X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১
মাহমুদ দারবিশ ও আরববিশ্বের কবিতা প্রসঙ্গে

আমরা গল্পকথকের বাড়িতে জন্মেছিলাম || ঘাসসান জাকতান

ভাষান্তর : মিলন আশরাফ
০৮ জুন ২০১৬, ১২:৪০আপডেট : ০৮ জুন ২০১৬, ১৪:৫৪

ঘাসসান জাকতান ও মাহমুদ দারবিশ প্রাক-ইসলামি যুগে আরবি কবিতাকে দেবতুল্য জ্ঞান করা হত। এই নিবন্ধে ঘাসসান জাকতান প্রয়াত ফিলিস্তিনি কবি মাহমুদ দারবিশ (১৯৪২-২০০৮) এর কবিতা পুনর্মূল্যায়ন করে দীর্ঘদিনের গভীর বন্ধুত্বের আলোকে খুঁটিনাটি অনেক বিষয় তুলে এনেছেন নিখুঁতভাবে

আধুনিক আরবি কবিতার অর্জন নিয়ে শেষ কয়েক প্রজন্মের মধ্যে তৈরি হয়েছে গভীর উদ্বেগ। গত শতাব্দীর মাঝামাঝি বিষয়টি রূপ নেয় ব্যাপকতায়। এর মধ্যে একটি উদ্বেগ হল : ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সাধারণ জনগণ। স্থুল সামাজিক কাঠামো দ্বারা সমস্ত শরীর আক্রান্ত। মানুষের অধিকার এখানে অকার্যকর। এসব ইতিহাসই সহ-অবস্থান করে আসছে দীর্ঘদিন।
অন্যদিকে আমরা যদি গভীরে প্রবেশ করি তাহলে একটা রূপান্তরের চিহ্ন দেখতে পাবো। সেটি হল কিছু মানুষ ভৌগোলিক অবস্থান পরিবর্তন করেছে। অন্য ইতিহাস ও সংস্কৃতিও জড়িয়ে পড়েছে এটার মধ্যে। উদ্বেগের কারণ এটাও একটা। রূপান্তরের এই অবস্থানকে বলা হচ্ছে ‘আরব বসন্ত’ কিংবা ইসলামের রাজনৈতিক উত্থান। এরকম বিভিন্ন শব্দভাণ্ডারে মানুষ এটাকে আটকে রাখতে চায়। অন্ধের মতো হবে সেটা। কিছু নির্দিষ্ট ইতিহাস দিয়ে পুরোটা বিচার করা অর্থহীন। এটা একটি ভয়ংকর পদ্ধতি। আমাদের আসল শিক্ষা নিতে হবে প্রতিদিনের নৈতিক মূল্যবোধকে আমলে এনে এবং সেটা প্রয়োগ করা লাগবে ভিন্ন ভিন্ন জীবনের উপর।
ইতোমধ্যে অতীতের উদ্ভূত ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে ব্যাপক। অতীতের গাম্ভীর্যময় নীরবতা পরাজয়ের তিক্ততা উধাও করতে হবে মূলত আমাদেরই। এই একাকীত্ব সঞ্চয় করে শক্তি হিসেবে হৃদয়ে অঙ্কিত করাই মূল কাজ। শক্তিকে করতে হবে সামরিকীকরণ। বর্তমানে এই জায়গাটা আলোচনার জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং অন্যদের কাছে সোজাসুজি হারিয়েছে গ্রহণযোগ্যতা। শুধুমাত্র একজন যে কিনা ছিলেন একটু আলাদা। নিজেকে এককোণায় লুকিয়ে আমাদের বাড়ির চারপাশে একটি ফাঁদ পেতে বসে ছিলেন তিনি। আমাদের পরিচ্ছন্ন বাগানকে নোংরা এবং বাচ্চাদের করেছিলেন ঘরছাড়া। তিনি কবিতাকে ভালোবাসতেন না, কবিকেও করতেন অবিশ্বাস।
কবিতার মধ্যেও এসব সন্ত্রাসের চিহ্ন ফুটে উঠছে। অতীতের তৈরি সেই সব চরিত্রই সরাসরি রেডিমেট আকারে অঙ্কিত হচ্ছে এখানে। অতীতের প্রেরণায় নির্মিত এসব কবিতায় প্রধান সমস্যা ভাষা ও মূল্যমান। অপরদিকে রেনেসাঁ মুভমেন্টের সম্পূর্ণ বিপরীত। এসব কবিতাগুলো প্রধানত সালাফি* আইডিয়া দ্বারা আক্রান্ত, যেটা আধুনিক আরবি কবিতার জন্য দ্বিধা ও ভয়ের ব্যাপার। ভবিষ্যত আরবি কবিতাকে এই আইডিয়া কোনোভাবে গৌরবান্বিত করবে না। এখানে আমি ধর্মীয় ধারণা ঐতিহাসিকভাবে পর্যায়ক্রমে কীভাবে কবি ও কবিতাকে দমিয়ে রেখেছে সেটা বলতে আগ্রহী। ইসলামের প্রথম দিককার ইতিহাস, কবি ও কবিতাকে অস্বীকার করার ইতিহাস। প্রথম পর্যায়ে ইসলাম কবিতার জন্য হুমকিস্বরূপ হিসেবে দেখা দেয়। কোরআনের অলৌকিক ক্ষমতা বলে কবিতাকে সবাই সন্দেহের চোখে দেখতো। এমনকি নবীর বর্ণনাতে কবিতার নন্দনতত্ত্ব অস্বীকৃত। সুতরাং কবিরাও হন বঞ্চিত।
