X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
অন্য ঘরে অন্য স্বর

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী জীবন

নূর-ই-নুসরাত
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫:৫০আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৫:৫৪

বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের মধ্যে প্রথম দেশ, যে দেশ সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ১৯৪৭ সাল থেকেই পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী দ্বারা পূর্ববাংলার জনগণ সর্বপ্রকার অত্যাচার, শোষণ, বৈষম্য, নিপীড়নের শিকার হয়েছে। কিন্তু এ ভূখণ্ডের সংগ্রামী মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের মধ্যদিয়ে এর পরিসমাপ্তি ঘটে। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রধান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান স্বাধীনতার যে ডাক দেন এবং ২৬ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার যে ঘোষণা প্রদান করেন, ১৬ ডিসেম্বর তা বাস্তবে পূর্ণতা পায়। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বপ্রকার সহযোগিতা করে। ফলে মুক্তিযুদ্ধ হয়ে দাঁড়ায় বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনার বহিঃপ্রকাশ। মুক্তিযুদ্ধ এ অঞ্চলের বাঙালি এবং এ ভূখণ্ডে বসবাসকারী অন্যান্য নৃগোষ্ঠীর জনগণের মধ্যে যে দেশপ্রেমের জন্ম দেয়, তা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে যুদ্ধ শেষে সর্বস্তরের মানুষের যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠন এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করার দরকার ছিল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের পর সেটা আর সম্পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল দেশের শাসনভার গ্রহণ করে। কিন্তু দেখা যায় যে এই রাজনৈতিক দল শেষ পর্যন্ত মানুষের জাতীয় অর্থনৈতিক মুক্তির নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। সাধারণ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। রাজনৈতিক দলের নবগঠিত সরকারও পারেনি। যুদ্ধোত্তর কালের একটি নবগঠিত সরকারকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনে সময় দিতেই হয়, কিন্তু পুনর্গঠনের নামে সরকারের ছায়ায় লালিত যুব ও ছাত্রসংগঠনের কর্মীদের নানা ক্ষেত্রে মানুষের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সরকার গঠনকারী রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছেÑএই কৃতিত্বের কথা সংগঠনের কর্মীদের বিনয়ী না করে তাদের কর্তৃত্ববাদী, অনেকক্ষেত্রে সুবিধাবাদী, ক্ষমতালিপ্সু করে তোলে। এসব বিষয়গুলোকে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তাঁর অন্য ঘরে অন্য স্বর গল্পে স্পর্শ করেছেন। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসকে ষাটের দশকের উত্তাল অবস্থা ভয়ানকভাবে স্পর্শ করেছে। তাছাড়া তিনি যুদ্ধোত্তরকালের নগরের মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জীবন, মধ্যবিত্তের কৃত্রিমতা, অতৃপ্তি, আত্মদ্বন্দ্ব, অসহায়ত্ব, রাজনৈতিক নেতাদের হঠকারিতা, মনোবিকার ও স্বার্থপরতা উন্মোচন করেছেন তাঁর গল্পে।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের প্রথম গল্পগ্রন্থ অন্য ঘরে অন্য স্বর (১৯৭৬)। রাজনৈতিক বিড়ম্বনা ও সাম্প্রদায়িকতার মাঝে বাস্তুহারা সংখ্যালঘুদের ফিকে হয়ে যাওয়া জীবনের চালচিত্রের পাশাপাশি যুদ্ধোত্তরকালের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের জীবন বাস্তবতা এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার, লালিত স্বপ্নসাধ ধরা-ছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়ার কারণে বিকারগ্রস্ত জীবন, অস্তিত্ব সঙ্কটে বিপর্যস্ত হওয়া জীবনের ব্যর্থতা ও হাহাকার এই গল্পের মূলকথা। স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার উল্লেখ থাকলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ধর্মের ভিত্তিতে অনেক বাঙালিকেই ‘সংখ্যালঘু’ হিসেবে বিবেচনা করে তাদেরকে উৎপীড়নের চক্রান্ত শুরু করেন সুযোগ-সন্ধানিরা। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাস্তবতাকে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস তাঁর অনেক ছোটগল্পে অত্যন্ত সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন। সেসব গল্পের মধ্যে তাঁর অন্য ঘরে অন্য স্বর মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাস্তবতাকে তুলে ধরার জন্য প্রতিনিধিত্বশীল গল্প হিসেবে আমরা মনে করতে পারি। জীবনযাত্রার সূক্ষ্ম বিষয় এবং ভাবধারাকে তিনি উঠিয়ে এনেছেন সাদাসিধে গদ্যের ঢঙে। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস অন্য ঘরে অন্য স্বর গল্পের শুরুটা করেন এভাবেÑ

