X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১
জন্মদিনে

'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' : অনন্য আত্মজৈবনিক গ্রন্থ 

কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী 
১৭ মার্চ ২০২৩, ০০:০০আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৩, ০৫:০০

‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শুধুমাত্র নিছক একটি আত্মজৈবনিক গ্রন্থ নয়, গত শতাব্দীর তিনটি দশকের বহুমাত্রিক বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অনন্য দলিল। ১৯৩৪ সাল থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ভারতবর্ষের, বিশেষ করে বাংলার, আরো স্পেসিফিক করে বললে বলা যায় পূর্ববাংলা বা বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক ইতিহাসের অসংখ্য অনালোচিত উপাদান ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গ্রন্থটিতে। গ্রন্থটির হাতে লেখা পাণ্ডুলিপিটা একরকম প্রায় হারিয়েই গিয়েছিল। এ হারিয়ে যাওয়া সম্পদটি পাওয়া যায় শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর প্রায় ২৯ বছর পরে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঠিক পরপরই। গ্রন্থটির শুরুতে প্রথম প্যারাতেই একটি প্রাককথনে গ্রন্থের প্রাপ্তি কীভাবে হয়েছে সে কথাগুলো বলা আছে।

“শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা চারটি খাতা ২০০৪ সালে আকস্মিকভাবে তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার হস্তগত হয়। খাতাগুলো অতি পুরানো, পাতাগুলো জীর্ণপ্রায় এবং লেখা প্রায়শ অস্পষ্ট। মূল্যবান সেই খাতাগুলো পাঠ করে জানা গেল এটি বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী, যা তিনি ১৯৬৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে অন্তরীণ অবস্থায় লেখা শুরু করেছিলেন, কিন্তু শেষ করতে পারেননি। জেল-জুলুম, নিগ্রহ-নিপীড়ন যাঁকে সদা তাড়া করে ফিরেছে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে উৎসর্গীকৃত-প্রাণ, সদাব্যস্ত বঙ্গবন্ধু যে আত্মজীবনী লেখায় হাত দিয়েছিলেন এবং কিছুটা লিখেছেনও, এই বইটি তার সাক্ষর বহন করছে।”

গোপালগঞ্জের মধুমতি নদীপারের একজন অতি সাধারণ পরিবার থেকে ১৯৫৫ সালের মধ্যেই একজন দক্ষ রাজনৈতিক কর্মী হয়ে উঠার বৃত্তান্ত বর্ণনা হয়েছে সুলেখিত ভাষায় এবং যুগপৎ ছিলো তাঁর অত্যন্ত বিনয়বোধ। ছিলো না কোনো রাজনৈতিক আত্মঅহমিকা। অনেকটা নিষ্কপটভাবে বর্ণনা করে গিয়েছেন সকল কিছুই। বইটিতে এমন অনেক বিষয় ছিল যা সাধারণত আত্মজীবনীকাররা এড়িয়ে যান; কিন্তু এখানে কিছুই বাদ পড়েনি। বইটি পড়তে পড়তে হঠাৎ মনে হয় বিশ্বসাহিত্যের কোনো আত্মজৈবনিক উপন্যাস পড়ছি। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক বন্ধুবান্ধবরাই বিভিন্ন সময়ে তাঁকে তাঁর রাজনৈতিক জীবনের কাহিনিগুলো লিখে রাখতে উৎসাহ এবং প্রেরণা দেয়। এ প্রেরণা থেকেই তিনি ১৯৬৬-৬৯ সাল পর্যন্ত যখন কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজবন্দী ছিলেন তখন ১৯৬৭ সাল থেকেই আত্মজীবনীটি লেখা শুরু করেন। এভাবেই জন্ম নেয় এক অসমাপ্ত আত্মজীবনী। পদ্মা, মধুমতি, আড়িয়াল খাঁ, কুমার তীরের এক সাধারণ পরিবারের, সাধারণ মানুষের অসাধারণ হয়ে উঠার প্রেরণাদীপ্ত গল্প; একজন জাতিরাষ্ট্রের স্রষ্টা হয়ে উঠার গল্প; একজন রাষ্ট্রনায়কের গল্প।