এটা সেই সময়ের কথা, যখন কবি ও কবিতা নিয়ে বার্ষিক প্রতিযোগিতার আয়োজন হত হাটে-বাজারে। এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করতো উপজাতিরা। সঙ্গে থাকতো আরবরাও। বিভিন্ন যোদ্ধা ঘোড়ায় করে এসে তাদের প্রতিভা প্রদর্শন করতো। কবিরা সারা বছর ধরে কবিতা লিখতেন, সুর করতেন, এবং সেটার বিশ্বস্ত সমালোচকও থাকতেন। এরপর কবিতা আবৃত্তি হতো ক্রেতাদের সামনেই। অতঃপর সমালোচকদের দ্বারা নির্বাচিত সবচেয়ে ভালো কবিতাটা টাঙানো হত কাবা শরিফের দেয়ালে। কাবার পৌত্তলিক দেবতার মূর্তির সামনেই রাখা হতো ঝুলিয়ে। উক্ত ঘরটি ছিল ইব্রাহিমের পিতামহ দ্বারা নির্মিত। ইসলামের আগমনের আগে ও পরে আরব উপজাতিদের কাছে এটা ছিল সবচেয়ে গোপনীয় স্থান। ধর্মীয় ছায়া থেকে কবিতাকে অবমুক্ত করে কবিতার নিজস্ব শক্তি দ্বারা স্পর্শিত হতে হবে সবার আগে। মনে রাখা উচিৎ কবি ও নবীর ভেতর সাদৃশ্য বিদ্যমান।
ইসলামের ডাকে প্রথম যুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় কবিতার বিরুদ্ধে। কবিদেরকে একসঙ্গে জড়ো করে ফেলা হয় ভিন্ন ক্যাটাগরিতে। ইসলামি শক্তি যখন ক্ষমতায় আসে তখন সিরিয়া ও ইরাকের বিশাল বিশাল শহরগুলো দখলে নেয়। এ যুদ্ধ সালাফি আইডিয়াকে এ অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত করে পাকাপোক্তভাবে। একটি অদৃশ্য যুদ্ধ, কিন্তু সেটা সহিংস-সশস্ত্র কিন্তু তারা ভাবতো পবিত্র। জনগণকে কোলাকুলির মাধ্যমে মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হতো এই সালাফি আইডিয়াকে। সত্যিকারের অধঃপতনের সামিল ছিল এটা। অবশেষে ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে আরবের নতুন প্রজন্মের দ্বারা তাদের পতন ঘটে। এদের মধ্যে ফিলিস্তিনি কবিরাও ছিলেন। তরুণ কবিদের মধ্যে অভিজ্ঞতার অভাব থাকলেও তেমন প্রভাব বিস্তার করেনি। বরং অনেক কবিতা ভিন্ন আমেজে পুরো পরিবর্তন করেছিল কবিতার কাঠামো। তরুণদের কবিতায় একটা আকৃতি দাঁড়িয়েছে। এসব ট্রেন্ড চালু হয়ে বেশিরভাগ নির্বাসিত কবিদের হাতে, যারা এখন কেন্দ্রে আসছে অনেকটা। নির্বাসিতরা ধীরে ধীরে সংস্কৃতির কেন্দ্রে এসে আসন গাড়ে। কিন্তু যখন সত্যিই অভিজ্ঞতার সময় আসে তারা নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন ও প্রত্যাহার করে নেয়। কিছু কবি বিশেষ করে তরুণ কবিরা যথার্থ পরিপক্কতা হবার আগেই নিজেদের সরিয়ে ফেলে। এটার কারণ হতে পারে তাদের একটা তৈরি পাঠক আছে, অন্যথায় এটি শুধু অজুহাত হতে পারে যে, লেখাটা নিজে নিজে হয়ে যাবে। এখানে আমরা কথা বলবো কবির থেকে যে কবিতা আলোচনার বেশি দাবি রাখে সেই বিষয়ে। বর্তমানে আরবি কবিতার অবস্থান ও গতি প্রকৃতি জানতে মাহমুদ দারবিশের কবিতা অবশ্য পাঠ্য তরুণ প্রজন্মের কবিদের। তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাসিত, আমাদের পথও রুদ্ধ। শুধু আশার কথা হল, আমি লেখা চালিয়ে যেতে পারছি।’
এ সময় আমি চিন্তিত হয়ে দেখতে পেলাম, আমার মা তার নিজ গ্রাম জাকারিয়ার ধ্বংসাবশেষের উপর দাঁড়িয়ে। পঞ্চাশ বছর ধরে এমন এক নির্দয় জীবন-যাপন তার। নবী জাকারিয়ার মাজারের সামনে তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন সঙ্গে তাঁর তিন বোন। তারা চারজন বিধবা। কালো শাল জড়িয়ে সকালে বৃত্তাকারে জাকারিয়ায় পৌঁছে ছিলেন। এই গ্রামের নামকরণ করা হয়েছিল প্রায় অখ্যাত নবী জাকারিয়ার নাম অনুসারে। এই দৃশ্যকে কল্পনার ফ্রেমে বন্দি করে আমি একটি ছোট্ট কবিতা লিখি খুব সাধারণ নাম দিয়ে। কবিতাটির নাম ‘জাকারিয়ার চারবোন’। কবিতাটির আরবি অনুবাদ করেন ইরাকি কবি সারগন বউলুস এবং ইংরেজি অনুবাদক ফিলিস্তিনির কবি ফাদি জুদাহ।