‘আমা পানে চাও, ফিরিয়া দাঁড়াও, নয়ন ভরিয়া দেখি।’ শীতকালের জুড়িয়ে যাওয়া পদ্মানদীতে কোন চরের কুলগাছ থেকে ঝরে পড়ছিল আধপাকা কুল। সেই শব্দে চোখ মেললে প্রদীপের ঘুমের পাতলা সরের ওপর টুপটাপ ঝরে পড়ে পিসীমার মৃদুস্বরে গাইতে থাকা গানের কথা। প্রদীপের ঘুম ভেঙে যায়।১

পিসীমার গানের মৃদুস্বর দিয়ে শুরু হয়েই সেই সুরে প্রদীপের ঘুম ভাঙার কথা না বলে লেখক গানের মৃদুস্বরের পর বললেন পদ্মানদীর কোনো চরের কুল গাছ থেকে কুল পড়ার কথা। গল্পের শুরুটাতে এমন ঘটনার ক্রমবিন্যাস না থাকাতে লেখক হয়তো এই বার্তা আমাদের কাছে পৌঁছে দিতে চান যে এই গল্পের রচনাকালে মানুষের জীবনযাত্রার, প্রত্যাশিত স্বপ্নের এবং চাওয়া-পাওয়ার হিসাব ছিল ছন্দহীন, ক্রমবিন্যাসহীন আর জটিল। সময়ের জটিলতার কারণে বাস্তবঘেঁষা লেখনীতে লেখকের দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা প্রতিদিনের জীবনযাত্রায় জটিলতা পরিলক্ষিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। ’৭৫ পূর্ববর্তী ঘটনাবলি নিয়ে সেই সময়েই এই গল্পটি রচিত। ক্ষমতাসীন দলের অমনোযোগ ও প্রশ্রয়ের কারণে এদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছাত্রসংগঠনের গুটিকয়েক নেতা ও কর্মী নানা রকম অপকর্ম চালায়। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই সুবিধাবাদীদের চেহারা হয়ে ওঠে ভিন্ন রকমের। তাদের কাছে দেশ স্বাধীন হয়েছে যেন তাদের সুবিধার রাজ্য কায়েম করার জন্য। সুবিধা আদায় করাই যেন তাদের কাছে স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ। সাধারণ মানুষকে ক্ষমতার ভয় দেখিয়ে, বড় বড় লিডারশিপের দাপট দেখিয়ে স্বাধীনতাপূর্ব স্বপ্ন আর প্রত্যাশার জায়গায় তারা অপ্রত্যাশিত যন্ত্রণারই সৃষ্টি করল। অনেক মানুষ এসব নব্য ক্ষমতাবানদের কাছে ধরাশায়ী আর অসহায় হয়ে পড়ল। স্বাধীন দেশের পরাধীন মানুষ হয়ে গেল তারা। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের এই গল্পে এসবের প্রতিফলন স্পষ্ট। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী জীবনের চিত্র অনেকখানি ধারণ করেছেন তিনি তার অন্য ঘরে অন্য স্বর গল্পে।