আমরা সবাই জানি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু হলেন হোসেন শহীদ সোহরাওরার্দী। কিন্তু তাঁর প্রথম জীবনের তাঁকে প্রভাবিত করেন বিপ্লবী পূর্ণচন্দ্র দাস এবং নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু। এ সংযোগটি হয় ১৯৩৬ সালে মাদারীপুর থাকা অবস্থায়। তাঁর বাবা শেখ লুৎফর রহমান ১৯৩৬ সালে মাদারীপুর মহকুমায় সেরেস্তাদার হয়ে বদলি হয়ে আসেন (পৃষ্ঠা-৮)। বঙ্গবন্ধু তাঁর পিতার সাথে মাদারীপুর চলে আসেন এবং মাদারীপুর হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন। তখন মাদারীপুর ছিল বিপ্লবী, অনুশীলন সমিতিদের ঘাঁটি। তাই এখানে এসেই তাঁর মধ্যে বিপ্লবের মণিকাঞ্চন সংযোগটি ঘটে যায়। এই বইটিতে অত্যন্ত উজ্জ্বল হয়ে আছেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। তাঁকে এই গ্রন্থের নায়কোচিত মর্যাদা দেয়া হয়েছে বিভিন্ন প্রসঙ্গে। অনেক অধ্যায় জুড়েই বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট করেছেন সোহরাওয়ার্দীর রাজনৈতিক জীবন এবং আদর্শ; যার প্রভাব সরাসরিভাবে পড়েছে শিষ্য শেখ মুজিবুরের প্রতি যা তিনি সবিস্তারে বলেছেন বইয়ের বিভিন্ন অংশে। প্রচ্ছদ : অসমাপ্ত আত্মজীবনী

বঙ্গবন্ধুর ভাষায় : “ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ছোট্ট কোঠায় বসে বসে জানালা দিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে চেয়ে ভাবছি, সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কথা। কেমন করে তাঁর সাথে আমার পরিচয় হল। কেমন করে তাঁর সান্নিধ্য আমি পেয়েছিলাম। কীভাবে তিনি আমাকে কাজ করতে শিখিয়েছিলেন এবং কেমন করে তাঁর স্নেহ আমি পেয়েছিলাম।"(পৃষ্ঠা-১)

অসম্ভব এক শ্রদ্ধা এবং ভালবাসার প্রকাশ পাওয়া যায় কথাগুলোতে। কিন্তু সর্বক্ষেত্রেই অন্ধের মতো সোহরাওয়ার্দীকে অনুসরণ করেননি শেখ মুজিবুর রহমান। ২/৩ টি রাজনৈতিক বিষয়ে মতান্তর ঘটেছিল তাঁর। কিন্তু ১৯৪৭ সালের পরে পাকিস্তানের রাজনীতিতে যখন গুরুত্বহীন হয়ে গিয়েছিলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী- তখন এমন হয়ে গিয়েছিল যে তাঁর খাবার খাওয়ার টাকা পর্যন্ত ছিল না (পৃষ্টা–১২৯)। সে সময় তাঁকে রাজনীতিতে একপ্রকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন শেখ মুজিবুর রহমান-এ কথাটি বললে খুব একটা অত্যুক্তি হবে বলে মনে করি না।

বঙ্গবন্ধুর জীবন মানেই রাজনৈতিক জীবন, অসংখ্য সমসাময়িক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সমাবেশ দেখা যায় গ্রন্থটিতে। তবে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পরে আর একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কথা বলা প্রয়োজন, তিনি হলেন মাওলানা ভাসানী। বইটিতে পাকিস্তানের ঘোষণার পরে থেকেই তাঁকে আমরা পাই। তবে বিভিন্ন সময়ে দল বদল, মত বদলে ব্যস্ত মওলানা ভাসানী সর্ম্পকে শেখ মুজিবুর রহমানের শ্রদ্ধাযুক্ত বিরক্তি ছিলো। মওলানা ভাসানীর কোনো কাজ শুরু করে দিয়ে প্রয়োজনের সময় আত্মগোপন করে থাকতেন। অর্থাৎ দরকারের সময়ে তাঁকে পাওয়া যেত না (পৃষ্ঠা-২৫৫)। আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে সকল কাজের শুরুতে তিনি আছেন, কিন্তু কর্মকাণ্ডের সময়ে বা বাস্তবায়নে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়না। যার প্রমাণ অসংখ্য পাওয়া যায়। এমনকি বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীতেও আমরা এ কথার সত্যতা পাই। একজন মাওলানা হয়েও ক্ষমতার লোভ, উদারতার অভাব বঙ্গবন্ধুকে আহত করেছে। তাঁর প্রতি বঙ্গবন্ধুর ধারণা একটা উক্তিতেই সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাই।