এসব ঘটনা যখন মনে পড়ে তখন আমি আর মাহমুদ দারবিশ আলোচনায় রত। জায়গাটা ছিল রামাল্লা পাহাড়ের কাছে একটা কফিশপ। সেখানে বসে শত্রুর সংজ্ঞা নিয়ে আলাপ করছিলাম আমরা। ফেরার পথে মা আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা এই আমেরিকান সাংবাদিক মেয়ে রিভকার ভাগ্যে কী হবে?’ মেয়েটি তার ব্যক্তিগত গাড়িতে করে আমাদেরকে পৌঁছে দিচ্ছিল। সে দেখতে অনেকটা আরবদের মতো। মায়ের কথা শুনে আমি ছোট্ট একটা ধাক্কা খেলাম। উসনাট টারাবুলসি না আমেরিকান না সাংবাদিক। সে ইসরাইলি সিনেমার পরিচালক এবং সর্বোপরি আমার বন্ধু। আর তার গাড়িতে যাওয়া মানে মাকে নিরাপদে বাড়ি ফেরার নিশ্চয়তা পাকাপোক্ত করা।
লেখকেম মা, বা থেকে তৃতীয় পঞ্চাশ বছরের মধ্যে এই প্রথম তিনি এই রিভকা নামটা ব্যবহার করলেন। মায়ের বলা প্রথম দিককার গল্পে একটি মেয়ের বর্ণনা ছিল, যাকে তিনি খুব ভালো করে চিনতেন। মেয়েটি ছিল তার বন্ধু এবং ইহুদি। স্মৃতিতে সেই শৈশবের কথা স্মরণে আসে মায়ের। জোর করে মেয়েটিকে প্রবাসি করে দেওয়া হয়। হঠাৎ তার স্মৃতিতে নিঃশ্বাস ছড়িয়ে হেঁটে বেড়াতে লাগল কালো চুল ও আরবীয় চোখের চিকন একটি মেয়ে। দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর অনুপস্থিতির পর হঠাৎ মায়ের স্মৃতিতে জেগে উঠল সেই ইহুদি বালিকা। যেন সে মায়ের সঙ্গে যোগ দিয়ে বাড়ির পথে একসঙ্গে হয়েছে রওনা। এই হলো আমার মা, যিনি গল্পটার সত্য কথক। জীবনের সঠিক অধিকার তিনি বুঝতেন। তার স্মৃতিতে ভেসে বেড়াতো সত্য বাতাস।
রিভকা দেরি করে এসেছিল। পৌঁছে দেখে তার সবকিছু অক্ষত ও সংরক্ষিত রয়েছে। অকর্ষিত রয়েছে তার সব জমি। রিভকা যাকে ছেড়ে গিয়েছিল তাকে এইমাত্র যেন খুঁজে পেল। সংঘটিত ধ্বংসাবশের উপর নতুনরূপে দাঁড়িয়ে রয়েছে জাকারিয়া গ্রাম। আসল নাম ক্যাপার জাকারিয়া। সেখান থেকে করা হয়েছে গ্রামের নতুন নামকরণ। এটা দেখতে এখন একটা চাবির মতো লাগছে। এরপর আমার মা কোনোরকম স্বার্থসিদ্ধি ছাড়াই তালাবন্ধ দেয়ালের কিছু গোপন আইকন ও প্রবেশের পথ বাতলে দিলেন সেই ইহুদি তরুণীকে।
এসব ঘটনা মাহমুদ দারবিশের প্রথম দিককার কবিতাগুলোতে আমরা দেখতে পাই। কবিতাগুলো হল : ‘বিটুইন রিতা অ্যান্ড মাই আইস ইজ এ রাইফেল’ ‘এ সোলজার ড্রিমস অব হোয়াইট টিউলিপস’ ‘রেকর্ড : আই অ্যাম অ্যান আরব’ ‘ হোয়েন হি গোজস ডিস্ট্যান্ট’ এবং ‘ফাইনাল সিনারি’।
আমার মা তাঁর ফর্সা রঙের আরবীয় বান্ধবী রিতাকে নিয়ে রিভকার খোঁজে বের হতেন। বনের একধার থেকে বাতাসের তরঙ্গের মধ্যে হেঁটে যেতেন উপত্যকার দিকে যেখানে ছিল ছোট্ট একটি ট্রেন স্টেশন। এটা পড়েছিল জেরুজালেম ও আল লুদের মধ্যে। আমি দারবিশকে বললাম, ‘গতকাল সন্ধ্যার প্রার্থনার আগে আমার মা দুটি স্বীকারোক্তি করেছেন। একটি হল : তাঁর ইহুদি বান্ধবী (যাকে তিনি হারিয়ে ফেলেছেন) বিষয়ে ও দ্বিতীয়টি তারা চাষের ক্ষেত্রে আমাদের চেয়ে অনেক ভালো ছিল।