নিয়মিত চাঁদা আদায় ও কলেজগামী মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনায় ব্যবসায়ী ননীদার জীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। ’৪৭-এর ভারত বিভক্তির পর হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কিছু লোক ভারতে চলে গেলেও অনেকে থেকে গেছেন এখানে ভিটেমাটির টানে। অনেকের মধ্যে নিরেট স্বদেশপ্রেমও কাজ করেছে এই না যাওয়ার পেছনে। পিসীমা কিংবা প্রদীপের বাবার মধ্যে এ সত্য ইলিয়াস ধারণ করেছেন। পাকিস্তান আমলে চব্বিশ বছর এবং মুক্তিযুদ্ধের সময়ও এরা অপেক্ষাকৃত বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আশা করা গিয়েছিলো, সংখ্যালঘু হিসেবে এদের ওপর যে সামাজিক, রাজনৈতিক ও মানসিক চাপ গেছে. স্বাধীনতা লাভের পর তার অবসান হবে। ’৭২ সালের সংবিধানে অসাম্প্রদায়িকতার কথা স্বীকৃত হলো। কিন্তু কার্যত স্বাধীন দেশে আর সেই স্বাধীন অবস্থা বিরাজমান থাকেনি। স্বাধীনতার পরও রাজনীতির নামে যে অরাজনৈতিক, অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলেছে ননীদা তার শিকার। তাছাড়া অন্য ঘরে অন্য স্বর গল্পে আলোকপাত করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধোত্তর কালে ক্রমশ পরিবর্তমান জীবনের ভেতর দিয়ে বেঁচে থাকা পূর্বপ্রজন্মের একজন পিসীমাকে যিনি সমকালের জীবন প্রতিবেশে বাহুল্য, বাতিল হয়ে গেছেন, কিন্তু বেঁচে আছেন পূর্ববর্তী নানা ঘটনা ও অনুভূতির সাক্ষী হয়ে।

গল্পের শুরুতে দেখা যায়, ননীদার কাছে কলকাতা থেকে দুদিনের জন্য বেড়াতে আসা প্রদীপ মুখোমুখি হয় কনফারেন্সের নামে তরুণদের চাঁদা আদায়ের ঘটনার। ননীদার দোকানে এসে শুরুতেই তাকে বুঝতে হয়, এখানকার হার্ডওয়্যার ফার্মের নাম লেখা ক্যালেন্ডারে রবীন্দ্রনাথের ছবি যেমনতেমনভাবে ঝুললেও আরেকদিকে শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি দামি ফ্রেমে বাঁধানো থাকা চাই।

এখানকার হার্ডওয়ার ফার্মের নাম লেখা ক্যালেন্ডারে রবীন্দ্রনাথের ছবি। ছবি খুব একটা দিয়ে রেখেছে, জানে নাকি কার ছবি? আরেক দিকে দামী ফ্রেমে বাঁধানো শেখ মুজিবুর রহমান।২

কিন্তু সে সময়ের ননীদা কিংবা ননীদাদের মতো মানুষেরা কেউই এমন বাধ্য হয়ে শেখ মুজিবের ছবি বাঁধিয়ে রাখতে চাননি। শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতাপূর্ব সময় বা স্বাধীনতার পর স্বাধীনতাকামী এসব মানুষের কাছে কোন দলীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন না। ছিলেন মুক্তির আদর্শ। এই ভূমিতে যারা ’৬৯ এর গণঅভুত্থান করেছিলেন, ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে মুক্তির প্রেরণায় মেতেছিলেন, ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণায় কোমর বেঁধে লেগেছিলেন তারা কেউই কোন দলের হয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে নামেননি। কেউই শুধু শেখ মুজিবুর রহমানের হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করতে যাননি। সবাই মুক্তির নেশায় মেতেছিলেন। পাকিস্তানি হায়েনাদের বর্বরচিত অত্যাচার এবং সীমাহীন যুগযন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে তারা বুকের তাজা রক্ত রাস্তায় ঢেলেছেন। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ক্ষমতালিপ্সু অনেকেই নিজের ক্ষমতা জাহির করতে এবং মানুষের কাছ থেকে ফায়দা আদায় করে নিতে সর্বসাধারণের আদর্শকে তাদের মতো করে ভালোবাসতে বা লালন করতে না দিয়ে বাধ্য করেছেন, চাপিয়ে দিয়েছেন নিজেদের ধান্দাবাজি সফল করতে। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে অনেক শান্তিকামী মানুষ এমন বাস্তবতার স্বীকার হয়েছেন। এরপর মাটির টানে এ ভূমিতে পড়ে থাকা ননীদার আক্ষেপ ঝরে পড়ে প্রদীপের কাছে :

সপ্তার মধ্যে তিনখান চারখান কনফারেন্স, সম্মেলন, সমাবেশ লাইগাই রইছে। পয়সা আদায়ের ফন্দি, বুঝলি না? এই ভাই আইবো, বাপে আইবো, বন্ধু আইবো! আরকি? ছাড়ো মালপানি ছাড়ো।৩