“রাতে এক বাড়িতে খেতে গেলেন মওলানা সাহেব। রাগ, খাবেন না। তিনি থাকতে কেন শামসুল হক সাহেবের নাম প্রস্তাব করা হল সভাপতিত্ব করার জন্য। এক মহাবিপদে পড়ে গেলাম। মওলানা সাহেবকে আমি বুঝাতে চেষ্টা করলাম, লোকে কি বলবে? তিনি কি আর বুঝতে চান? তাঁকে নাকি অপমান করা হয়েছে! শামসুল হক সাহেবও রাগ হয়ে বলেছেন, মওলানা সাহেব সকলের সামনে একথা বলছেন কেন? এই দিন আমি বুঝতে পারলাম মওলানা ভাসানীর উদারতার অভাব, তবুও তাঁকে আমি শ্রদ্ধা ও ভক্তি করতাম। কারণ তিনি জনগণের জন্য ত্যাগ করতে প্রস্তুত। যেকোনো মহৎ কাজ করতে হলে ত্যাগ ও সাধনার প্রয়োজন। যারা ত্যাগ করতে প্রস্তুত নয় তারা জীবনে কোনো ভাল কাজ করতে পারে নাই– এ বিশ্বাস আমার ছিল।” (পৃষ্ঠা-১২৮)

যে পাকিস্তানের সৃষ্টির পেছনে বঙ্গবন্ধুর সক্রিয় অবদান ছিল, সেই তারই ঐক্যবদ্ধ পাকিস্তান তত্ত্বের মোহভঙ্গ ঘটলো পঞ্চাশের দশকের শুরুতেই বা তারও আগে। সংগঠন হিসাবে মুসলিম লীগ এবং আওয়ামী লীগ দুটি দলই হয়তো উঠতি মধ্যবিত্তের সংগঠন। কিন্তু এ দু-অংশের মধ্যবিত্তদের মধ্যেও আকাশ-পাতাল পার্থক্য আছে। সংস্কৃতির এবং ভাষাগত পার্থক্য তো দৃশ্যমান। বঙ্গবন্ধুর মতে বহুকাল ধরে চলা কৃষক আন্দোলন এবং স্বাধীনতা আন্দোলনই বাঙালিকে রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধ জাতিগত চেতনায় স্বাভিমান করে তুলেছে। তিনি খুব সুন্দর করে পাকিস্তানের দুটি অংশের পার্থক্য আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন।

“পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিরাট প্রভেদ রয়েছে। সেখানে রাজনীতি করে সময় নষ্ট করার জন্য জমিদার, জায়গিরদার ও বড় বড় ব্যবসায়ীরা। আর পূর্ব পাকিস্তানে রাজনীতি করে মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়। পশ্চিম পাকিস্তানে শক্তিশালী মধ্যবিত্ত না থাকার জন্য জনগণ রাজনীতি সম্বন্ধে বা দেশ সম্বন্ধে কোনো চিন্তাও করে না। জমিদার বা জায়গিরদার অথবা তাদের পীর সাহেবরা যা বলেন, সাধারণ মানুষ তাই বিশ্বাস করে।” (পৃষ্ঠা-২৩৯)

তাঁর রাজনৈতিক জীবনে শ্রীহট্টের (সিলেট) গণভোটের প্রচারণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি প্রায় ৫০০ কর্মীবাহিনী এবং সাথে মওলানা তর্কবাগীশ, ইত্তেফাকের সম্পাদক মানিক মিয়া, ফজলুল হক সহ গণভোট প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেন। সবচেয়ে মজার তথ্য হলো হিন্দু হয়েও পাকিস্তানের পক্ষে মুসলিম লীগের এ প্রচারণায় শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অনুরোধে বঙ্গবন্ধুকে কয়েকটা লঞ্চ দিয়ে প্রচারে সার্বিক সাহায্যদান করেন টাঙ্গাইলের দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা। (পৃষ্ঠা-৭৬)