আমার মায়ের নাম সূয়্যা মাশাল। আমার বিশ্বাস এটা একটি তুর্কি নাম। ফিলিস্তিনিদের অটোমান দখল করার একশ বছর পরেও সেটা রয়ে গেছে। সন্ধ্যার নামাজের আগে আমাদের সঙ্গে তিনি এই দুই বিষয় নিয়ে বিস্তর আলাপ করলেন। এরপর তিনি তাঁর নিজের বাড়ি আম্মানে ফিরে যেতে ইচ্ছুক সে বিষয়টিও জানালেন। জায়গাটা ছিল জর্ডান নদীর পূর্ব দিকে। তিনি আর রামাল্লায় শরণার্থী হয়ে থাকতে রাজি নন। কারণ তিনি জাকারিয়ার ঘর ছাড়ার পর পুরো দেশ বহিরাগতদের দ্বারা পূর্ণ। তাঁর গল্পে তিনি বারবার রিভকার কথাই বড় আকারে প্রচার করলেন। রিভকার ভাগ্যের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছিলেন তিনি। এরপর তিনি কিছু চূড়ান্ত উপায় বের করেছিলেন বন্ধ দরোজা খোলার জন্য। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ‘কেনো তুমি দেশ ত্যাগ করলে?’ উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা আসলে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তারা মানুষজনকে দেদারছে হত্যা করছিল ও গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছিল।’
তবে এখানে কিছু বিপরীত চিত্রও দেখা দিল। মানুষজন তাদের প্রতিদিনের চাহিদা ও লক্ষ্যের কথা কল্পনা করছে। অন্যান্যরা নিজের ভাষায় দাবির কথা তুলছে নিজেদের ব্যক্তিগত নাম ধরে ধরে। ব্যবসায়ী গ্রুপ, ফ্যাক্টরির মালিক, শুটার, দখলদার, বর্ণবাদী ও ধর্মীয় ব্যক্তিরা আরবদের পরাজয়ের জন্য প্রার্থনা করছিল। কিন্তু কাগজে লেখা ইতিহাসে শুধু সমাবেতের কথাই সাক্ষ্য দেয়। শত্রুদের দোহাই দিয়ে এসব নিষ্ঠুরতা আজও ঢুকে পড়ছে আমাদের প্রত্যাহিক জীবনে। এসব বাদ দিয়ে খুব ছোটখাট বিষয় নিয়ে তাকে অন্যান্যদের থেকে আলাদা করা হচ্ছে। মৌলিক অবস্থান বিবেচনা ছাড়াই দারবিশকে দেওয়া হচ্ছে বৈচিত্র্যের গুণাবলির অধিকার। যেসব মৌলিক বিষয় দ্বারা সম্পর্কের উন্নয়ন সেটার খোঁজ একেবারে নেই। অথচ এসব ভিন্ন ভিন্ন যোগ্যতার কারণে তিনি সম্পূর্ণ মানবিক। এখনো শত্রুরা দারবিশের লকড ফর্ম নিয়েই লেখে। আরবি ক্লাসিক ভাষায় এসব প্রতিদিনের নিষেধের জায়গা সম্পর্কে সচেতনার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। দারবিশের কবিতা এসব বিষয় নিয়ে একটি চ্যালেঞ্জ বলা যায়। বিশেষ করে ফিলিস্তিনি ও আরবি কবিতায় রাজনীতির অবস্থান বিষয়ে। তাঁর জীবনের প্রতিটি অর্জনই ছিল তাঁর মতাদর্শের সঙ্গে সম্পৃক্ত। প্রথম দিককার কবিতার ভূগোল এবং উদ্দেশ্য ছিল পরিষ্কার। শত্রুদের চিহ্নিত করেই সেই কবিতাগুলো লেখা হয়েছিল। সরাসরি শত্রুকে ঘায়েল করতে আমাদেরকে সঠিক একটি ধারণা দিয়েছিল কবিতাগুলো।
পরবর্তীতে মাহমুদ তার পরিকল্পনা অনুযায়ী নিষিদ্ধ এলাকা চিহ্নিত করে দেন, এক্ষেত্রে বেশ কাজে দিয়েছিল তাঁর সুনাম। এই কাজটি আরব ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছিল। সংস্কৃতি সম্পর্কে তাঁর বিশেষ জ্ঞান দ্বারা অন্যান্যদেরও জীবন্ত করে তুলেছিলেন তিনি। কিন্তু পর্দার আড়ালে কিছু পৃষ্ঠা অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি হয়ে পড়ে। তিনি এবার তাঁর লেখার বর্ণনা বাড়িয়ে সেখানে স্বচ্ছতা আনলেন। এই টেক্সটগুলোতে মাহমুদ তাঁর অস্তিত্ব দৃঢ় কণ্ঠে ঘোষণা করলেন। এতে করে মাহমুদের আলাদা কণ্ঠস্বর শোনা গেল কিন্তু শত্রুর ঘেরাটোপ থেকে গেল রক্ষিত। তাঁর নতুন টেক্সট নিয়ে আরবদের ভেতর কানাকানি হতে লাগল। উদাহরণ হিসেবে তাঁর ‘রিতা’ অথবা ‘এ সোলজার ড্রিমস অব হোয়াইট টিউলিপস’ কবিতার কথা স্মরণযোগ্য। এখানে একজন ইসরাইল সৈনিকের কথাপোকথন দেখা যায়, যেটা তাঁর প্রথম দিককার কালেকশনে রয়েছে। কথোপকথনটি খুব সাধারণ এবং বেদনাদায়ক। এখানে একজন আহত সৈনিককে রক্ত পরিষ্কার করতে দেখি আমরা। আলোচনাটার মধ্যে দুইটি লেভেল আমরা খুঁজে পাই, একটি বাস্তব ও আরেকটি স্বপ্ন। বাস্তবতায় আমরা দেখি, হত্যার বিনিময়ে সে মেডেল পাচ্ছে। অনুগত সৈনিকের উক্তি কবিতার ভাষায়, ‘আমি অনেক হত্যা করেছি, কিন্তু তারা আমাকে শুধুমাত্র দিচ্ছে একটি মেডেল।’ কবি এখানে খুব সাধারণভাবে তাঁর নাম ‘মি. মাহমুদ’ সম্বোধনে শুরু করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা ছেড়ে তিনি আবার স্বপ্নে চলে যান। একপলকে শত্রু মানবিকতায় ফিরে গিয়ে প্রত্যাহিক জীবন-যাপন শুরু করেন। একই সময়ে আরবরা শত্রুদের গ্রহণ করতে অনুমিত হল, এরপর মুহূর্তে মানবিক প্রকৃতির শাখা-প্রশাখা শত্রুতে রূপান্তিত হয়ে বন্দুকের গুলি ছুঁড়তে আরম্ভ করল।
লেবাননের মিউজিশিয়ান মার্সেল খালাইফের মিষ্টি প্রেমের দুঃখভরা গানের রূপান্তরিত রূপ ‘বিটুইন রিতা অ্যান্ড মাই আইস ইজ এ রাইফেল’ কবিতাটি। গানটির ঘটনা লেবাননের ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত নৃশংস সিভিল ওয়ারকে স্মরণে এনে লেখা। এটার সঙ্গে পিএলও এর সম্পৃক্ততা আছে। গানটির সঙ্গে আরবের ভাগ্যেরও অদ্ভুত মিল ছিল। গানটি আরবের আইকন হিসেবে এখনো স্মরণ করা হয়।
গল্পটি ছিল নিষিদ্ধ ভালোবাসা সংক্রান্ত। ভালোবাসাটি ছিল সুন্দরী ইহুদি সৈনিক রিতা এবং ফিলিস্তিনি কবির মধ্যে। ভাগ্য যেন তাদের জন্য একটি প্লান করে রেখেছিল পূর্বেই। গান ভালোবেসে নিয়মিত শুনলে এটা দ্বারা প্রভাবিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। অদৃশ্য চুক্তিতে এখানে মেয়েটির পরিচয়কে লুপ্ত করা হয়েছে। এমনকি দারবিশের প্রথম দিককার গ্রন্থে যেমন ‘রেকর্ড : আই এ্যাম এ্যান আরব’-এ বিজয়ী শত্রুদের ছবি ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। তাঁর আগে কোনো আরব কবি বিজয়ীদের কোনো স্পষ্ট ছবি অংকিত করতে পারেননি তাদের কবিতায়। আধুনিক ফিলিস্তিনি কবিরা বিজয়ী শত্রুদের কথা বলেন কোনো বাস্তব চরিত্র ছাড়াই। কোনো শরীরিক উপস্থিতি নেই সেখানে। নেই কোনো ছায়াও। এখনো অনেক শত্রু যারা মারা যাচ্ছে কিংবা কবিতার বাইরে এখনো জয়ী হয়ে চলছে, তাদের কথাও নেই এইসব কবিতায়। এখানে একটি কথা বলা যুক্তিযোগ্য যে, শত্রুদের এরকম ছবি তাদেরকে প্রেতাত্মা করে হাজির করেছে আমাদের সামনে। এটা একটা বড় ক্ষতি। দারবিশ শত্রুকে সরাসরি শত্রু হিসেবেই চিহ্নিত করেছেন। শত বাধা সত্ত্বেও দারবিশ শত্রু সম্পর্কে তাঁর দৃঢ় অবস্থান করেছেন পরিষ্কার। তাঁর এই সংগ্রাম বাস্তবতার সত্য ডাইমেনশন। এই বাস্তবতা পরস্পরকে সংলাপের মাধ্যমে চিনিয়ে দেন তিনি। অজানা অচেনা অনেক কিছুই বেরিয়ে আসে এতে। মানবদেহের দুই চক্ষু দিয়ে মানুষ এটা অবলোকন করে। শত্রুদের কাছে এটা খুব বড় হয়ে দেখা দেয়। শত্রুরা দারবিশকে আমলে নিয়ে তাঁকে সবসময় ফলো করতো। একই সময়ে কবির জন্য এটা অন্য রকম রূপান্তর। এখানে কবি ‘ট্রোজেন পোয়েট’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। এরপর দারবিশ এবং মাশাল (আমার মাতা) যখন অর্ধেক শতাব্দী পর একটি পারস্পারিক সমঝোতার ভিত্তিতে রিভকার স্বাধীনতার কথা আলোচনা করেন তখন এই অখ্যাত বালিকার শত্রুর তকমার লক থেকে মুক্ত হয়। অতঃপর সে হয়ে পড়ে স্মৃতিতাড়িত।
