X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুই ফোকলোর-সাধককে পুরস্কৃত করে বাংলা একাডেমিই যেন পুরস্কৃত হলো!

এম আবদুল আলীম
০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৫:১১আপডেট : ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৫:১১

বঙ্গদেশে ফোকলোর-সাধনা, পঠন-পাঠন ও গবেষণার উজ্জ্বল উত্তরাধিকার বহনকারী দুই কীর্তিমান সাধক ড. আবদুল খালেক এবং ড. মুহম্মদ আবদুল জলিল। সাম্প্রতিক সময়ে নামদুটি বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে তাঁদের একসঙ্গে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভের কারণে। হোক বিলম্বে, তবুও এমন রাষ্ট্রীয় সম্মান ও স্বীকৃতি তাঁদের জন্য যেমন শ্লাঘার, তেমনি রাষ্ট্রের জন্যও গৌরবের। এতে সত্যিকারের সাধনায় অন্যরাও উৎসাহিত-অনুপ্রাণিত হবে।

এই দুই কীর্তিমানের পুরস্কার লাভের প্রসঙ্গে কথা বলতে গেলে সঙ্গতকারণেই চলে আসে ফোকলোর-সাধনা, পঠন-পাঠন ও গবেষণায় তাঁদের অবদান-প্রসঙ্গ। পাশাপাশি আসে বঙ্গদেশে ফোকলোর-সাধনার সূত্রপাত; তার বিকাশ, ঐশ্বর্য এবং উত্তরাধিকারের কথাও। এ অঞ্চলে ঔপনিবেশিক শাসনের আশীর্বাদমূলক যে দিকটি রয়েছে, তা হলো- একশ্রেণির ইংরেজ, রবীন্দ্রনাথ যাঁদের ‘বড় ইংরেজ’ বলে অভিহিত করেছেন, তাঁরা ভারতবর্ষের ইতিহাস-ঐতিহ্য, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও দর্শন সম্পর্কে কৌতূহলী হয়ে ফোকলোরচর্চা ও সাধনার গোড়াপত্তন ঘটান। পরবর্তীকালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, দীনেশচন্দ্র সেন, আশুতোষ ভট্টাচার্য, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, মুহম্মদ এনামুল হক, মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন, উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, চন্দ্র কুমার দে, সুশীলকুমার দে, হানিফ পাঠান, বরুণকুমার চক্রবর্তী, মযহারুল ইসলাম, আশরাফ সিদ্দিকী, আবদুল খালেক, ওয়াকিল আহমদ, আবূ তালিব, শামসুজ্জামান খান, মুহম্মদ আবদুল জলিল, আনোয়ারুল করিম, আবুল আহসান চৌধুরী হয়ে এ কালের আবুল হাসান চৌধুরী, আবদেল মান্নান, আমিনুর রহমান সুলতান, তপন বাগচী, সাইমন জাকারিয়া, অনুপম হীরা মণ্ডল, উদয় শংকর বিশ্বাস, আমিরুল ইসলাম, সুমন কুমার দাশ, সাকার মুস্তফা প্রমুখের হাতে বাংলা ফোকলোর-সাধনার যে গৌরবময় ধারা গড়ে ওঠে; তার মধ্যেও ব্যতিক্রমী অবদান রেখেছেন ড. আবদুল খালেক এবং ড. মুহম্মদ আবদুল জলিল। তাঁরা কেবল ফোকলোরের উপাদান সংগ্রহ-সংকলন, গবেষণা ও বিশ্লেষণ করেই ক্ষান্ত হননি কিংবা ফোকলোরের সাধারণ পঠন-পাঠনের মধ্যেই নিজেদের নিমগ্ন রাখেননি; বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ফোকলোর বিভাগ চালু এবং বিশ্বের আধুনিক ফোকলোর-সাধনা, পঠন-পাঠন ও গবেষণার সঙ্গে সংযোগ সৃষ্টি করে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। ড. আবদুল খালেক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য থাকাকালীন সেখানে ফোকলোর বিভাগ চালু করেন এবং সেই বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসেবে মুহম্মদ আবদুল জলিল স্বীয় মেধা-মনন ও কর্মদক্ষতার অভিনিবেশ ঘটিয়ে উচ্চশিক্ষায় ফোকলোরের পঠন-পাঠন ও গবেষণার পর সুগম করেন। তাঁদের দেখানো পথ ধরে পরবর্তীকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোকলোর বিভাগ চালু করা হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ ফোকলোর সোসাইটি গড়ে তুলে এই দুই ফোকলোর-সাধক ফোকলোর সাধনা ও চর্চায় নবদিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেছেন।