পঞ্চাশের দশকের পাকিস্তানে এক ক্ষয়িষ্ণু কংগ্রেস দলের তথ্য দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানে তাদের তখন জীবন্মৃত অবস্থা। বঙ্গবন্ধুর ভাষায়- "এদের সকলেই হিন্দু, এরা বেশী কিছু বললেই 'রাষ্ট্রদোহী' আখ্যা দেওয়া হত। ফলে এদের মনোবল একেবারে ভেঙে গিয়েছিল।"(পৃষ্ঠা-১১৪)

বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি এক গভীর অনুরাগ দেখা যায় গ্রন্থের বিভিন্ন অংশে। বিশেষ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথা না বললেই নয়। ঘুরেফিরে অনেক স্থানেই এসেছেন তিনি। একটি স্থানে (পৃষ্ঠা-২২৮) রবীন্দ্রনাথের বৈশ্বিক জনপ্রিয়তার কথা খুব সুন্দর করে বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। মাতৃভাষা বাংলার প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা ছিলো বঙ্গবন্ধুর। যা আজকালকার অনেক নেতাদেরই থাকে না। বর্তমানে অনেকেই আমরা কিছু ইংরেজি বুলি শিখে নিজেকে অনেক বড় ভাবতে শুরু করি। কীভাবে মাতৃভাষাকে ভালবাসতে পারি এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুর জীবন থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে গিয়ে মাতৃভাষা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন- "আমি ইংরেজিতে বক্তৃতা করতে পারি। তবু আমার মাতৃভাষায় বলা কর্তব্য।" (পৃষ্ঠা-২২৮)

জীবনব্যাপী তিনি অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন। ১৯৪৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থশ্রেণী কর্মচারীদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অন্যায়ের সক্রিয় প্রতিবাদের ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রাথমিকভাবে বঙ্গবন্ধুসহ সাতাশজন ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করলেও, শেষ পর্যন্ত ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দিতে রাজি না হওয়ায় বঙ্গবন্ধুই একমাত্র স্থায়ীভাবে বহিষ্কৃত হয়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার যাদের জন্যে ছাত্রদের বহিষ্কার করা হলো, সেই কর্মচারীরাই একমাসের মধ্যে গোপনে যার যার কর্মস্থানে যোগদান করে। অবশ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সর্বসম্মতভাবে ৬১ বছর পরে ২০১০ সালের আগস্ট মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গবন্ধুর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে।

গ্রন্থটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৩৪ থেকে ১৯৫৫ পর্যন্ত ২১ বছরের সময়কালের ধারাবাহিক ইতিহাস, বিশেষ করে রাজনৈতিক ক্ষেত্রের ইতিহাস বর্ণিত হয়েছে। মানবতা, সাম্যবাদ এবং বাঙালি জাতীয়তাবাদে উদ্ভূত রাজনৈতিক দর্শন। গ্রন্থটিতে বিভিন্ন সময়ে আমরা লক্ষ্য করেছি অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এবং উদার হৃদয়ের কারণে তিনি যেহেতু অনেক ভালবাসা পেয়েছেন তেমনি ক্ষতিগ্রস্তও হয়েছেন যথারীতি। বিভিন্ন সময়েই তিনি লোক নির্বাচনে প্রতারিত হয়েছেন। আমরা অনেক বড় বড় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের জীবনেই দেখি তাদের জীবনের অধিকাংশ লেখাই তাঁরা জেলে বসে লিখেছেন। এক্ষেত্রে নেলসন ম্যান্ডেলা, জওহরলাল নেহেরু সহ অনেকেরই নাম উল্লেখ করা যায়। বঙ্গবন্ধু যেমন এ আত্মজীবনীটা জেলে বসে লিখেছেন, একইভাবে সকলপ্রকার সম্পাদনা করে ভূমিকাটিও তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা ২০০৭ সালে লিখেছেন ঢাকা শেরে বাংলানগরের সাব জেলে বসে।