ভূতকে মোকাবেলা করা সহজ, এটা সত্য ভাষণ। কিন্তু এখানে ক্ষতির কারণ জানতে চাইলে নিষেধাজ্ঞা ও অজুহাতের বয়ানে এড়িয়ে যাওয়া হয়। অতিরঞ্জিত অজ্ঞতা দ্বারা বীরত্ব প্রকাশ পায়। শত্রুকে মোকাবেলা করতে বাস্তবে এটা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, যারা কিনা মানুষের সকল প্রবণতার মোকাবেলা করতে প্রস্তুত।
এখানে ভাষা ও সংস্কৃতির অবশ্যই ভেতর থেকে একটা আকার থাকতে হবে। সেটার একটা আলঙ্কারিক রূপও দরকার। ভাষার পরাজয় অনেক সময় জাতিকে ব্যর্থতায় পর্যবসিত করতে পারে। অন্যান্যদের জ্ঞানের প্রভাব বিস্তারের অভাবে, শত্রুরা সেখানে চেষ্টা চালায় আত্মত্যাগের বিনিময়ে। এটা একটি রাজনৈতিক আত্মহত্যাও বলা চলে। শত্রুরাও আমাদের সংস্কৃতির অংশ। পরিচিতিতে সে (শত্রু) খুব প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখে। বহিরাগতের মধ্যেও তার অবস্থান শক্ত। সে বাহিরাগত হওয়া সত্ত্বেও অজ্ঞতার উপাদান। যেকোনো সংগ্রাম, পরাজয়, ক্ষতি ও প্রতিরোধে তার অস্থিত্ব বিদ্যমান। সংস্কৃতির মধ্যে সে (শত্রু) প্রধান উপাদান। সংস্কৃতির সম্প্রসারণ ও মানুষের নিয়ন্ত্রণে তার উপস্থিতিও সজ্জিত করা থাকে।
আমরা এখন নিজেদেরকে পড়তে পারি। আমাদের অস্তিত্বের সম্প্রসারণ প্রয়োজন। প্রতিরোধের আলো ছড়িয়ে দিতে হবে সবখানে। সংগ্রাম আমাদেরকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। দুর্বলতাকে চিহ্নিত করে শক্তির ভূমিতে নিজেদেরকে করতে হবে প্রতিষ্ঠিত। প্রাচীরের ফাঁক প্রকাশ পেয়েছে। আমরা সবকিছু মনে করতে চাই না। আমাদেরকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আমরা কোথায় যেতে চাই। অন্যান্যদের সম্পর্কে খোঁজখবর ও প্রখর জ্ঞান ছাড়া আমরা লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবো না কখনো। শত্রুরা আমাদের সংস্কৃতি, ধর্ম, ক্ষমতা এবং যৌনতার ভেতর নীরব ঘাতক হয়ে বেড়ে উঠছে।

দারবিশের প্রকল্পের মধ্যে সবসময় উপন্যাস ছিল। ভিন্ন এলাকার এসব উপন্যাসের মাধ্যমে তাঁর অন্য সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান লাভ সম্ভব হতো। অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান সংগ্রহ করে তিনি গভীরভাবে কথোপকথন চালিয়ে যেতেন। এতে তাঁর স্বতন্ত্র একটি পথ তৈরি হয়েছিল। এটার ফলে তিনি তাঁর কবিতায় সহজ রোমান্টিক দৃশ্য ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে গেছেন। এক্ষেত্রে আমরা স্মরণ করতে পারি ‘দি সোলজার ড্রিমস অব হোয়াইট টিউলিপস’ অথবা ‘বিটুইন রিতা অ্যান্ড মাই আইস ইজ এ রাইফেল’ এর কথা। শত্রুদের দৃশ্য আমরা দেখতে পাই তাঁর ‘হোয়েন হি গোজস ডিসটেন্ট’ এবং তাঁর অন্যতম সেরা কালেকশন ‘হোয়াই ডিড ইউ লিভ দ্যা হর্স অ্যালোন?’ এর ভেতরে। একই কথোপকথন দেখতে পাই তাঁর পরবর্তী কবিতা ‘রেডি সিনারি’র’ মধ্যেও। এসব কবিতার উপসংহারে আমরা দেখি শেষ দৃশ্য অন্য কবির জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে, খুনির দৃশ্যে খুনি একটি পথের কাছে এসে তাঁর যাত্রা স্থগিত করেছে।
