প্রশ্ন: আমার বয়স ৩০ বছর। আমি কাজের প্রায়োরিটি ঠিক করতে পারি না। দেখা যায় একটি বা দুটি কাজ ভালো করে শেষ করার চেষ্টা করছি, কিন্তু বাকি কাজ পড়েই আছে। সংসারের অনেক কাজ সামলে নিজের জন্য সময় বের করতে পারি না। তাও কাজ শেষ হয় না। ভালো একটা মুভি দেখার সময় পাই না, গান শোনার সময় পাই না। মনে হয় সারাক্ষণই দৌড়াচ্ছি, কিন্তু কাজ শেষ হচ্ছে না। মাঝে মাঝে হতাশা কাজ করে। সারাক্ষণ এভাবে কাজ করা আমার মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এটা বুঝি। কিন্তু সমাধান পাই না।
উত্তর: বেঁচে থাকার অপর নামই জীবন। বেঁচে থাকার জন্য আমাদেরকে সচেতনভাবে কোনও কিছুই করতে হয় না। কোনও চেষ্টা ছাড়াই আমরা সবাই বেঁচে থাকতে পারি এবং বেঁচে থাকি। আমরা শৈশব থেকে শিখে এসেছি যে, বেঁচে থাকতে হলে আমাকে আমার চাইতে বড় হতে হবে, সাধ্যাতীত কিছু করতে হবে। ফলে আমরা আমাদের পারফরমেন্স নিয়ে সবসময় হীনমন্যতায় ভুগি, মনে করি আমি যা কিছু করতে পারতাম তা করতে পারছি না। আমরা আমাদের সাধ্যের বাইরে লক্ষ্য নির্ধারণ করি যে লক্ষ্যে আমরা কখনোই পৌঁছাতে পারি না এবং সেটা নিয়ে আমাদের আক্ষেপেরও কোনও সীমা থাকে না। এই পৌনঃপুনিক চক্র আমাদের ভেতরে দীর্ঘমেয়াদী হতাশা তৈরি করে। এই চক্র থেকে বের হতে হলে আমাদেরকে প্রকৃতির ছন্দের কাছে নিঃশর্ত আত্মসমর্পন করতে হবে। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে আমরা যতটুকু করতে পারছি, প্রাকৃতিকভাবে ততটুকুই আমাদের পক্ষে করার কথা ছিল। এর চাইতে বেশিও, না কমও না। এই ছন্দটাকে যখনই আমরা উপলব্ধি করতে পারবো, তখনই আমাদের ভেতরে আমাদের পারফরম্যান্স নিয়ে আর কোনও আক্ষেপ থাকবে না। তখনই আমাদের ভেতরে এক ধরনের প্রশান্তি নেমে আসবে। তখন আমাদের শরীরে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসলের মাত্রা কমে আসবে, ডোপামিন এবং এন্ডোরফিনের মাত্রা বেড়ে যাবে, আমাদের শ্বাস প্রশ্বাস ধীরলয়ে চলবে এবং আমাদের ব্রেন ওয়েভ ফ্রিকোয়েন্সি আলফা বা তার কাছাকাছি মাত্রায় নেমে আসবে। এরকম অবস্থায় যখন যে সিদ্ধান্তটা নেওয়া প্রয়োজন, সেটাই আমাদের সচেতনতার মধ্যে অনায়াসে চলে আসবে।
প্রশ্ন: আমার বয়স ৩৫ বছর। দীর্ঘদিন স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির মানসিক অত্যাচার সহ্য করে শেষ পর্যন্ত ডিভোর্স দিয়েছি। ১০ বছরের সংসার ছিল, ৮ বছরের একটি সন্তান আছে আমাদের। কিন্তু ডিভোর্সের পর থেকে প্রচণ্ড ট্রমা কাজ করছে। কিছুই ভালো লাগে না। বাচ্চাটার দিকে তাকালে বুক ভেঙে কান্না আসে। মনে হয় আমি আর উঠে দাঁড়াতে পারবো না।
উত্তর: আমাদের জীবন ভার্চুয়াল রিয়ালিটি গেমের মতো। এখানে একটার পর একটা প্রতিকূলতা আসবে এবং সেটাকে সাহসিকতার সাথে মোকাবেলা করতে হবে। কখনও কখনও মনে হবে সামনে বুঝি আর কোনও পথ খোলা নেই। তখন যদি আমরা অনিশ্চয়তার মাঝে নিজেদেরকে সম্পূর্ণভাবে সঁপে দিতে পারি, সামনে যে পরিস্থিতিই আমার জন্য অপেক্ষা করুক না কেন, সেটাকে প্রকৃতির ছন্দ হিসেবে নির্দ্বিধায় মেনে নেওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখতে পারি, তখনই জীবনের অনিশ্চিত গতিপথ আমাদের মধ্যে রোমাঞ্চের শিহরণ তৈরি করবে। জীবনটা আর তখন আমাদের কাছে একঘেয়ে মনে হবে না। বিপদকে এড়াতে চাইলে বিপদ কখনোই আপনার পিছু ছাড়বে না। কিন্তু যখন আপনি বিপদকে ভালোবেসে বিপদে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য দৃঢ় সংকল্প করবেন, তখন বিপদই আপনাকে এড়িয়ে চলবে এবং চাইলেও আপনি তখন বিপদের সন্ধান পাবেন না। শেষ বলে কিছু নেই। শেষ যেখানে, শুরু সেখানে।