গ্রন্থটির ৩২৯ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থে দুর্ভিক্ষ, বিহার এবং কোলকাতার দাঙ্গা; পাকিস্তান সৃষ্টির পরে তৎকালীন কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক মুসলিম লীগ সরকারের ভয়ংকর অপশাসন; বাঙালি এবং বাংলা ভাষা বিরোধী ভূমিকার অভিঘাতে রক্তাক্ত ভাষা আন্দোলন; ছাত্রলীগ ও আওয়ামী মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠা; যুক্তফ্রন্টের সরকার গঠন; আদমজীতে সাম্প্রদায়িক আক্রমণ; বিভিন্ন ইস্যুতে পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের বিস্তৃত বিবরণ সহ বঙ্গবন্ধুর অসংখ্য প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনায় সমৃদ্ধ হয়েছে গ্রন্থটি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু একজন রাজনৈতিক নায়ক নন, একজন সার্থক লেখকও বটে। অসাধারণ প্রাঞ্জলতা, সাবলীলতা রয়েছে তাঁর ভাষায়। গ্রন্থটি পড়তে পড়তে মনে হয় কোনো গল্প বা উপন্যাসের গ্রন্থ পড়ছি। নির্মোহ, সার্বজনীন, উদার নিষ্কপট, দৃষ্টিভঙ্গি এ গ্রন্থটিকে আরো চিত্তাকর্ষক করে তুলেছে। আত্মজীবনীটি শুরু হয়েছে অনেকটা উপন্যাসের স্টাইলে। অসমাপ্ত আত্মজীবনী বিশ্বসাহিত্যের বিশেষ করে আত্মজৈবনিক সাহিত্যের এক অক্ষয় সম্পদ। পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় গ্রন্থটি অনূদিত হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত হচ্ছে। প্রকাশের সাথে সাথেই বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয় গ্রন্থটি। বাংলাদেশে বেস্ট সেলার হওয়া এ অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থটির বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদকদের নাম এবং প্রকাশের তারিখ দেয়া হল:

১. মোহাম্মদ ফকরুল আলম, ইংরেজি; ২০১২ সালের ১৮ জুন বাংলা সংস্করণের সাথে একসাথেই প্রকাশিত হয়।
২. প্রেম কাপুর, হিন্দি; ২০১৭ সালের ৮ এপ্রিল ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে হিন্দি সংস্করণের মোড়ক উন্মোচিত হয়।
৩. কাজুহিরো ওয়াতানাবে, জাপানি; ২ আগস্ট ২০১৫ জাপানি সংস্করণের মোড়ক উন্মোচিত হয়।
৪. চাই শি, চিনা; ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি গণভবনে বইটির মোড়ক উন্মোচিত হয়।
৫. মুহাম্মদ দিবাজাহ, আরবি; ফিলিস্তিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৬ সালে আরবি সংস্করণ প্রকাশিত হয়।
৬. অধ্যাপক ফ্রান্স ভট্টাচার্য, ফরাসি; ২৬ মার্চ ২০১৭ ফরাসি সংস্করণের মোড়ক উন্মোচিত হয়।
৭. বেঞ্জামিন ক্লার্ক, স্পেনিস; ১১ অক্টোবর,২০১৮ মোড়ক উন্মোচন হয়।
৮. ড. সৌমেন ভারতীয়া ও ড.জুরি শর্মা, অসমিয়া; ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ প্রকাশিত হয়েছে।

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
দেশ ও জাতির মুক্তির একমাত্র উপায় ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন: ড. কামাল হোসেন
খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি: প্রধানমন্ত্রী
বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপের ফাইনাল আজ
সর্বশেষ খবর
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে করারোপ: আইনের বিশ্লেষণ
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
ইউক্রেনের মার্কিন সামরিক সহায়তা আইনে স্বাক্ষর বাইডেনের
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
নামাজ শেষে মোনাজাতে বৃষ্টির জন্য মুসল্লিদের অঝোরে কান্না
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
আজকের আবহাওয়া: দুই বিভাগে বৃষ্টির আভাস
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা
‘বয়কট’ করা তরমুজের কেজি ফের ৬০ থেকে ১২০ টাকা