কনফারেন্স, সম্মেলন, সমাবেশের নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ফন্দিতে নাজেহাল ননীদা। নিয়মিতভাবে এই পরিস্থিতির স্বীকার হতে হচ্ছে তাকে তাছাড়া ছেলের বয়সী মাস্তানদের চাঁদা দেওয়া ও তোয়াজ করা সত্ত্বেও তাদেরই ভয়ে কলেজপড়ুয়া মেয়ে যখন রাস্তায় বেরোতে পারে না, তখন ননীদার স্ত্রী অনেকের মতো ইন্ডিয়া চলে যাওয়া ছাড়া পথ দেখেন না। আবার সদ্য গোঁফ দাঁড়ি গজিয়ে উঠা ছেলের বয়সী এসব নব্য চাঁদাবাজ নেতাদের ভাই বলে শ্রদ্ধা করতে হয় ননীদাকে। মুক্তিযুদ্ধের পর যুব সমাজের এমন অবক্ষয় স্বাধীন দেশের অনেক জায়গায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। স্বাধীনতার পর যুবসমাজের একটা বড় অংশ নেমে পড়েছিল টাকা হাতানো, ঘরবাড়ি দখল আর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন করতে। এই মাটিকে ভালোবেসে, এই মাটিকে স্বাধীন করতে চাওয়ার কারণে অনেকেরই দেখতে হয়েছে ধর্ষিতা মায়ের চোখের পানি, অর্ধমৃত অবস্থায় পড়ে থাকা বোনের খোলা স্তন যা বাজপাখি এসে খুবলে খুবলে খেয়ে গিয়েছে আর রেখে গিয়েছে তার খেয়ে যাওয়ার রক্তাক্ত উচ্ছিষ্টের চিহ্ন। কিন্তু যাদেরকে মায়ের, বোনের এমন অসহনীয় অবস্থা দেখতে হয়েছে তারা কেউ পরাজিত হননি মুক্তির সেই লড়াইয়ে। এনেছেন স্বাধীনতা । কিন্তু স্বাধীনতার পর তাদের সে অবদানের কথা, ত্যাগের কথা ভুলে গিয়ে মুক্তির সে প্রেরণাকে সম্মান না করে অনেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন নিজেদের দাপট আর ক্ষমতা জাহির করতে। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার্থী অমিত পর্নোগ্রাফির মধ্যে স্বস্তি খোঁজে। আর প্রদীপের বিধবা পিসীমা মৃত বড় ভাইয়ের দেশপ্রীতি, স্নেহ, পুরনো স্মৃতি আর পূজা-কৃষ্ণকীর্তন নিয়ে বাড়ির পুরনো দালানে পড়ে থাকেন বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বাস্তবঘেঁষা বর্ণনাপ্রিয় লেখক।

আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের বর্ণনা অনেক সময় বীভৎস, গা শিরশির করা। একেবারে নিরেট গদ্যে তিনি জীবনের ভাষ্য রচনা করে যান। ঢাকাই কুট্টিদের ভাষা, গালিগালাজ ও খিস্তি-খেউড় তাঁর রপ্ত এবং সেগুলো তিনি অনায়াসে গল্পে মিশিয়ে দিতে পারেন।৪

অন্য ঘরে অন্য স্বর গল্পে অমিতের পর্ণোগ্রাফি কিংবা মাস্টারবেশনের উল্লেখ লেখকের ইচ্ছাকৃত কোন যৌন আকাঙ্ক্ষার বা যৌনতৃপ্তির বর্ণনা নয়। এটা শুধু এই গল্পের চিত্র নয়, স্বাধীনতার পর অনেকাংশে বিরাজ করেছিল বিকারগ্রস্ততা, হতাশা আর বিষাদ। স্বাভাবিক জীবনযাপন, আমোদপ্রমোদ, বিনোদন অনেকক্ষেত্রেই বাধাগ্রস্ত হয়েছিল। এদেশের অনেক বাঙালি বিশেষ করে হিন্দু বাঙালি না পেরেছেন এই ভূমি থেকে মাটির টানে, নাড়ীর টানে না যেতে, না পেরেছেন একদল তাদেরকে সংখ্যালঘু বলে যেখানে পাঠিয়ে দিতে চেয়েছে সেখানে যেতে, না পেরেছেন স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে। পর্ণোগ্রাফি বা মাস্টারবেশনের চিত্র দেখানোর ক্ষেত্রে লেখকের মূল অভিপ্রায় হলো এসব মানুষ কখন করে, যখন স্বাভাবিক জীবন বিঘ্নিত হয়ে হতাশা, অস্বস্তি আর চরম বিষাদপূর্ণ সময় নেমে আসে তখন। শুধু আখতারুজ্জামান ইলিয়সের অন্য ঘরে অন্য স্বর গল্পে নয়, এদেশের অনেকক্ষেত্রে এমন বাস্তবতা বিরাজ করেছিল মুক্তিযুদ্ধের পর দীর্ঘ সময়।