তাঁর অভ্যন্তরীণ কথোপকথনের শুরুটা হয়েছিল চিন্তাশীল প্রশ্নের মাধ্যমে। সম্পূর্ণ বিপরীত এবং সামন্তরিক ছিল এর উদ্বোধনী উত্তর। এসব হচ্ছিল দারবিশের সমসাময়িক এডওয়ার্ড সাইদের উপর ভিত্তি করে। দারবিশ এটার (তাঁর কবিতার) শিরোনাম পছন্দ করেছিলেন ‘কাউন্টারপয়েন্ট’ যেটা অনূদিত হয়েছিল সাইদ দ্বারা। আইডিয়াটি কবিতাটির কাঠামো গঠনে সেঁতু হিসেবে কাজ করেছিল। এটি তাঁকে পৌঁছে দিয়েছিল ধ্রুপদী শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের আসনে।
বাংলাদেশে ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’ অনুষ্ঠানে লেখক দারবিশের কবিতায় অঙ্কিত অনেক বিষয় তুলনা করা হয় ইসরাইল কবি যেমন বিয়ালিক (যাকে আমি ইসরাইলি হিসেবে বিবেচনায় আনি না) ও ইহুদা আমিহাইয়ের সঙ্গে। অনেক অনুষ্ঠানে দারবিশ তাঁদেরকে তারিফ করেছেন। উভয়পক্ষে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তির রাজনীতি বিষয়ক বাহ্যিক এবং সাধারণ বোধগম্যের ক্ষেত্রে এই তুলনা বেশ আকর্ষণীয়। কিছু পর্যায়ে উভয় কবি জনগণের পক্ষে নিজেদের জাতির জাতীয় পরিচয় বহন করেছেন এবং প্রচলিত আখ্যানে সাপ্লিমেন্টারি হিসেবে নিজেদেরকে করেছেন রক্ষিত। আমার মতে এই তুলনার বীজ রোপিত হয়েছিল ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দের সময়কালে, যখন ইসরায়েল মাত্র ছয় দিনের যুদ্ধে পৌরাণিক জয় ছিনিয়ে বিজয়ী জাতি হিসেবে জয়জয়াকার করে ফেলে। তবে ভিকটিমের শাসন থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেনি তারা। এটা ছিল শুধু ফিলিস্তিনি জাতীয় আন্দোলনের প্রথম পদক্ষেপ এবং আরবীয় রাজনৈতিক শাসনের পরামর্শ থেকে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্নকরণ। একটি আপাতবিরোধী উপায়ে আরব শাসনের খপ্পর থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করে ফিলিস্তিনি হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেওয়া আর কি। এই পরিচয় তাদেরকে পুনসংগঠিত ও সংরক্ষিত হতে অবদান রেখেছে। একটি কাঠামোর মধ্যে পুনরুত্থিত হয়েছে ফিলিস্তিনি বন্দিদের। এটিকে ‘নির্বাসিতদের বিপ্লব’ নামে অভিহিত করা যায়। আর এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, এসবের জন্য অগ্রগণ্য ভূমিকা রাখেন এডওয়ার্ড সাইদ ও মাহমুদ দারবিশ।
দারবিশের আলোচিত বই ‘হোয়াই ডিড ইউ লিভ দ্যা হর্স অ্যালোন’ প্রকাশিত হবার পর তিনি আমিহাই ও বিয়ালিক থেকে পৃথক ধারণায় নিজেকে উন্নতি করেন। তিনি সরাসরি নিজের পথ তৈরি করে বাঁধাই করেন নতুন সংগ্রহ ‘ইট ইজ এ সং অ্যান্ড লেস এ ফ্লাওয়ার’ এর সঙ্গে। তারপর ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে জানান দেন নিজস্ব অবস্থান। এটা চলতে থাকে ২০০৮ খ্রিস্টাব্দে হোস্টনে তাঁর মৃত্যুর আগ পর্যন্ত। উক্ত সংগ্রহে ‘হোয়াই ডিড ইউ লিভ দ্যা হর্স অ্যালোন’ নিয়ে আসে নতুন প্রজ্ঞার আলো। তিনি নতুন চরিত্র বেছে নিলেন যেটা শুরু হয়েছিল ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দে। এতে অন্তর্ভুক্ত ছিলেন তাঁর দাদা, মা এবং বিশেষ করে শত্রুরা। তবে তারা নতুন কাঠামোতে ধরা দিল নতুন আইডিয়া, বৃহৎ প্রশান্তি এবং প্রজ্ঞার ক্ষুরধার আলোক হিসেবে।
সময়টা ছিল ২০০৭ খ্রিস্টাব্দের গ্রীষ্মকাল। ম্যাকডোনিয়ার হচ্ছিল স্ট্রুগা পোয়েট্রি ইভিনিংস। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরাতন বিশ্ব কবিতা উৎসব এটি। সেখানে মাহমুদ দারবিশ ছিলেন সম্মানীত অতিথি। এটিই ছিল তাঁর জীবনের শেষ কবিতা উৎসবে যোগদান। অন্যথায় এক সন্ধ্যায় ফ্রান্সের রাস্তা ধরে হোস্টন যাচ্ছিলেন। স্ট্রুগার কর্তৃপক্ষ তাঁকে ভালোবেসে পরিদর্শনে আমন্ত্রণে জানিয়েছিলেন শেষ গ্রীষ্মে। তাঁকে সম্মানীত করেছিলেন দামি পুরস্কার গোল্ডেন ক্রাউনে, যেটা প্রতি বছর একজন প্রভাবশালী বিশ্বকবিকে দেন তাঁরা।
