একুশ উপলক্ষে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউস নিয়ে এসেছে বর্ণমালাখচিত পোশাক। শুধু কী পোশাকে? গয়না কিংবা টিপেও বর্ণমালার জায়গা করে নিয়েছে। একুশে ফেব্রুয়ারিতে তো বটেই, পাশাপাশি সারা বছরই এগুলো পছন্দ করছেন এখনকার তরুণরা।
ফ্যাশনে বর্ণমালা জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে মূলত ২০০০ সালের পরবর্তী সময় থেকে। ডিজাইনার আনিলা হক পোশাকে বর্ণমালা নিয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ করেন যা তরুণদের মধ্যে ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। একুশের চেতনা ফ্যাশনকে ভিন্ন আঙ্গিকে প্রকাশ করতে শুরু করে।
বর্ণমালা খচিত পোশাকের সর্বপ্রথম প্রচলনটা অবশ্য শুরু হয়েছিল স্বাধীনতারও বহু আগে। চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান তার সৃজনশীলতাকে মূর্ত করে তোলেন পোশাকের ক্যানভাসে। ‘সেটা ১৯৫৬ কিংবা ৫৭ সালের কথা। আমাদের একটা দোকান ছিল, নাম রূপায়ন। দোকানটি পরিচালনা করতেন মা মরিয়ম বেগম। মূলত সুতি পোশাকের উপর ব্লক প্রিন্টের কাজ হতো এখানে। শাড়িতে বর্ণমালা খোদাই করার কাজ সর্বপ্রথম শুরু হয় এখান থেকেই। তখন কাঠের ব্লকের মধ্যে বর্ণমালার আকার করে ছাপ দেওয়া হতো শাড়িজুড়ে’- বলছিলেন কামরুল হাসানের মেয়ে সুমনা হাসান। তখন নারীরা প্রভাতফেরিতে অংশ নেওয়ার সময় মোটা কালো পাড়ের সাদা শাড়ি বেছে নিতো। নিতান্তই সাদামাটা শাড়িতে বাড়তি মাত্রা যোগ করে খানিকটা নতুনত্ব নিয়ে আসার চেষ্টা থেকেই শিল্পী কামরুল হাসান বর্ণমালা নিয়ে আসেন পোশাকে। শাড়ির বিশাল ক্যানভাসজুড়ে খেলা করতে থাকে অ আ ক খ। এই শাড়িগুলো তখন তুমুল সাড়া ফেলেছিল তরুণীদের মধ্যে। বিশেষ করে যারা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন, তাদের জন্য আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়ায় এই শাড়ি। ২০ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে একেকটি শাড়ি বিক্রি হতো তখন, যা ছিল সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যেই। তখন বুটিক বা পোশাকের দোকান ছিল না খুব একটা। বর্ণমালার শাড়ির চাহিদা মেটাতে তাই হিমশিম খেতে হতো রূপায়নকে।
এরপর যুগে যুগে প্রাণের ভাষা বারবারই উঠে এসেছে আমাদের বসনে, জীবনযাপনে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম মায়ের ভাষাকে ভীষণ ভালোবেসে ঠাই দিয়েছে জীবনের সর্বস্তরে।