অস্বিত্বের সঙ্কটে বিপর্যস্ত, ক্ষয়ে যাওয়া ননীদার সংসারে পিসীমা সত্যই এক সেকেলে স্বর। এই প্রাচীন বৃদ্ধা বেঁচে থাকেন অন্য ঘরে অন্য স্বর হয়ে। প্রদীপের সঙ্গে পিসীমার কথোপকথনে বারবার চলে আসে মৃত বড় ভাই অর্থাৎ প্রদীপের বাবা। পিসীমা বিধবা হয়ে যাওয়ার পর ছেলেসন্তানসহ বোনকে নিজের বাড়িতে এনে রেখেছিলেন তিনি। বাড়ি ছেড়ে, দেশ ছেড়ে কোথাও যেতে চাইতেন না তিনি। ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য তাকে জোর করে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। পিসীমা জীবনযাপনে, মানসিকতায় প্রদীপের বাবার মতোই। যুদ্ধের সময় সবাই আগরতলা পালিয়ে গেলেও পিসীমা যাননি। ‘বাবায় দ্যাহ রাখছে, আমার বয়স তখন সাত আট বছর; দাদায়তো আমাগো বাপ হইছে’৫-পিসীমার সরল স্বীকারোক্তি। মুক্তিযুদ্ধোত্তরকালে বিকাশমান জনজীবনে ব্যক্তির বিচ্ছিন্নতা ও শিথিল সর্ম্পকের মধ্যে সেই নিবিড় আন্তরিকতা ও ভালোবাসার সর্ম্পকের স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকা ছাড়া পিসীমাদের আর কোন অবলম্বন নেই। সময় এগিয়েছে, পুরনো অনেক কিছু বাতিল হয়ে গেছে। কিন্তু মানুষ তার কাঙ্ক্ষিত জীবন খুঁজে পায়নি। বেড়ে গেছে মানুষের অস্তিত্বের সঙ্কট ও অস্থিরতা। ব্যবসার নামে প্রদীপের কলকাতা-বাংলাদেশ-আগরতলা ঘুরে বেড়ানো সেই অস্থিরতা ও সঙ্কটের বহিঃপ্রকাশ। ফলে পিসীমা যেমন প্রদীপের মধ্যে অতীত খুঁজে বেড়ান তেমনি প্রদীপও কিছু খুঁজে ফেরে পিসীমার মধ্যে। পিসীমার ভেজে দেওয়া মুড়ি খেতে খেতে কলা-শশা-চন্দন-ধূপধূনো-কর্পূরের গন্ধ আবৃত শালগ্রাম-শিলা রাধাকৃষ্ণের যুগলমূর্তি, শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস দেবের ছবি আকীর্ণ পিসীমার ঘর তার কাছে এলোমেলো হয়ে যায়, পিসীমার মুখ গলে যায়, ‘মস্তো বড়ো অপরিচিত একটি শূন্যতায় শরীরমুক্ত তরল পিসীমা তার ধোঁয়াচ্ছন্ন কেশরাশি এলিয়ে দিয়ে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে’৬ দেখে সে মা বলে চিৎকার করে ওঠে। আসলে প্রদীপ শুধু পিসীমাকেই দেখে না, সে দেখে প্রেম-ভালোবাসাময় বাঙালি জীবন, বাবা-মা-পিসীমাদের প্রজন্মটাকে নিঃশেষ হয়ে যেতে। জীবনের প্রতি সূক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপের কারণে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বুঝতে পারেন শেষ পর্যন্ত প্রদীপরা আর পিসীমাদের অর্থাৎ পূববর্তী মানুষের সঙ্গে ঐক্য রাখতে পারে না।