দুই.
জন্মসূত্রে দুজনই সিরাজগঞ্জ জেলার বাসিন্দা, কর্মসূত্রেও রয়েছে মিল। উভয়েই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে অবসরগ্রহণ করে বর্তমানে নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠা করে উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ড. আবদুল খালেক অবশ্য আরও বৃহৎ পরিসবে দায়িত্ব পালন করেছেন; তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, কলা অনুষদের ডিন, উপ-উপাচার্য এবং উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন; একইসঙ্গে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ উপ-কমিটির চেয়ারম্যান এবং উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য পদেও আসীন রয়েছেন।

আবদুল খালেকের জন্ম ১৯৩৭ সালের ১৯শে আগস্ট, জন্মস্থান সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানার চরনবীপুর গ্রামে। পিতা ডা. মুহম্মদ আলী, মাতা সালেহা খাতুন। তিনি শাহজাদপুরের তালগাছী হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (সম্মান), স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। এছাড়া জি. সি. সাহিত্য টোল থেকে সংস্কৃত এবং চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চীনা ভাষা ও সাহিত্যে ডিপ্লোমা অর্জন করেন। তাঁর ফোকলোর-সাধনায় হাতেখড়ি স্বীয় অগ্রজ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফোকলোরবিদ ড. মযহারুল ইসলামের কাছে। উল্লেখ্য তাঁরা দু ভাই, অর্থাৎ ড. মযহারুল ইসলাম এবং ড. আবদুল খালেক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। অধ্যাপক আবদুল খালেক ফোকলোর, সাহিত্য-সংস্কৃতি, দেশ-কাল ও বঙ্গবন্ধু বিষয়ে অনেক গ্রন্থ রচনা করেছেন। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো : পদ্মা থেকে ইয়াংসি (১৯৬৯), কাজী ইমদাদুল হক (১৯৭০), মধ্যযুগের বাংলা কাব্যে লোক-উপাদান (১৯৮৪), মৈমনসিংহ-গীতিকা : জীবন ও শিল্প (২০০৩), অন্ধকার যুগ ও মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যচর্চা (২০০৪), প্রাচীন ও মাধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে লোকজীবনের স্বরূপ (২০০৪), বাংলাদেশে ফোকলোরচর্চা (২০০৪), মযহারুল ইসলাম : জীবন ও সাহিত্য, মাইকেল মধুসূদনের জীবনের বিদ্রোহী চেতনা, শহীদ ড. জোহা এবং আমি (২০০৯)। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে তাঁর শতাধিক গবেষণাপ্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে লিখেছেন অজস্র কলাম এবং উপ-সম্পাদকীয়। উল্লেখযোগ্য গবেষণা-প্রবন্ধগুলো হলো : পূর্ব বাংলার লোকসাহিত্যে বর্ষা (১৯৫৯), বাংলা সাহিত্যে অন্ধকার যুগ (১৯৬৩), ক্ষণিকা কাব্যে রবীন্দ্রনাথ (১৯৬৪), পাক চীন লোক গল্পের গতি-প্রকৃতি (১৯৬৭), কবি পাগলা কানাইয়ের গান (১৯৭১), পূর্ব বাংলার লোক সাহিত্যের একটি দিক (১৯৭১), বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতি (১৯৭২), পাবনা অঞ্চলের লোককবি (১৯৭৩), উত্তরাঞ্চলের মেয়েলিগীত (১৯৭৩), বাংলার লোকসংস্কৃতি (১৯৭৬), খুলনার লোক সংগীত (১৯৮০), কবি পাগলা কানাইয়ের জীবন দর্শন (১৯৮৪), বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের লোকসংস্কৃতি সংগ্রহ ও সংরক্ষণ (১৯৮৪), লোকসাহিত্য চর্চায় ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক (১৯৮৫), মধ্যযুগের বাংলা কাব্যে বারোমাসির গতি-প্রকৃতি (১৯৮৭), ফোকলোরের প্রতিশব্দ বিতর্ক ও ডক্টর মযহারুল ইসলাম (১৯৯৮), ফোকলোর চর্চায় আবুল আহসান চৌধুরী (২০০৩), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ফোকলোরচর্চা ও ড. মযহারুল ইসলাম (২০০৪), উত্তর বাংলার লোকবিশ্বাস ও লোকসংস্কার (১৯৮৯) প্রভৃতি। তিনি ‘মধ্যযুগের বাংলা কাব্যে লোক-উপাদান’ বিষয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বহু গবেষকের এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রির তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আন্তর্জাতিক সেমিনারে অনেক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। কর্মের স্বীকৃতি-স্বরূপ লাভ করেছেন পশ্চিমবঙ্গ বাংলা একাডেমী গুণীজন সংবর্ধনা, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ সংবর্ধনা, মীর মশাররফ হোসেন স্বর্ণপদক, আসাদুজ্জামান স্মৃতি পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রভৃতি। সবচেয়ে বেশি পেয়েছেন পণ্ডিত ও গুণীজনের স্বীকৃতি; অগণিক পাঠক ও ভক্তের ভালোবাসা। মুহম্মদ এনামুল হক, মুহম্মদ মনসুর উদ্দীন, আশুতোষ ভট্টাচার্য, মযহারুল ইসলাম, কাজী আবদুল মান্নান, আশরাফ সিদ্দিকী, সনৎকুমার সাহা, হাসান আজিজুল হক, শামসুজ্জামান খানসহ বহু পণ্ডিত ও সাহিত্যিক তাঁর গবেষণা ও লেখালেখির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ড. মুহম্মদ এনামুল হক আবদুল খালেকের বিখ্যাত স্মৃতিগ্রন্থ ‘পদ্মা থেকে ইয়াংসি’ গ্রন্থ সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে লিখেছেন : ‘বলতে দ্বিধা নেই, আমাদের রেখা সাম্প্রতিক চৈনিক সাহিত্যে প্রকৃত চৈনিক জীবনের সন্ধান পাওয়া যায় না। যাঁরা এসব সাহিত্য রচনা করেছেন, তাঁরা চীনাদের জীবনের সাথে পরিচিত হবার সুযোগ ও সময় পাননি, -অন্ততঃ আবদুল খালেক যতখানি পেয়েছে, তাঁরা ততখানি পাননি। সুতরাং আবদুল খালেকের কথা যতটা নির্ভরযোগ্য, অন্যান্যদের উক্তি ততটা বিশ্বাস্য নয়। এ-দিক থেকে চিন্তা করে আমার মনে হয়েছে, আমাদের আধুনিক চৈনিক সাহিত্যের মধ্যে এ বই একটা বিশিষ্ট স্থানের দাবী রাখে।’

