প্রশ্ন: আমি প্রায় ৩০ কেজি ওভার ওয়েট। চিকিৎসক আমাকে নিয়ম মেনে খেতে বলেছেন। তেলে ভাজা খাবার ও মিষ্টিজাতীয় খাবার সম্পূর্ণ নিষেধ। অথচ আমি কোনও কিছুই মানি না। বাসায় আমার মা আমাকে সব কিছু খেতে দেন না বলে আমি বাইরে খাই। যা ইচ্ছা তাই খাই, কোনোভাবেই এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। আমার ক্ষুধা না লাগলেও খেতে ইচ্ছা করে। পাড়ার দোকানের বাসি খাবার লিফটে দাঁড়িয়ে খাই কারণ বাসায় গেলে মা খেতে দেবেন না। অথচ আমার কিন্তু ক্ষুধা থাকে না সবসময়। এটা কি মানসিক রোগ? কীভাবে এই অনিয়ন্ত্রিত খাওয়া নিয়ন্ত্রণে আনবো?
উত্তর: কমপালসিভ ইটিং-এর কারণে আপনি খাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। এর ফলে আপনার স্ট্রেস বেড়ে যাচ্ছে এবং ম্যালএডাপডিভ স্ট্রেস রেসপন্সের কারণে আরও খেতে ইচ্ছা করছে ক্ষুধা না থাকা সত্ত্বেও। আপনি জোর করেও এই সমস্যা থেকে বের হতে পারছেন না কারণ আপনার পরিপাকতন্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার (গাট-মাইক্রোবায়োম) ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খাবারে পরিপুষ্ট হয় এমন ধরনের গাট ব্যাকটেরিয়া আপনার মস্তিষ্ককে প্রভাবিত করছে, ফলে আপনি আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এসব খাদ্য খেয়ে চলেছেন। সুতরাং এই চক্র থেকে বের হতে হলে আপনাকে আপনার পরিপাকতন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে হবে। প্রাথমিকভাবে, আপনার খাদ্যতালিকায় টক দই, শাকসবজি, দেশি ফল, কাঁচা বাদাম, অলিভ অয়েল, সরিষার তেল, খাঁটি ঘি এগুলো যোগ করুন। তারপর আপনি ফ্যাট এডাপটেশন ও ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং শুরু করতে পারবেন এবং ধীরে ধীরে আপনার পরিপাকতন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্য ফিরে আসবে এবং আপনার বাইরের ক্ষতিকর খাবার খাওয়ার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। সেই সাথে মেডিটেশন, ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন। প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট খালি পায়ে মাঠে বা ঘাসের উপরে হাঁটুন।
প্রশ্ন: আমি একজন টক্সিক মানুষ। আমার মধ্যে টক্সিক মানুষের সব ধরনের বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন অযথা অন্যকে ইমোশোনাল ব্ল্যাকমেইল করা, নিজেকে ভিক্টিম সাজিয়ে অন্যের সহানুভূতি আদায় করা, স্বার্থপরতা। সত্যি কথা হচ্ছে এগুলো সবই আমার পরিবার থেকে পাওয়া। আমার মা চরম একজন টক্সিক মানুষ ছিলেন। আমি এইসব আচরণ দেখেই বড় হয়েছি এবং নিজের অজান্তেই নিজের মধ্যে ধারণ করেছি। এখন বুঝলেও বের হয়ে আসতে পারছি না। কী করবো?
উত্তর: আপনি প্রকৃতই যদি একজন টক্সিক মানুষ হতেন, তাহলে আপনার নিজের কাছে মনে হতো না যে আপনি টক্সিক। আপনার কাছে মনে হতো, অন্য সব মানুষ আপনার সরলতার সুযোগ নিয়ে আপনাকে এক্সপ্লয়েট করছে! আপনার কাছে আরও মনে হতো, আপনার আপনজনেরা সবাই আপনাকে ভুল বুঝছে এবং আপনি যাকেই ভালোবাসছেন সেই আপনাকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। আপনার মধ্যে নিজের অজান্তে নিজের বিরুদ্ধে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। আপনি বর্তমানে চরম হতাশা বা ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের ঝুঁকির মধ্যে আছেন। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আপনাকে নিচের পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করতে হবে-
নিজেকে ভালোবাসুন: নিজেকে নিঃশর্তভাবে ভালোবাসুন এবং ভালো-খারাপ সকল বৈশিষ্ট্যকে নিজেকে মেনে নিন। আপনার মনে প্রশান্তি আসবে, মনের ক্ষত নিরাময় হতে শুরু করবে। নিজের নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যের সাথে যুদ্ধ না করে সেগুলোকে নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করে মেনে নিন।
ব্রিদিং এক্সারসাইজ: শ্বাসকে নিয়ন্ত্রণে রাখুন। শ্বাস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আপনি আপনার প্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। মনে মনে ১-২-৩-৪ গুনতে গুনতে গভীর শ্বাস নিন। তারপর মনে মনে ১-২-৩-৪ গুনতে গুনতে শ্বাস ধরে রাখুন। সবশেষে মনে মনে ১-২-৩-৪-৫-৬ গুনতে গুনতে পেট ভেতর দিকে টেনে নাক দিয়েই ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন। যখনই মনে হবে তখন একটানা কয়েবার এরকম করুন।
প্রতিদিন ১০-১৫ মিনিট খালিপায়ে মাটি বা ঘাসের উপর হাঁটুন।
গাছপালা, প্রকৃতির মাঝে, মানুষ এবং অন্য প্রাণীদের মাঝে বেশি সময় কাটান।