অন্য ঘরে অন্য স্বর গল্পে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস যেমন মুক্তিযুদ্ধের সময়ের বিরাজমান অবস্থার কথা বলেছেন; মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে মানুষের উৎসাহ, উদ্দীপনা, প্রেরণার কথা বলেছেন তেমনি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মন মানসিকতার মানুষদেরও তিনি উল্লেখ করেছেন। এমন অনেকেই ছিলেন যারা মুসলমানিত্ব রক্ষা করতে কিংবা ধর্মকে টিকিয়ে রাখতে বা মুসলিম ভাইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামার পক্ষে ছিলেন না। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তারা এই যুদ্ধকে মুক্তি বা স্বাধীনতার যুদ্ধ হিসেবে দেখেন না। তারা এ সময়কে গোলমালের সময় হিসেবে উল্লেখ করেন। জেনে বা না জেনে যেভাবেই মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শব্দ হাজির হোক না কেন লেখক সেটি আমাদের সামনে উপস্থাপন করেন এই গল্পের মাধ্যমে। ‘কলকাতার গল্প শুনতে বৌদির খুব সখ। গোলমালের সময় সবাই পালালো কলকাতা, ননীদা গেলো আগরতলা। এজন্য বৌদির আক্ষেপের শেষ নেই।’৭ তাছাড়া বাঙালি যে স্বপ্ন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল তা যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে স্বপ্নপূরণ নয় স্বপ্নভঙ্গ রূপে ধরা দিয়েছিল। পাকিস্তান আমলে বাঙালিদের মধ্যেই এমন একটি শ্রেণি ছিল যারা উভয় সংকটে পড়ে যায়। তারা এতটাই দোদুল্যমানতায় ভুগতো যে কোন পক্ষ অবলম্বন করবে তারা যেন ঠিক বুঝে উঠতে পারতো না। এই শ্রেণি যুদ্ধকালীন ও যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বেশ লাভবান হয়ে ওঠে। তারা উভয় কূল ধরে রাখার চেষ্টা করেছিল। সুতরাং যুদ্ধের পর এই স্বার্থান্ধরা নিজের স্বার্থ আদায়ে দৃঢ় অবস্থান পেয়ে গেল।

পাকিস্তান আমলে যে সকল ব্যক্তি, জাতীয় আন্দোলনের প্রতি কখনো ক্ষীণ, কখনো জোরালো সমর্থন ব্যক্ত করার চেষ্টা করতেন, স্বাধীন বাংলাদেশে রাষ্ট্রশক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় তারা একটা নিরাপদ অবস্থান পেয়ে গেলেন। দেশটির সংস্কৃতির অভিভাবক নতুন ব্রাহ্মণের ভূমিকায় আবির্ভূত হয়ে স্বৈরাচারী রাষ্ট্রশক্তির সহায়তায় আত্মতুষ্টি এবং তোষামোদের এমন পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করতে আরম্ভ করলেন, বাঙালি জনগোষ্ঠীর মুক্তি-সংগ্রাম তরঙ্গ তার মধ্যে ধ্বনিত হয়ে উঠল না। কৃষক, মজুর, দরিদ্র জনগোষ্ঠী যারা মুক্তিযুদ্ধে সর্বাধিক আত্মত্যাগ করেছে, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কোনো চিহ্নই তাদের চিন্তা- চেতনায় স্থান করে নিতে পারেনি। তারাও বাঙালির রাষ্ট্র, বাঙালি জনগণের কথা বলতেন, কিন্তু সেগুলো বিমূর্ত ধারণার অধিক কিছু ছিল না। বাস্তবে যে বাঙালি জনগণ প্রাণ দিয়ে, রক্ত দিয়ে বাংলাদেশের জন্ম সম্ভাবিত করেছে, সেই হিন্দু মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান জনগণকে একসূত্রে বেঁধে একটি সমৃদ্ধ জাতি গড়ে তোলার স্বপ্ন কখনো তাঁদের মনে সঞ্চারিত হয়নি।৮

প্রদীপের পিসীমা বেশিরভাগ সময় প্রদীপের সাথে তার দাদার গল্প অর্থাৎ প্রদীপের বাবার গল্প করেছে। পিসীমা যেন সবকিছুতে প্রদীপের বাবাকে টেনে আনতে চায়, প্রদীপের বাবাকে খুঁজে ফেরেন। প্রদীপকে পিসীমা খাওয়ার কথা জিজ্ঞেস করে উত্তর পাওয়ার আগেই বলতে শুরু করেÑ

