরীরে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি নির্দেশ করে।
১। রাতে পায়ে ব্যথা হচ্ছে?
ম্যাগনেসিয়ামের অভাবজনিত সবচেয়ে সাধারণ এবং লক্ষণীয় লক্ষণগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে পেশীতে খিঁচুনি এবং মোচড়ানো। ম্যাগনেসিয়াম পেশীর কার্যকারিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে পেশী ফাইবার শিথিলকরণের জন্য খনিজটি অপরিহার্য। যখন ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা কম থাকে, তখন পেশী সংকুচিত এবং ক্র্যাম্প হতে পারে। বিশেষ করে রাতে এটি বেশি হয়।
২। খুব বেশি পরিশ্রম না করেও ক্লান্ত লাগে?
ব্যাখ্যাতীত ক্লান্তি এবং দুর্বলতার কারণ হতে পারে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি। এই খনিজটি শক্তি উৎপাদনের জন্য অপরিহার্য। যখন ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হয়, তখন শরীর পর্যাপ্ত শক্তি উৎপন্ন করতে সংগ্রাম করে। ফলে ক্লান্তি এবং দুর্বলতার অনুভূতি হয়।
৩। আজকাল প্রায়ই মাথা ব্যথা হচ্ছে?
হতে পারে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতিতে ভুগছেন। ম্যাগনেসিয়াম অক্সাইড মাইগ্রেনের চিকিৎসার জন্য বেশ কয়েকবার ব্যবহার করা হয়। অতএব ঘনঘন মাথা ব্যথায় ভুগলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
৪। হঠাৎ খাবার খাওয়া কমে গেছে?
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল লক্ষণগুলো ম্যাগনেসিয়ামের অভাবের আরেকটি বৈশিষ্ট্য। কম ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রার কারণে বমি বমি ভাব, বমি এবং ক্ষুধা হ্রাস হতে পারে। ম্যাগনেসিয়াম হজম প্রক্রিয়ায় জড়িত এবং গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টকে প্রশমিত করতে সাহায্য করতে পারে। খনিজটির ঘাটতি এই কার্যক্রমগুলোকে ব্যাহত করে, যার ফলে অস্বস্তি হয় এবং খাদ্য গ্রহণ কমে যায়।
৫। প্রায়ই চোখ কেঁপে ওঠে?
ম্যাগনেসিয়াম পেশী শিথিল করতে সাহায্য করে। ম্যাগনেসিয়ামের কম মাত্রা পেশীগুলোকে অপ্রয়োজনীয় চাপ দেয়। এটি চোখকে সঠিকভাবে শিথিল হতে দেয় না। তাই চোখ কাঁপতে থাকে।
৬। আজকাল প্রায়ই ভুগছেন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায়?
একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ হিসেবে ম্যাগনেসিয়াম অন্ত্রের গতিবিধির পাশাপাশি অন্যান্য কার্য সম্পাদনে সহায়তা করে। ম্যাগনেসিয়াম অন্ত্রে পানির পরিমাণ বাড়ায় যা মলত্যাগে সাহায্য করে। ম্যাগনেসিয়ামের অভাব কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়ায়।
৭। ত্বকে সুঁই ফোটার মতো অনুভূতি হয়?
ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হলে অসাড়তা হাত বা পায়ে সুঁই ফোটার মতো অনুভূতি হতে পারে।
৮। আচরণে পরিবর্তন লক্ষ করছেন?
ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা কমে গেলে মেজাজ এবং আচরণ পরিবর্তন হতে পারে। উদ্বেগ, হতাশা, বিরক্তি এবং সামগ্রিক ব্যক্তিত্বের পরিবর্তন অনুভব করতে পারেন এর অভাবে। ম্যাগনেসিয়াম নিউরোট্রান্সমিটার নিয়ন্ত্রণ এবং শরীরের চাপের প্রতিক্রিয়াতে জড়িত, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৯। আজকাল বুক ধড়ফড় করছে বেশি?
ম্যাগনেসিয়াম সঠিক মাত্রা হার্ট ফাংশনের জন্য অপরিহার্য, কারণ এটি হৃদযন্ত্র এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ম্যাগনেসিয়ামের মাত্রা কমে গেলে বুক ধড়ফড় বা অনিয়মিত হৃদস্পন্দন হতে পারে।
১০। ইদানিং ভারী কাজ করতে কষ্ট হচ্ছে?
ক্র্যাম্প এবং খিঁচুনি ছাড়াও ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতির ফলে পেশীর সাধারণ দুর্বলতা দেখা দিতে পারে। সামগ্রিক শক্তি এবং গতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে এই ঘাটতি। এতে ভারী কাজ করতে কষ্ট হয়।
যেসব খাবারে মিলবে ম্যাগনেসিয়াম
গাঢ় রঙের পাতাযুক্ত শাকে পাবেন পর্যাপ্ত ম্যাগনেসিয়াম। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের বীজ যেমন কুমড়ার বিচি, সবুজ রঙের ফল স্কোয়াসের বীজ এবং বাদামে পাওয়া যায় ম্যাগনেসিয়াম। বরবটি, শিম, সয়াবিন ও নানা ধরনের ডালও ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস। মাছ খেতে পারেন নিয়মিত। কলা, কিশমিশ, খেজুরে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। ননি ছাড়া দই ও পনিরেও পাবেন এটি।
তথ্য: টাইমস অব ইন্ডিয়া