কীর্তিমান অধ্যাপক, যশস্বী গবেষক, দক্ষ প্রশাসক, অসাম্প্রদায়িকতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একনিষ্ঠ ধারক-বাহক ড. আবদুল খালেক মানুষ হিসেবে অসাধারণ। সরলতায়, ব্যক্তিত্বে, ঔদার্যে এবং বিনয়ে তিনি সকলের চেয়ে আলাদা। দেশপ্রেমও তুলনাহীন। স্বাধিকার-সংগ্রামে রেখেছেন অনন্য অবদান। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের শহিদ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রক্টর ড. জোহার সঙ্গে তিনি সহকারী প্রক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ড. জোহার আত্মাহুতি দানের মুহূর্তে তিনিও ছাত্রদের পাশে ছিলেন এবং অল্পের জন্য জীবন রক্ষা পান। ড. আবদুল খালেক সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা লিখেছেন : ‘গজদন্তমিনারবাসী বিদ্যাভিমানী পণ্ডিত তিনি নন। বিশ্বাস ও সংস্কারের যে বেড়ি মানুষের চিন্তা ও কর্মকে বেঁধে রাখে, তা ভাঙার আয়োজনে তিনিও হাত লাগান। বাঙালির অখণ্ড মানবতাবোধে তাঁর দীক্ষা। বঙ্গবন্ধু তাঁর প্রেরণা। ... বিশ্বের মহান চিন্তাবিদ রমাঁরলাঁ, জাঁপল সার্ত্র, নোআম চমস্কি, শাখারভ, এডওয়ার্ড সাঈদ- এঁদের মতো তিনিও আগ্রাসী বলদর্পীর স্বেচ্ছাচার ও নিষেধের সামনে নতজানু হননা।’ হাসান আজিজুল হক ড. আবদুল খালেকের সত্তর বছরপূর্তি উপলক্ষ্যে লিখেছিলেন : ‘এমন মানুষই শেষ পর্যন্ত পুরস্কৃত হন এবং পুরস্কারের উর্ধ্বের উঠে যান। মনে হয় এঁরা পুরস্কৃত হলে পুরস্কারই পুরস্কৃত হয়।’ হাসান আজিজুল হকের এমন অমিয় বাণী বিলম্বে হলেও সত্যে পরিণত হলো। ড. আবদুল খালেককে পুরস্কার দিয়ে বাংলা একাডেমিই যেন পুরস্কৃত হলো!। তাঁর এই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পরবর্তী প্রজন্মের ফোকলোর-সাধক ও জ্ঞানচর্চার অনলস কর্মীদের  জন্য সত্যিই প্রেরণাদায়ক হয়ে রইলো।

তিন.
মুহম্মদ আবদুল জলিল নিবিষ্টচিত্ত ও একনিষ্ঠ ফোকলোর-সাধক। জন্ম ১৯৪৮ সালের ৬ই জুন, জন্মস্থান সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর থানার হলদিঘর গ্রামে। পিতা আহমদ আলী, মাতা জেলেমুন নেসা। তিনি ১৯৬৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে এমএ এবং ১৯৮৬ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বাংলা একাডেমির রিচার্স ফেলো হিসেবে কর্মজীবন শুরু। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ, ফোকলোর বিভাগ এবং নাট্যকলা ও সংগীত বিভাগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে নর্থবেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপ-উপাচার্য পদে আসীন রয়েছেন। ফোকলোর, বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতি বিষয়ে তাঁর রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থসংখ্যা পঞ্চাশের অধিক। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো : মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্ক (১৯৮৩), মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে বাঙলা ও বাঙালী সমাজ (১৯৮৬), বঙ্গে মগ-ফিরিঙ্গি ও বর্গীর অত্যাচার (১৯৮৮), আবুল হাশেম (১৯৮৯), এম. সেরাজুল হক (১৯৯০), আশুতোষ ভট্টাচার্য (১৯৯১), শাহ গরীবুল্লাহ ও জঙ্গনামা (১৯৯১), বাংলাদেশের সাঁওতাল : সমাজ ও সংস্কৃতি (১৯৯১),  লোকসাহিত্যের নানাদিক (১৯৯৩), বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের মেয়লীগীত (১৯৯৩), লোকসংস্কৃতির নানাপ্রসঙ্গ (১৯৯৫), বাংলাদেশের ফোকলোরচর্চার ইতিহাস (১৯৯৯),  উত্তরবঙ্গের আদিবাসী লোকজীবন ও লোকসাহিত্য : ওঁরাও (২০০০), বাংলাদেশে বঙ্কমচর্চা (২০০১), লোকচিকিৎসা তন্ত্র-মন্ত্র (২০০১), উত্তরবঙ্গের লোকসঙ্গীত (২০০১), লোকসংস্কৃতির অঙ্গনে (২০০২), লোকবিজ্ঞান ও লোকপ্রযুক্তি (২০০৪), বাংলার ফোকলোর মনীষা (২০০৭), রাজশাহী অঞ্চলের মৃৎমিল্প : শখের হাঁড়ি (২০০৮), বাংলার লোকায়ত সংস্কৃতি (২০১২), বাংলার লোকসংস্কৃতি : লালন-রবীন্দ্রনাথ (২০১৩), রংপুর অঞ্চলের লোকছড়া (২০১৩), লালনের মনের কথা : সঙ্গীত পাঠ ও ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ (২০১৯) প্রভৃতি। তাঁর গবেষণাপ্রবন্ধের সংখ্যা আশির অধিক। দেশ-বিদেশের সেমিনারে উপস্থাপন করেছেন অনেক প্রবন্ধ। তাঁর তত্ত্বাবধানে সতেরোজন গবেষক এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। কর্ম গবেষণার স্বীকৃতি-স্বরূপ নানা পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছে। ২০২৩ সালে লাভ করলেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার।