দাদায় খাইতো, খাটতেও পারতো খুব...। কতো খাইটা খাইটা ব্যবসা করছে, বাবার ঋণ শোধ করছে, কমলাঘাটে আড়ত দিলো, রামপালের জমি ছাড়াইয়া লইলো; দিদিরে, আমারে বিয়া দিছে।৯

এছাড়া প্রদীপের বাবা কিভাবে ঘুমাত, কত সের দুধ জ্বাল না দিয়ে খেয়ে ফেলতে পারতো, কত বেশি ভাত খেতে পারতো, কি বিশ্বাস করতো না করতো, কিভাবে প্রদীপের পিসীমার হাতের বালা কুয়োর মধ্য থেকে উঠিয়ে দিয়েছিলো এসব বলে পুরানো স্মৃতিচারণ করেই যেন খুশি হচ্ছেন পিসীমা। পিসীমার এসব পুরানো স্মৃতি আওড়ানোর মধ্যে একটা জিনিস স্পষ্টত বোঝা যায় যে, সদ্য ঘটে যাওয়া কোন খুশির গল্প পিসীমার কাছে নেই। প্রাণবন্ততা হারিয়ে গেছে পিসীমাদের। স্বাধীনতার পর যতটা স্বস্তিতে পিসীমাদের থাকার কথা ছিল সেই প্রত্যাশিত চিন্তার চেয়ে অনেক বেশি অস্বস্তিতে আছেন তারা। প্রত্যাশিত জীবন যুদ্ধের পর সবাই পাননি। মুক্তিযুদ্ধের পর শুধু ক্ষুধা কিংবা ভাত কাপড়ের জন্য মানুষ অসহায় হয়ে পড়েননি, অত্যাচারিত হয়েছিলেন অনেকাংশে। কেমন যেন হতাশা নেমে এসেছে কিছু মানুষের জীবনে। তাইতো প্রদীপ কেবল পিসীমার ফর্সা গালের কোঁচকানো আঁকিবুকিতে নোনা জলের জোয়ার দেখে।’১০

প্রদীপ এদেশেরই সন্তান, কিন্তু সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্থবিরতার কারণে তাকে বাধ্য হয়ে চলে যেতে হয়েছে। বাবার মৃত্যুর পর ব্যবসা গুটিয়ে নিয়ে গেছে কলকাতায়। কিন্তু তার মন পড়ে আছে প্রিয় মাতৃভূমিতে। এখানে এসে তার আজন্ম লালিত স্বপ্ন সাধ ভেঙে গেছে। স্বাধীনতার পর রাজনীতির নামে নৈরাজ্য, অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও কৌশলে অনেক হিন্দুদের উপর নির্যাতন অব্যাহত থাকে। এ অবস্থায় দেশে এসে প্রদীপ কেবল সাম্প্রদায়িক সমস্যার কথাই দাদা বৌদির মুখ থেকে শোনে। দাদার আড়তের সামনে এসেই অদ্ভুত পোশাকের এসব যুবকদের দেখে প্রদীপ মনে হয় স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কোথায় ছিল এরা। দেশ স্বাধীন হওয়ার ফল তো এমন হওয়ার কথা ছিলো না। স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল লক্ষ্য তো সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ধ্বংস করা ছিল না। সন্ত্রাসী যুবকরা সদ্য স্বাধীন দেশের পুনর্গঠনে মনোনিবেশ না করে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর অত্যাচারে মনোযোগী হয়। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস বস্তুনিষ্ঠ দৃষ্টি নিয়ে এই সম্প্রদায়ের অস্তিত্বের সংকট গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছিলেন বলেই ননীদার পরিবারের গভীরের এই অব্যক্ত বেদনাকে শিল্পরূপ দিতে পেরেছেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধে এই জাতি অবতীর্ণ হওয়ার পিছনে যেমন আমাদের ভাষা আন্দোলন জাতীয়তাবাদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে তেমনি বহু উপলব্ধি এর পেছনে সক্রিয় ছিল। যে উপলব্ধির জায়গা থেকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই আমাদের এই মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সে উপলব্ধি অনেকটাই উবে গেল। যে চিন্তায় মানুষ সামনে অগ্রসর হয়েছিল সে চিন্তাযুদ্ধের পর আর বিস্তৃত হলো না। জাতীয়ক্ষেত্রে যেমন প্রতিষ্ঠিত হয়নি তেমনি সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও। ধর্মনিরপেক্ষতার উপলব্ধিতে স্বাধীনতা আসলেও মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বাস্তব জীবনে ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় থাকেনি। সংস্কৃতির পরিমণ্ডলেও সেভাবে অগ্রসর হওয়া সম্ভব হয়নি।

