প্রশ্ন: আমার বয়স ২৯ বছর। আমার নানা বিষয় নিয়ে আফসোস হয়। কোনো একটা ভুল করে ফেললে সেটা নিয়ে খুব আপসেট হয়ে পড়ি। যেমন কেউ হয়তো আমাকে ঠকিয়েছে। বা আমার ভুলের কারণে আমি অনেকগুলো টাকা হারিয়েছি৷ এই আফসোসে আমি রাতের পর রাত ঘুমাই না। ঘুম ভেংগে মনে হয় ইশ এভাবে না করে ওভাবে করলে হয়তো এই ক্ষতিটা হতো না আমার। এই সমস্যা কীভাবে কাটিয়ে উঠবো?
উত্তর: ১. বাস্তবতা মেনে ভুল থেকে শিক্ষা নিন: যা ঘটে গেছে, তা পরিবর্তন করা সম্ভব নয়। এটা মেনে নিতে শিখুন। বারবার যদি এমন না করে অমন করতাম ভাবলে কেবল কষ্টই বাড়বে, কোনও সমাধান আসবে না। নিজেকে বলুন, হ্যাঁ, আমার ভুল হয়েছে বা আমি ক্ষতির শিকার হয়েছি। এটা কষ্টের, কিন্তু এটা অতীত। আফসোস করার পরিবর্তে ঘটনাটি থেকে কী শিখলেন সেদিকে মনোযোগ দিন। কেন ভুলটি হয়েছিল? ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতি এড়াতে কী কী করতে পারেন? কোন সিদ্ধান্তের কারণে ঠকতে হয়েছে বা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে? সেই কারণগুলো বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করুন। এটিকে একটি অভিজ্ঞতা হিসেবে দেখুন, ব্যর্থতা হিসেবে নয়।
২. নিজেকে ক্ষমা করুন: মানুষ মাত্রই ভুল করে। আপনিও তার ব্যতিক্রম নন। নিজের প্রতি সদয় হোন। ভুলের জন্য নিজেকে ক্রমাগত দোষারোপ করতে থাকলে মানসিক শান্তি নষ্ট হবে। নিজেকে বলুন যে আপনি আপনার তখনকার জ্ঞান ও পরিস্থিতি অনুযায়ী সেরা সিদ্ধান্তটিই নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
৩. মাইন্ডফুলনেস বা মননশীলতা অনুশীলন: মাইন্ডফুলনেস আপনাকে বর্তমান মুহূর্তে মনোযোগ দিতে শেখায়। যখন অতীতের চিন্তা আপনাকে কষ্ট দেবে, তখন আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে মনোযোগ দিন অথবা আপনার চারপাশের পাঁচটি জিনিস লক্ষ্য করুন (কী দেখছেন, শুনছেন, গন্ধ পাচ্ছেন ইত্যাদি)। এটি আপনাকে বর্তমান সময়ে ফিরিয়ে আনবে।
৪. ঘুমের রুটিন উন্নত করুন: প্রতিদিন একই সময়ে ঘুমাতে যান এবং ঘুম থেকে উঠুন। ঘুমানোর অন্তত এক ঘন্টা আগে মোবাইল, ল্যাপটপ বা টিভি দেখা বন্ধ করুন। চা, কফি বা ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় সন্ধ্যার পর এড়িয়ে চলুন। যদি ঘুম না আসে, বিছানায় ছটফট না করে উঠে কিছুক্ষণ শান্ত কোনও কাজ করুন, তারপর আবার ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
প্রশ্ন: আমার বয়স ২৩ বছর। আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক বেশি সময় কাটাই। চেষ্টা করেও বের হতে পারছি না। এতে হতাশা বাড়ছে দিন দিন।
উত্তর: ১. কেন ব্যবহার করছেন বুঝুন: কোন সময়ে বা কোন পরিস্থিতিতে আপনি সবচেয়ে বেশি সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন? (যেমন - বোর লাগলে, একা থাকলে, কাজের ফাঁকে, ঘুমানোর আগে?)। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে আপনি আসলে কী পেতে চাইছেন? (বিনোদন, অন্যের জীবনে কী ঘটছে তা জানা (FOMO - Fear of Missing Out), একাকীত্ব দূর করা, নাকি নিছকই অভ্যাস?)। এই কারণগুলো বুঝতে পারলে সেগুলোর বিকল্প সমাধান খোঁজা সহজ হবে।