মুহম্মদ আবদুল জলিল মৃত্তিকা-সংলগ্ন গবেষক। বাংলা চিরায়ত লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি লালনকারী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে রয়েছে তাঁর আত্মিক বন্ধন। বছরের পর বছর তাঁদের সঙ্গে থেকে তথ্য-সংগ্রহ করে গ্রন্থ লিখেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে, বিশেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি হিসেবে ফোকলোরের আাধুনিক পঠন-পাঠন ও গবেষণার ক্ষেত্রপ্রস্তুতে অসামান্য অবদান রেখেছেন। তাঁর গবেষণাকর্ম দেশ-বিদেশের পণ্ডিতমহলে সমাদৃত হয়েছে। এখনো নিরলসভাবে গবেষণা করে চলেছেন। এমন একজন সাধককে বাংলা একাডেমি পুরস্কার প্রদান করে এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানটি যেন যথার্থ দায়িত্বটি পালন করলো।

চার.
যাঁরা দেশ, জাতি, সমাজ ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ; তাঁরা পুরস্কারের প্রত্যাশায় কিছু করেন না। তবুও কাজের স্বীকৃতি প্রদানের যে রেওয়াজ দেশে-বিদেশে প্রচলিত আছে, তাতে কীর্তিমানদের কাজের যেমন মূল্যায়ন হয়, তেমনি পরবর্তী প্রজন্ম এর দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়। কর্মজীবন, সাহিত্য ও ফোকলোর-সাধনার দুই প্রথিতযশা ব্যক্তি ড. আবদুল খালেক  এবং ড. মুহম্মদ আবদুল জলিল তাঁদের কর্ম দ্বারা আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করেছেন। জীবনের অপরাহ্ণবেলায় ফোকলোর-সাধনায় এই স্বীকৃতি তাঁদের নিজের জন্য যেমন আনন্দদায়ক, তেমনি জাতির জন্যও গৌরবের। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকুক তাঁদের ফোকলোর-সাধনা। তাঁদের মেধা-মনন, শ্রম ও সাধনায় ঋদ্ধ হোক আমাদের ঐতিহ্য-ভাণ্ডার।      

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ সামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
ক্রিমিয়া উপকূলে রুশ সামরিক উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
হোয়াইট হাউজের বিড়াল নিয়ে বই প্রকাশ করবেন মার্কিন ফার্স্টলেডি
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
নেচে-গেয়ে বিএসএমএমইউর নতুন উপাচার্যকে বরণে সমালোচনার ঝড়
আশরাফুলের হ্যাটট্রিকে আবাহনীর টানা ৮ জয়
আশরাফুলের হ্যাটট্রিকে আবাহনীর টানা ৮ জয়
সর্বাধিক পঠিত
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
মন্ত্রীর অপেক্ষায় তরমুজ বিক্রিতে দেরি, ক্ষুব্ধ ক্রেতারা
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!