মুকুট বহনকারীকে ওখানে অবস্থিত কবিদের বাগানে একটি করে গাছ লাগাতে হয়। এটাও পুরস্কারের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই রীতিই তারা পালন করে আসছে শুরু থেকেই। পাশাপাশি ব্রোঞ্চের উপর কবির নাম ও পুরস্কার গ্রহণের তারিখ খোদাই করা থাকে। বাগানে ৫০টি সুউচ্চ গাছ কবিদের নামসহ শোভা পাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল : চিলির কবি পাবলো নেরুদা, চীনের বেই ডাও, আমেরিকান কবি অ্যালান গিন্সবার্গ, ইসরাইলের এহুদা আমিহাই, সিরিয়ান অ্যাডোনিস, রাশিয়ার ইয়াভতুশেনকো এবং সুইডিশ কবি ট্রান্সট্রোমার।
বাগানে গাছ রোপনের পর প্রেস কনফারেন্সে (ম্যাকডোনিয়ান কবি ও অনুবাদক নিকোলাই মাজিদিরুফের বরাত দিয়ে) এক সাংবাদিক মাহমুদ দারবিশকে প্রশ্ন করেন, ‘ইসরায়েলি কবি ইহুদা আমিহাই-এর নামখচিত গাছের পাশেই আপনার নামখচিত গাছ রোপনের অনুভূতি কেমন?’
মাহমুদ বলেন, ‘এতে আমি মোটেই বিব্রত নয়। নিশ্চয় একটি গাছ অন্য গাছকে হত্যা করবে না।’
এই গল্পটি বিভিন্ন সময়ে একেকজনের কাছে একেকরকমে শুনেছি। এই গল্পে সরাসরি সাক্ষী নিকোলাই মাজিদিরুফ। পরবর্তীতে এটি একটি সাধারণ গল্পে পরিণত হয়েছে। তবে সব গল্পের শেষটা একইরকম : একটি গাছ অন্য গাছকে হত্যা করবে না।
যদি আমি তুলনামূলক একজন নির্বাসিত কবিকে গভীর প্রশ্নে খুঁজি, তবে নিঃসন্দেহে আমি পাউল সেলানের নাম করবো।


 

*সালাফি শব্দের অর্থ হলো পূর্বসুরি। ইসলামী পরিভাষায় ‘সালাফ’ বলতে ইসলামের প্রথম তিন প্রজন্মের মানুষকে বুঝানো হয়। অর্থাৎ সাহাবারা তাঁদের পরের প্রজন্ম (তাবিঈন) ও তারপরে (তাবা আত-তাবিঈন) সবাই হলেন সালাফ।

স্থান : রামাল্লা
লেখাটি মূল আরবি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন  স্যাম ওয়াইল্ডার


 

আরও পড়ুন

ফিলিস্তিনি কবি ঘাসসান জাকতান-এর কবিতা 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অফিস টাইমে চিকিৎসক প্রাইভেট প্র্যাকটিসে থাকলে ব্যবস্থা
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিঅফিস টাইমে চিকিৎসক প্রাইভেট প্র্যাকটিসে থাকলে ব্যবস্থা
চুক্তি হোক বা না হোক রাফাহতে ইসরায়েলি অভিযান চলবে: নেতানিয়াহু
চুক্তি হোক বা না হোক রাফাহতে ইসরায়েলি অভিযান চলবে: নেতানিয়াহু
 ক্রীড়া পরিষদে আগের মতোই অফিস করছেন সচিব
 ক্রীড়া পরিষদে আগের মতোই অফিস করছেন সচিব
‘অতি বাম অতি ডান সবই এক হয়ে গেছে, কীভাবে হলো জানি না’
‘অতি বাম অতি ডান সবই এক হয়ে গেছে, কীভাবে হলো জানি না’
সর্বাধিক পঠিত
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
ট্রাকের চাকায় পিষে দেওয়া হলো ৬ হাজার কেজি আম
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
সিএনজির রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু করতে বিআরটিএ অফিস ঘেরাও
সিএনজির রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম চালু করতে বিআরটিএ অফিস ঘেরাও
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা
সিস্টেম লস কমাতে সার্বক্ষণিক ম্যাজিস্ট্রেট চায় পেট্রোবাংলা