নিষ্ঠুর বাস্তবতাকে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস শিল্পের মাধ্যমে আধুনিক সভ্যতার কাছে তুলে ধরতে চেয়েছেন। অনাহার, অভাব, শোষণ আর দারিদ্র্যের চাপে মানুষের মানবেতর জীবনযাপনকে যেমন তুলে ধরেছেন তেমনি উন্মোচন করেছেন মুখোশধারীদের মুখোশকে। ইলিয়াস সমাজের খলশ্রেণির চরিত্রদেরও উপস্থাপন করেছেন অত্যন্ত নিপুণভাবে। আবার দেখা যায় ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব, চিন্তা-চেতনার পার্থক্য ইত্যাদি রাজনৈতিক দর্শন থেকে জন্ম নেয়। তাই বর্তমানে সাহিত্যে রাজনীতি একটি অপরিহার্য বিষয় হয়ে উঠেছে। আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের গল্পে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। যে মূল্যবোধে দেশের লক্ষ লক্ষ তাজা প্রাণ বুকের রক্ত ঢেলেছে মাটিতে, স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য সে মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটেছে। অনেক বাঙালিকেই সংখ্যালঘু হিসেবে বিবেচনা করে তাদেরকে উৎপীড়নের পাঁয়তারা শুরু করেছে সুযোগ সন্ধানিরা। তিনি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এসব সমস্যাকে প্রত্যক্ষ করেছেন গভীরভাবে। তাঁর গল্পে উচ্ছ্বাস বা ভাবালুতা নেই। ইলিয়াসের গল্পসমূহে একদিকে যেমন সংখ্যাগরিষ্ঠসম্প্রদায়ের উল্লাস আর অবসাদের চিত্র আছে, অপরদিকে তেমনি আছে সংখ্যালঘুদের সমস্যা। প্রাণাবেগপূর্ণ চরিত্রের পাশেই আছে রোগাক্রান্ত মানুষের মুখোচ্ছবি। ফলে তাঁর গল্পের সীমিত পরিসরেই ধরা পড়েছে জীবনের বহুমাত্রিক বিন্যাস। সুতরাং কাল এবং কাললগ্ন মানুষের জীবনের বাস্তবতাকে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস লেখনীর মাধ্যমে মানুষের কাছে তুলে ধরেছেন । তিনি যেভাবে শোষকের মুখোশ উন্মোচন করেছেন এবং শোষিতকে জাগানোর চেষ্টা করেছেন তা তাঁকে বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে একজন সমাজ সচেতন শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

 

তথ্যসূত্র

১.        আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস রচনাসমগ্র-১, (ঢাকা : মাওলা ব্রাদার্স, ২০১২), পৃ. ৭৮ ।
২.       আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, পূর্বোক্ত, পৃ. ৭৯।
৩.       আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, পূর্বোক্ত, পৃ. ৮০।
৪.       জাফর আহমদ রাশেদ, আখতারুজ্জামান ইলিয়সের ছোটগল্প, (ঢাকা : ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, ২০১২), পৃ. ২৬।
৫.       আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, পূর্বোক্ত, পৃ. ৮৫।
৬.       আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, পূর্বোক্ত, পৃ. ৮৮।
৭.       আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, পূর্বোক্ত, পৃ. ৮০।
৮.       আহমদ ছফা, সাম্প্রতিক বিবেচনা : বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাস, (ঢাকা : খান ব্রাদার্স অ্যান্ড কোম্পানি, ২০১৩), পৃ. ২৫।
৯.       আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, পূর্বোক্ত, পৃ. ৮৫।
১০.      আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, পূর্বোক্ত, পৃ. ৮৯।

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!