২. ব্যবহারের সময় ট্র্যাক করুন: অনেক স্মার্টফোনে এখন ডিজিটাল ওয়েলবিং (Digital Wellbeing) বা স্ক্রিন টাইম (Screen Time) ফিচার থাকে। এটি ব্যবহার করে দেখুন প্রতিদিন কোন অ্যাপে ঠিক কত সময় দিচ্ছেন। নির্দিষ্ট সংখ্যাটা দেখলে আপনি নিজেই হয়তো অবাক হবেন এবং পরিবর্তনের জন্য আরও বেশি অনুপ্রাণিত হবেন।
৩. নির্দিষ্ট লক্ষ্য নির্ধারণ করুন:কম ব্যবহার করবো- এমন অনির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক না করে, নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করুন। যেমন: প্রতিদিন মোট ১ ঘন্টা/ দেড় ঘন্টা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করবো অথবা দুপুরে খাওয়ার সময় এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার ১ ঘন্টা আগে ফোন ব্যবহার করবো না। ছোট ছোট লক্ষ্য দিয়ে শুরু করুন যা অর্জন করা সহজ। ধীরে ধীরে সময় কমান
৪. নোটিফিকেশন বন্ধ করুন: বেশিরভাগ সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপের অপ্রয়োজনীয় নোটিফিকেশনগুলো বন্ধ করে দিন। প্রতিটি নোটিফিকেশন আপনার মনোযোগ কেড়ে নেয় এবং আপনাকে অ্যাপে টেনে নিয়ে যায়। শুধু খুব জরুরি অ্যাপগুলোর নোটিফিকেশন চালু রাখতে পারেন।
৫. অ্যাপগুলো নাগালের বাইরে রাখুন: সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপগুলো ফোনের হোম স্ক্রিন থেকে সরিয়ে দিন। প্রয়োজনে কোনও ফোল্ডারের ভেতরে রাখুন যাতে কয়েক ধাপ পেরিয়ে অ্যাপ খুলতে হয়। ব্যবহারের পর প্রতিবার লগ-আউট করার অভ্যাস করতে পারেন। এতে প্রতিবার লগ-ইন করার অতিরিক্ত ধাপটি আপনাকে কিছুটা হলেও নিরুৎসাহিত করবে। যে সময়টা আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটান, সেই সময়ে অন্য কী করতে পারেন তার একটি তালিকা তৈরি করুন। যেমন: বই পড়া, শরীরচর্চা বা খেলাধুলা করা, নতুন কোনো ভাষা বা স্কিল শেখা, ছবি আঁকা, গান শোনা বা বাজানো, লেখালেখি করা, বন্ধুদের সাথে সরাসরি বা ফোনে কথা বলা, পরিবারের সাথে সময় কাটানো, বাগান করা বা ঘরের টুকিটাকি কাজ করা, মেডিটেশন বা মননশীলতা চর্চা করা, যখনই ফোন হাতে নিতে ইচ্ছা করবে, তালিকা থেকে একটি কাজ বেছে নিয়ে সেটি করার চেষ্টা করুন।
৬. ডিজিটাল ডিটক্স: যদি সম্ভব হয়, অল্প সময়ের জন্য (যেমন - একদিন বা একটি সপ্তাহান্ত) সোশ্যাল মিডিয়া থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকার চেষ্টা করুন। এটি আপনার নির্ভরতা কমাতে সাহায্য করতে পারে। ভার্চুয়াল জগতের চেয়ে বাস্তব জীবনে মানুষের সাথে মেশার চেষ্টা করুন। বন্ধুদের সাথে দেখা করুন, আড্ডা দিন, সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নিন।